এই মুক্তিযোদ্ধার ভাতা না পাওয়ার কারণ কী

  19-10-2016 06:13PM

পিএনএস: এম আব্দুল হামিদ যে একজন মুক্তিযোদ্ধা, এটা সবাই জানে। মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে গবেষণাগ্রন্থে লেখা আছে তাঁর নাম। আছে সত্যিকারের সনদ, স্বীকৃতি। নেই শুধু মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা। জীবদ্দশায় তো জোটেইনি, মৃত্যুর ১৬ বছর পরও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাবনার শাহাজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন আব্দুল হামিদ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তাটি ওয়ারলেসে পান তিনি। অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুনের মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা প্রতিবেদনে তাঁর (আব্দুল হামিদ) কাছে আসা এই ওয়ারলেস বার্তাটি যুক্ত করা হয়েছে। ছাপা হয়েছে তা পত্রিকায়ও।
ওই সময় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য আব্দুল হামিদকে পুলিশ বাহিনীর অন্য সদস্যদের সঙ্গে বরখাস্ত করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অবশ্য তিনি দুই ধাপ পদোন্নতি পান। মৃত্যুর পাঁচ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট তালিকায় তাঁর নাম ওঠে। তবে এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতার কোনো অর্থ পায়নি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদের পরিবার।
এ ব্যাপারে উপজেলা পর্যায় থেকে অর্থসংকটের কথা বলা হলেও মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী এ সংকটের কথা নাকচ করেন। মন্ত্রী বলেন, এ খাতে যথেষ্ট অর্থ রয়েছে।
আব্দুল হামিদের পৈতৃক বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার মধ্য খোন্তাকাটা গ্রামে। রাজধানীর পূর্ব বাসাবোতে কদমতলায় বাস করছেন তাঁর স্ত্রী ও ছেলেরা। মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতার জন্য আবেদন করেছেন তাঁর স্ত্রী জীবন নেছা।
মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক আবেদনপত্রে জীবন নেছা বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে আমি কখনো কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিইনি। এখন পর্যন্ত কোনো সম্মানী ভাতাও পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার ওয়ারলেস বার্তার মূল কপি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার স্বামীর কাছে সংরক্ষিত ছিল। আমার পরিবারের পক্ষ থেকে মূল কপিটি পরে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটে সংরক্ষণের জন্য দান করা হয়।’

পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পরিবারটির বিভিন্ন আবেদনপত্র থেকে জানা গেছে, সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে ১৯৯০ সালে মুক্তিযোদ্ধা এম আব্দুল হামিদ অবসর নেন। ২০০০ সালের ৭ মার্চ ৬৭ বছর বয়সে তিনি মারা যান। জীবদ্দশায় ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সনদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল থেকে সনদ পান। ২০০০ সালে মুক্তি বার্তায় (লাল বই) নাম অন্তর্ভুক্তি দেখে যান। তবে মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ২০০৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাঁকে সনদ দেয় এবং ওই বছরের ২৩ মে মুক্তিযোদ্ধা গেজেট তালিকায় তাঁর নাম ওঠে। পরবর্তী সময়ে বাগেরহাট মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বিতরণ জেলা কমিটি ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁর স্ত্রী জীবন নেছার নামে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বরাদ্দ করে (সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর-মুক্তি ৪৫২ ও মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পরিশোধ বহি নম্বর-৪১৪)।
আব্দুল হামিদের ছোট ছেলে ইশতিয়াক আহমেদ জানান, বরাদ্দ তালিকায় নাম ওঠার পর গত বছরের ২৫ জানুয়ারি বাগেরহাটে সোনালী ব্যাংকের রায়েন্দাবাজার শাখায় সম্মানী ভাতার হিসাব খোলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই ব্যাংক হিসাবে কোনো অর্থ যায়নি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আমার মায়ের বয়স এখন ৭৬ বছর। বাবা জীবদ্দশায় এ সম্মানী পাননি। মাও পাবেন কি না জানি না।’
এ বিষয়ে অর্থসংকটের কথা উল্লেখ করে শরণখোলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এম এ খালেক খান বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার ৩০০ টাকা করে সম্মানী ভাতা চালু করার সময় বাগেরহাটের নির্দিষ্টসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধারা তা পেতেন। এখন ৪ হাজার ৪৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু দুই বছর ধরে বাগেরহাটে ভাতার জন্য নতুন করে তালিকাভুক্ত ২৩৯ জন মুক্তিযোদ্ধা এ ভাতা পাচ্ছেন না। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনে বহু দেনদরবার করেও লাভ হয়নি।
এ খাতে অর্থসংকটের কথা নাকচ করে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘সম্মানী ভাতা খাতে প্রচুর অর্থ রয়েছে। কোনো সংকট নেই। আমরা টাকা হাতে নিয়ে বসে আছি। কেন ওই মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা পাচ্ছেন না, তা কাগজপত্র না দেখে বলতে পারছি না।’
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ১৯৬ কোটি ৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন