‘দেশকে তাঁরা কোথায় নিতে চাচ্ছেন’

  11-07-2017 08:31PM

পিএনএস ডেস্ক : সুপ্রিম কোর্ট, প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের নিয়ে সংসদে দেওয়া সাংসদদের আপত্তিকর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন। তিনি বলেন, ‘দেশকে তাঁরা কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন? ভাবতে হবে তাঁরা কি দেশের প্রকৃত বন্ধু, না দেশের শত্রু, না সংবিধানের শত্রু, না গণতন্ত্রের শত্রু? এটা সংবিধানের ওপর আঘাত। বিচার বিভাগ ধ্বংসের পাঁয়তারা।’

আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে জয়নুল আবেদিন এসব কথা বলেন। আয়োজনে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতারা। এতে ষোড়শ সংশোধনী রায় নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়।

গত রোববার বিচারপতিদের অপসারণসংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান মন্ত্রী ও সাংসদেরা। কোনো কোনো সাংসদ মন্তব্য করেন, এই রায়ের পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। আদালত সংবিধান লঙ্ঘন করে রায় দেন। তাঁরা ওই রায় পুনর্বিবেচনার দাবিও জানান। এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন, এমন দুজন প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেন। প্রধান বিচারপতিকে নিয়েও সমালোচনা হয়।

সংসদে যিনি উপস্থিত থাকবেন না, তাঁকে নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করা যাবে না—এমন কথা উল্লেখ করে জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘সরকারের একটি অঙ্গ যদি মানুষের মঙ্গল চান, দেশের মঙ্গল চান, সাংবিধানিক শাসনে বিশ্বাস করেন, তাহলে এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন কি না, তা দেশবাসী বিচার করুন। প্রধান বিচারপতি জনসম্মুখে, গণমাধ্যমের সামনে এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে পারেন না। তাই আইনজীবী সমিতির দায়িত্ব বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য জনগণের মধ্যে বক্তব্য উপস্থাপন করা।’

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, ‘১৬তম সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিক্রমে বহাল রাখেন। রায় বাতিল নিয়ে সংসদে যে ভাষায় বিচার বিভাগকে আঘাত করা হয়েছে, তা ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়কে আঘাত করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তাঁরা ভুলে গেছেন বাংলাদেশ চলে সংবিধান অনুযায়ী। সংসদও সংবিধান অনুযায়ী চলছে রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ হিসেবে। সংসদ সদস্য, মন্ত্রীরা যদি সংবিধান পড়তেন, তাঁরা যদি রুলস অব বিজনেস পড়তেন, তাহলে বিচার বিভাগ সম্পর্কে মন্তব্যও করতেন না। যাঁরা সংসদে বসেন, তাঁদের অবশ্যই সংবিধান পড়তে হবে। যদি কেউ পড়তে না পারেন, কারও পড়ালেখার জ্ঞান কম থাকে, আরেকজনকে দিয়ে পড়িয়ে সংবিধানের মর্ম বুঝতে হবে। রুলস অব বিজনেসও নিজে না পড়তে পারলে, পড়ার যোগ্যতা না থাকলে আরেকজন দিয়ে পড়িয়ে শুনবেন, মর্ম বুঝবেন, তারপর সংসদের কার্যাবলিতে অংশ নেবেন আশা করি।’

স্বাধীন বিচার বিভাগ নিয়ে যেকোনো কথা বলা আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন বলেন, ‘সাংসদেরা প্রিভিলেজ ভোগ করেন। সেখানে যা বলেন মামলা করা যায় না। তাঁরা এই সুযোগ নিয়েছেন। সুযোগ নেওয়া উচিত নয়। তাঁরা যে কথা সংসদে বসে বলেছেন, সেই কথা যদি বাইরে বলতেন, এত দিনে একেকজন সংসদ সদস্য, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে শত শত মানহানির মামলা হতো। মানহানির মামলা থেকে তাঁরা রেহাই পেতেন না। শাস্তি হতো।’

রায় না পড়ে মন্তব্য করে অনেকে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি দণ্ডবিধির শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে যে বক্তব্য রেখেছেন, তাহলে কি রায় পছন্দ না হলেই বিচারকের শাস্তির দাবি আসবে, এই কি বর্তমান গণতন্ত্রের নমুনা? বলা হয়েছে, সংসদ যদি রায় গ্রহণ না করে, তাহলে রায় কার্যকর হবে না। এমন বক্তব্য স্বৈরাচারীর আভাস। তাঁরা সংবিধানের নির্দেশনা মানেন না। রায় পরিবর্তনের জন্য বিচারকদের ভয়ভীতি ও চাপ দিচ্ছেন।’

৭২-এর সংবিধান বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও তা চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগই তা পরিবর্তন করে জানিয়ে জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও প্রধানমন্ত্রীকে সংসদ অপসারণ করতে পারে, কারণ এসব পদ রাজনৈতিক। বিচারক পদ রাজনৈতিক নয়।’

দেশ ও জনগণের ক্ষতি না করার আহ্বান জানান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন। তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ ধ্বংস করলে কারও লাভ হয় না। সংসদ সদস্যরা আলোচনা করতে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। অভিভাবকে তাঁরা ধুলায় মিশিয়ে দিতে পারেন না। জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারেন না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি উম্মে কুলসুম রেখা, সহসম্পাদক শামীমা সুলতানা, সদস্য হাসিবুর রহমান প্রমুখ।

পিএনএস/জে এ/ মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন