খননের কৃপণতায় অসময়ে বন্যা…

  24-04-2017 09:23PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : সুষ্ঠু খননের অভাবে নদ-নদী নাব্য হারাচ্ছে। নাব্য হারানো নদীর পানি ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলে স্বাভাবিকভাবেই। এতে পানি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় বন্যার। ঘটে ফসলহানিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যে দুর্যোগকবলিত হয়ে মানুষ দুর্বিসহ জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়। অথচ সময়ের কাজ সময়ে করলে জাতীয় জীবনে দুর্যোগ এড়ানো সম্ভব।

সম্প্রতি অতি বৃষ্টি, পাহাড়ী ঢল ও বাঁধ ভেঙ্গে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলবীবাজারের হাকালুকি হাওর ও কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা হাওরাঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সব ধরনের ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়।জমির ফসল হারিয়ে কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েন। ফসল শুধু হারিয়ে যায়নি, সে ফসল তাদের জন্য নানা সমস্যাও সৃষ্টি করছে। চড়াচ্ছে পচা দুর্গন্ধ।

সময়ের কাজ সময়ে না করায় অসময়ে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রকৃতি করছে বিরূপ আচরণ। প্রকৃতি এতটাই বিষিয়ে উঠছে যে, সে কোনো নিয়ম মানছে না। করছে খামখেয়ালিপনা।এর কুফল ভোগ করছি আমরা। আমরা সচেতন না হলে প্রকৃতির রোষানল থেকে নিস্তার যে মিলবে না, অসময়ে বন্যা আমাদের সে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে।

জেনে-না জেনে গাছ কেটে সাবাড় করে, অবাধে পাহাড় কেটে ধ্বংস করে, নদ-নদীতে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে, কয়লা পুড়িয়ে জীবনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ধ্বংস করছি আমরা। ধ্বংস করছি প্রতিনিয়ত শ্বাস নেয়ার বাতাসটুকু। ফলে কার্বন-ডাই অক্সাইড হিসেবে যা ছাড়ছি, সেটাও আমাদের গ্রাস করছে ইচ্ছেমতো।

যে গাছ আমাদের অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে, সে গাছ কেটে ফেলতে আমাদের বাধে না। একটি গাছ কাটলে আরেকটি গাছ রোপণের কথা আমরা ভাবি না। অথচ গাছ সে সুফল নিতে মোটেও কার্পণ্য করি না বা করছি না। গাছ শুধু অক্সিজেনই দেয় না, দেয় সুমিষ্ট ফল, ছায়া, জীবন রক্ষাকারী মূল্যবান ওষুধ, কাঠ ইত্যাদি।

গাছ আমাদের বড় বড় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকেও রক্ষা করে। রক্ষা মিলে বজ্রপাতের মতো অকস্মাৎ মৃত্যু থেকে। কিছু কিছু গাছ মিষ্টি রসও দেয়। যে গাছের এত গুণ, সে গাছকে রক্ষা না করে উল্টো উজাড় করায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের পিছু ছাড়ছে না। প্রকৃতি বৈরী আচরণ করছে। অকাল বন্যা আমাদের সর্বনাশ ডেকে আনছে।

প্রকৃতির সঙ্গে আমরা কতটা বিমাতাসূলভ আচরণ করছি, সেটার কিছুটা বর্ণনা করেছি। যেসব কারণে প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। আবহাওয়া আমাদের অনুকূলে বদলে প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে। তার সর্বশেষ উদাহরণ হাওরাঞ্চলে মাছ, হাঁস মরে যাওয়াসহ জীববৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে। এটা শুভ লক্ষণ নয়। এ থেকে পরিত্রাণে আমাদের সতকর্ হওয়ার বিকল্প নেই।

বৈশাখ মাসে বন্যা হয়েছে। এ রকম যে আর হবে না, তা হলফ করে বলা যায় না। বরং আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই আগাম বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতি থাকতে হবে। আবহাওয়া, কৃষি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

নদ-নদী ও হাওর-বাঁওর খননপূর্বক পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে আমাদের মুখে খাবার তুলে দেয়া দেশের প্রাণ কৃষককে অকাল বন্যার কবল ও দকল থেকে বাঁচিয়ে জিডিপিকে আরো বাড়ানোর পথ সুগম করা জরুরি। জরুরি হাওরাঞ্চলের বাঁধগুলোর দিকে সদয় দৃষ্টি দেয়া। বিশেষ করে সে খাতের কথিত অনিয়ম রোধে। সর্বেপরি কোনোমতেই কেউ যেন বাঁধ না কাটে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)
ই-মেইল : [email protected]

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন