মালিকই সম্পাদক হলে সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হয়: প্রধানমন্ত্রী

  20-10-2016 10:02PM

পিএনএস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবাদপত্রের মালিকরাই সম্পাদক হয়ে গেলে তাতে সাংবাদিকতার সমস্যা হয়।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে ৩১ তলা ‘বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্স’ এর ভিত্তি ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবাদপত্রের কর্মীদের জন্য ইতোমধ্য অষ্টম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
পরবর্তী ওয়েজ বোর্ড নিয়ে সাংবাদিকদের দাবি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশে তো যিনি মালিক, তিনিই হয়ে যান সম্পাদক। মালিক সম্পাদক হলে সাংবাদিকতার সুযোগটা সেখানে মাঝে মাঝে একটু বাধাগ্রস্ত হয়, তাতে কোনো সন্দেহ নাই।”
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গত এপ্রিলে জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে জানান, বাংলাদেশে ছাপানো দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে ৯৩ শতাংশেই সম্পাদকের পদ ধরে রেখেছেন মালিক নিজে।
দেশে সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা নেই বলে সমালোচকদের অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি আসলে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা।
সেই স্বাধীনতা যদি নাই থাকবে, তাহলে তাদের অভিযোগের কথা কীভাবে প্রকাশ হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, সারাদেশে প্রতিদিন সাড়ে সাতশ প্রত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি ২৪টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কাজ করছে। অনুমতি চেয়েছে আরও ৪৪টি।
“ওখানে যারা টক শোতে কথা বলছেন... কেউ তাদের কথা শুনলে বলতে পারবেন যে, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই?”
বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃত করে তার মেয়ে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, “গণতন্ত্রের নীতিমালা থাকবে, আর সাংবাদিকদের নীতিমালা থাকবে না- এটা হতে পারে না। সেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন জাতির পিতা।
“আমাদের যে কাজটাই করতে হবে, উন্নত ও মানসম্পন্ন করতে হবে”
উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সুবিধা ভোগ করার পাশাপাশি দায়িত্ব পালনেও মনোযোগী হতে হবে। সমাজ ও দেশের প্রতিও দায়িত্ব রয়েছে সাংবাদিকদের।

প্রযুক্তির পরিবর্তনে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের বিস্তার এবং পড়ার অভ্যাস বদলে যাওয়ার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
“আমরা যারা আছি, সকালে এক কাপ চা আর পত্রিকা যে কত গুরুত্বপূর্ণ... আজকের ছেলে-মেয়েরা কিন্তু ট্যাবেই সব দেখে আর পড়ে।”
৩১ তলা বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্স
সকালে প্রেসক্লাবে পৌঁছেই প্রথমে বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্সের ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবের পুরো জমি নিয়ে এই কমপ্লেক্সের নকশা করা হয়েছে।
৩১ তলা ভবনের প্রতিটি তলা হবে ১৯ হাজার আটশ বর্গফুটের। ভবনের প্রথম দশতলা ব্যবহার করা হবে প্রেসক্লাবের জন্য। ১১ থেকে ২৮ তলা বিভিন্ন সংবাদপত্র, দেশি-বিদেশি সংবাদ সংস্থা টেলিভিশন ও রেডিওকে ভাড়া দেওয়া হবে।
২৯ থেকে ৩১ তলায় প্রেসক্লাবের সদস্যদের জন্য থাকবে হেলথ ক্লাব, সুইমিংপুল, জিমনেশিয়াম, গেস্ট হাউস, ডাইনিং হল এবং সিনেপ্লেক্স।
পূর্ব দিকে সচিবালয় থাকায় প্রেসক্লাবের উত্তর-পূর্ব কোণে খোলা জায়গাসহ চারতলা একটি ভবন করা হবে। ওই ভবনে ইউনিয়ন অফিস, মিটিং রুম, শো রুম, ডিসপ্লে সেন্টার এবং নামাজের ঘর থাকবে।
দক্ষিণ-পূর্ব কোণে থাকবে মিলনায়তন। এই মিলনায়তনের প্রবেশ পথ বাইরে থেকে হবে।
ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রেসক্লাবের সদস্য ও নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে তিনি বলেন, “স্বপ্ন দেখতে হবে। কিন্তু সক্ষমতা ছাড়িয়ে যেন স্বপ্নের জগতে চলে না যাই।”
“তাহলে ঘুম ভাঙলে ধপাস করে পড়ে যেতে হবে।”
সাংবাদিকদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কলকাতা থেকে যখন ইত্তেহাদ পত্রিকা বের হত, তখন তার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ইত্তেফাক যখন প্রথম বের হয়, তখন বঙ্গবন্ধু তা ‘হাতে হাতে বিক্রি করতেন’।
“সেই হিসেবে তো জাতির জনক সাংবাদিক পরিবারেরই সদস্য।”
বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্স নির্মাণে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার পক্ষ থেকে যা করার করব।”
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্ণধারদের উদ্দেশ্যে বলেন, “মিডিয়া মালিকেরা ১০/২০ কোটি করে টাকা দেবেন। অ্যাডভান্স দেবেন। আপনাদের জায়গা দেব, কেটে নেবেন।”
অন্যদের মধ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু,কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, রেলমন্ত্রী মজিবুল হক, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সমকাল সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য গোলাম সরওয়ার, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান বাসেত মজুমদার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ন এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সঞ্চালনায় ছিলেন প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘বাংলার মটি, বাংলার জল’ এবং ‘বড় আশা করে এসেছি গো, কাছে ডেকে লও’ গান দুটি পরিবেশন করেন রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
মঞ্চে আসনগ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গান দুটির সঙ্গে ঠোঁট মেলান।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল




@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন