কবর খুঁড়লেই আসছে পানি!

  21-07-2017 06:04PM

পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীর প্রায় সব বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয় জুরাইন কবরস্থানে। রানা প্লাজা, তাজরিনসহ অসংখ্য দুর্ঘটনা ও অজ্ঞাত লাশ দাফন হয়েছে কবরস্থানটিতে; দাফন হচ্ছেও প্রতিদিন। বর্ষার সময় এ কবরস্থানে লাশ দাফন করতে হয় রীতিমতো পানিতে। কবর খুঁড়লেই বেরিয়ে আসে পানি।

জুরাইন কবরস্থানের ‘গোর খোদক’ আবদুস কুদ্দুস। তিনি ২৫ বছর ধরে এই কবরস্থানে কবর খোঁড়ার কাজ করছেন।

কুদ্দুসের ভাষ্য, ‘দুই-তিনটা কোপ দিলেই পানি উঠে। প্রতি বর্ষায় এমন হয়। আমাদের এখানে এই সমস্যা বেশি। ভুষি ও মাটি দিয়ে কোনরকম আত্মীয়-স্বজনকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করি। আমরাও তো মানুষ, একটা লাশ পানিতে কবর দিতে আমরাও চাই না।’

‘গোর খোদকদের’ এই সর্দার (প্রধান) জানান, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে কবর খুঁড়লেই পানি উঠে। বৃষ্টির কারণে সব কবরস্থানেই পানির সমস্যা হয়। জুরাইন নিচু এলাকা হওয়ায় এখানে এই সমস্যা বেশি।

১৮ বছর ধরে ‘গোর খোদক’র কাজ করা আলী বলেন, এই কবরস্থান থেকে পানি নামতে পারে না। কবর খুঁড়ে রাখতে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই পানি উঠে ভরে যায়।

সাড়ে ১৬ একরের এই কবরস্থান তিনটি অংশে বিভক্ত। সংরক্ষিত ৫ একর, সাধারণ ৪ একর ও সাড়ে ৭ একরে বর্ধিতাংশ। বর্ধিতাংশে দেড় একর মুক্তিযোদ্ধাদের। সংরক্ষিত অংশটি বেশ উঁচু। বাকি সাড়ে ১১ একরে পানির সমস্যা। যার সাড়ে ৭ একরের অবস্থা বেশ নাজুক।

রাজধানীর বেওয়ারিশ লাশগুলো সব জুরাইনে দাফন হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে এ নিয়ে বেশ সমস্যা দেখা দেয়। গত সপ্তাহে ঢাকা মেডিকেল ও মিটফোর্ডসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে লাশ রাখার জায়গা হচ্ছিলো না। বুধবার অন্তত এমন ৫০টি লাশ দাফন হয়েছে।

এ বিষয়ে জুরাইন কবরস্থানের সিনিয়র মোহরার মাওলানা শোয়াইব হোসেন জানান, এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। রাজধানীর অন্য কবরস্থানে এ সমস্যা নেই। গেল এক সপ্তাহ অনেক লাশ ফেরত গেছে। কবর খুঁড়তে গেলেই পানি উঠে, আমরা কী করবো। বর্ধিতাংশে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি। সাধারণের জন্য থাকা ৪ একরেও বর্ষায় পানির জন্য সমস্যা দেখা দেয়।



তিনি আরও বলেন, বেওয়ারিশ লাশ দাফন নিয়ে প্রায়ই ‘আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম’র (জনকল্যাণ সংস্থা) সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়। তারা চাপ নিতে না পেরে বলে, পানিতেই কবর দেন। এটা কী সম্ভব! আজ (বুধবার দুপুর ২টা) এখন পর্যন্ত ছোট-বড় ৪৪ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। আরও আসছে বলে খবর পেয়েছি।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কবরস্থান সংলগ্ন আশপাশ এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। ড্রেনগুলো দিয়ে পানি যায় না। একটু বেশি বৃষ্টি হলে কবরস্থানের ভেতরের পানি বাইরে এসে মিশে। মাটি মিশ্রিত এই পানি বসতবাড়িতেও ঢুকে। অনেক জনপ্রতিনিধিই ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ফলাফল পাননি তারা।

সরজমিনে দেখা যায়, কবরস্থানের আশপাশের বেশ কয়েকটি রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে। যার কারণে ড্রেনগুলোতে পানির প্রবাহ নেই। প্রায় বছর খানেক ধরে রাস্তার এই অবস্থা বলে জানা গেছে।

সমস্যার সমাধানে করণীয় সম্পর্কে কবরস্থানের সিনিয়র মোহরার বলেন, জুরাইন নিচু এলাকা। তাই এই কবরস্থানের মাটি অন্তত ২-৩ ফুট উঁচু করতে হবে। এছাড়া কোনভাবেই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

কবরস্থানটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাভুক্ত। এ বিষয়ে ডিএসসিসির সমাজকল্যাণ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন