মানুষের তিন বাবা…

  05-12-2016 06:40PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : শ্রমজীবীদের নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ তামাশা করছে মহলবিশেষ।হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর পারিশ্রমিক না পেয়ে শ্রমজীবীরা যারপরনাই কষ্টে দিন কাটান। শ্রমের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ঠকবাজ মহলটি দিব্যি আছে, এমনটা তো কাঙ্ক্ষিত নয়।

নিয়ম অনুযায়ী বেতন-ভাতা না দেয়া এবং পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই কারখানা স্থানান্তরের ঘটনায় রাজধানীর মিরপুরের রেজাউল অ্যাপারেল লিমিটেডের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জে কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

পুলিশি হামলার পর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কারখানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন শ্রমিকরা। তারা বলেন, এসে দেখেন ৫ দিনের জন্যে কারখানা বন্ধ। তাদের প্রশ্ন, চালু কারখানা কেন বন্ধ করে দেয়া হলো। তারা আরো বলেন, তারা কারখানায় হামলা চালাননি; বরং পুলিশ এসে লেঠি পেটা করে তাদের আহত করেছে।

যেকোনো প্রতিষ্ঠান চলে নিয়ম মেনে। যেখানে মালিক-শ্রমিক উভয়ের সম্মিলিত প্রয়াস থাকে। প্রতিষ্ঠানে যা হবে আর ঘটবে আগে থেকে জানান দিয়ে ঘটাই শ্রেয় বা উত্তম। এর বাইরে নীরবে কিছু ঘটা মানে সন্দেহের উদ্রেক করে। যেমনটা রাজধানীর মিরপুরের রেজাউল অ্যাপারেল লিমিটেডের ব্যাপারে ঘটেছে। আগে থেকে জানান দিয়ে করলে নিশ্চয় এমনটা হতো না।

শ্রমিকদের অভিযোগে প্রকাশ, নিয়ম অনুযায়ী তাদের বেতন-ভাতা দেয়া হতো না। এমনটা সত্য হলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। শ্রমিক শ্রম দেবে আর তার বদলে নিয়ম অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাবেন না, তা কোনোমতেই কাম্য হতে পারে না। তদুপরি আগে থেকে না জানিয়ে প্রতিষ্ঠান হঠাৎ বন্ধ ঘোষণা এবং কারখানা স্থানান্তরের বিষয়টি শ্রমিকদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।

প্রতিষ্ঠানটি যদি নিয়ম অনুযায়ী বেতন-ভাতা পরিশোধ করত, তাহলে কারখানা বন্ধ বা স্থানান্তরে শ্রমিকদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হতো না। মালিকপক্ষের দিক থেকে অনিয়মের সমস্যা থাকায় স্বাভাবিকভাবেই শ্রমিকদের মধ্যে সন্দেহ দানাবাধে। মালিকপক্ষই এ জন্য ষোলোআনা দায়ী, যা বুঝতে কারো জজ-ব্যারিস্টার হওয়ার দরকার নেই।

মিল-কারখানার ক্ষেত্রে আজ পর্যন্ত শ্রমিক ঠকানোর জন্য মালিকদের পুলিশ বিনা উসকানিতে লাঠিচার্য অথবা লাঠিপেটা করেছে, এমন খবর খুব একটা মনে পড়ে না। যত দোষ নন্দঘোষের মতো বেচারা শ্রমকিদের পিটানোই যেন পুলিশের অন্যতম কাজ! ন্যূনতম মজুরি থেকে যে শ্রমিক বঞ্চিত হন, পুলিশ কবে ওই ঠকবাজ মালিকদের একইভাবে শায়েস্তা করবে?

মানুষের নাকি তিনটা বাবা থাকে! প্রথমজন জন্মদাতা, দ্বিতীয়জন শ্বশুর আর তৃতীয়টা পুলিশ বাবা। এমনিতে বাবা না ডাকলেও কখনো বাটে পড়লে আর ছেঁচা খেলে ‘বাবা বাবা‘ বলে পার পেতে চায় যাদের কাছে- তারা নাকি পুলিশ। তাই এই পুলিশ বাবারা, পেটের দায়ে ন্যায্য পাওনার জন্য মরিয়া শ্রমিকদের না পিটিয়ে, কবে ঠকবাজ মালিকদের ওষুধটা দেবে; সে অপেক্ষায় শ্রমজীবীরা।

উদয়-অস্ত পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শ্রমিকরা একটি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেন। শ্রমিকদের এই শ্রমের বদৌলতে মালিক পক্ষ একটি থেকে একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়তে সক্ষম হন। হাঁকান দামি গাড়ি, করেন বড়ব ড় অট্টালিকা। যাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়ে এতকিছু, তাদের ন্যূনতম মজুরি না দিয়ে যে পাষাণ মালিকরা কেবলই ঠকান; তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।




লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন