রাষ্ট্রপতির প্রতি আস্থা রাখতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

  13-01-2017 12:19AM

পিএনএস ডেস্ক : নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উদ্যোগের প্রতি আস্থা রাখতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকার। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার সরকার শপথ গ্রহণ করে।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা আশা করি, সব রাজনৈতিক দল মহামান্য রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে গঠিত নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখবেন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন একটি গোষ্ঠী ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার অপচেষ্টা করছে। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্মের নামে যারা মানুষ হত্যা করে তারা ইসলামের বন্ধু নয়, শত্রু। ইসলাম কখনো মানুষ হত্যা সমর্থন করে না। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ তবে ধর্মান্ধ নয়। হাজার বছর ধরে এ দেশের মাটিতে সব ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শান্তিতে বসবাস করছে। যারা এই ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, তাদের ঠাঁই বাংলার মাটিতে হবে না।’

দেশবাসীকে জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে সচতেন হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সন্তানের প্রতি নজর রাখুন। তাদের এমনভাবে পরিচালিত করুন যাতে তারা ভুল পথে পা না বাড়ায়।’

সরকার পরিচালনার তিন বছর অতিক্রম করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নির্বাচন হবে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আমরা অবৈধ পথে ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ করেছি।’

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সবসময় সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। সংবিধানের আওতায় আমরা সব ধরনের ছাড় দিতেও প্রস্তুত ছিলাম। এমনকি বিএনপি যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক তাও আমরা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্ব সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি বরং উনি (খালেদা জিয়া) সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে সারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেন।’

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বর্জন করলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দল এবং প্রার্থীর অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে সুষ্ঠুভাবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়, এ দাবি করেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি নির্বাচনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইসির অধীনে ন্যস্ত ছিল এবং সরকার নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি বলেও দাবি করেন তিনি।

সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০১৫ সালের জ্বালাও-পোড়াও এবং অবরোধের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসী তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রত্যাখান করেছে। জনগণ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা থেকে শুরু করে এ দেশে যত উল্লেখযোগ্য অর্জন তার সবগুলো এনেছে আওয়ামী লীগ। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। জাতির পিতা আমাদের মাথা নত না করতে শিখিয়েছেন। আমরা সকল বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করব।’

তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা ইনশাল্লাহ গড়ে তুলব।’

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন দল-মত নির্বিশেষ সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করি এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত সমৃদ্ধ সুন্দর এবং বাসযোগ্য বাংলাদেশ উপহার দেই।’

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন