শোক, ক্ষুধা-রক্ত দিয়ে রমজানকে স্বাগত জানাল গাজাবাসী

  12-03-2024 02:35PM



পিএনএস ডেস্ক: ইসরাইলি অবরোধে বিচ্ছিন্ন গাজা উপত্যকায় চারদিকে ক্ষুধার্থ ফিলিস্তিনিদের হাহাকার; পাশাপাশি দখলদার বাহিনীর অবিরাম বোমাবর্ষণের মধ্যেই পবিত্র রমজান মাসকে স্বাগত জানিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। ইবাদতসহ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মাসটি পালন করবেন সারা বিশ্বের মুসলিমরা। তবে এবারের রমজানে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের চিত্রটা যেন ভিন্ন।

ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে রমজানের শুরুতে আগের চেয়ে বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ৫০ বছর বয়সি আউনি আল-কায়য়াল।

আলজাজিরাকে নিজেদের বর্তমান অবস্থার কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, জানেন আমাদের কাছে খাবার নেই।

রমজানের শুরুই দুঃখজনক এবং অন্ধকারে ঢেকে আছে। চারদিকে রক্তের গন্ধ ও স্বাদ বিরাজমান। ইফতার করার মতো আমাদের কাছে কোনো খাবার নেই। ইসরাইল চায় না রমজানে আমরা খুশি থাকি।

আলজাজিরার খবরে আরও বলা হয়েছে, গুরুতর অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে নতুন করে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে অনাহারে ২৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বর্তমানে উত্তর গাজা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। কারণ এলাকাটিতে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ও খাদ্য সহায়তায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরাইল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে গাজার উত্তরাঞ্চলে প্রতি ছয়জনের মধ্যে অন্তত একজন অপুষ্টির শিকার।

এছাড়া গাজার দক্ষিণাঞ্চলের শহর রাফাহ, নাদের আবু শারেখ শহরের একটি মসজিদের ইমাম। এ বছর রমজানে তিনিও সিয়াম পালন করবেন।

সাধারণভাবে একজন মুসলিম যেভাবে রোজারে স্বাগত জানান, তিনি পারছেন না। কারণ, তার শহর ভালো নেই। চারদিকে রক্ত, পরিচিত জনদের মৃত্যু ও ক্ষুধা এ নিয়ে দিন পার করছেন তিনি। এবারের রমজানকে এমন পরিস্থিতিতেই বরণ করতে হচ্ছে তাকে।

আবু শারেখ কাল বেঁচে থাকবেন কিনা নিশ্চয়তা নেই। এ বছরের রোজা পালন করতে পারবেন কিনা, তাও জানেন না। কিন্তু তার মধ্যে শক্ত একটি প্রশ্ন জেগেছে। সারা বিশ্বের মুসলিম কীভাবে গাজার দুর্ভোগ মেনে নিচ্ছেন?

কাতারের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছিলেন শারেখ। তিনি বলেন, আমি মনে করি পুরো বিশ্ব গাজাকে পরিত্যাগ করেছে। আমরা বিশ্বের প্রতিটি কোণে মুসলমানদের জিজ্ঞেস করি- এই পবিত্র মাসে গাজাবাসীর দুর্ভোগ দেখে আপনি কীভাবে তা মেনে নেন?

তিনি জানান, রাফাহয় তাদের কাছে অবশিষ্ট কিছুই নেই। নেই পানীয় জল। খাবার তো সোনার হরিণ। উত্তর গাজার মানুষ এখন পশুর সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করছে।

এ ইমাম বলেন, ইসরায়েল আমাদের জনগণ, নিরপরাধ নারী ও শিশুদের হত্যা করছে। এমন একটি ঘর নেই যেখানে প্রিয়জন হারানোর শোক নেই। সর্বোপরি, আমরা অনাহারে মারা যাচ্ছি।

নিজের মতো লাখো ফিলিস্তিনির অসহায়ত্বও প্রকাশ করে নাদের আবু শারেখ আরও বলেন, আমরা আমরা... গাজার জনগণ শোক, দুঃখ, অনাহার ও রক্ত সঙ্গে নিয়ে পবিত্র মাস রমজানকে স্বাগত জানাচ্ছি।


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন