পাহাড়ে এখনো ঝুঁকিতে লাখো মানুষ

  27-07-2017 08:17AM

পিএনএস ডেস্ক:: পাহাড়ে মৃত্যুর মিছিল শুধু দীর্ঘই হচ্ছে না, অনুভূত হচ্ছে আরো বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা। ২০০৭ সালে ১২৭ জনের প্রাণহানির ঠিক ১০ বছর পরে এসে ২০১৭ সালে এ পর্যন্ত প্রাণহানির সংখ্যা পৌন দুই শ ছাড়িয়ে গেছে। বর্ষাকাল বাকি থাকায় উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না আরো মৃত্যুর ঝুঁকি। গত ১০ বছরে পাহাড়ে বসতির সংখ্যা বহুগুণ বাড়লেও প্রশাসনিক উদ্যোগ দৃশ্যমান সামান্যই। ২০০৭ সালের মর্মস্পর্শী ঘটনার পর তদন্ত কমিটির করা ২২ সুপারিশের কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও গত এক দশকে নিয়মিতই পাহাড়ধসে মৃত্যু হয়েছে। এমনকি গত মাসের মৃত্যু মিছিলের পরও পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধ হয়নি। মঙ্গলবার কক্সবাজারে পাহাড়ধসে পাঁচজন মারা যায়। এর সপ্তাহখানেক আগে সীতাকুণ্ডে মাটিচাপায় প্রাণ হারায় একই পরিবারের পাঁচজন। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখনো চলছে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিশেষজ্ঞরা পাহাড় কাটা বন্ধসহ পরিবেশবান্ধব আচরণে মনোযোগী হতে বলেছেন।

রাঙামাটি থেকে জেলা প্রতিনিধি ফজলে এলাহী জানান, গত জুনে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে ১২০ জনের মৃত্যু এবং প্রায় তিন হাজার বসতবাড়ি ধ্বংস হওয়ার পরও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে কয়েক হাজার মানুষ। দুর্যোগের পরপর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুধু রাঙামাটি শহরের ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের অনেকেই ফিরে গেছে বিপত্সংকুল পুরনো ঠিকানায়। বুধবার পাহাড়ের ঢালে গড়ে ওঠা রূপনগর এলাকায় কথা হয় রাজমিস্ত্রি মো. আমিরের (২০) সঙ্গে। পরিবারের অন্য সদস্যরা স্টেডিয়ামে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকলেও তিনি ঝুঁকি নিয়ে ঘরেই থাকছেন চুরির ভয়ে। আমির জানান, চার বছর আগে দেড় লাখ টাকায় পাহাড়ে জায়গা নিয়ে তাঁদের পরিবার বসতি গড়ে। এলাকার আরেক বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি মিজানুরের (২২) সাত সদস্যের পরিবারও চার বছর আগে পাহাড়ে জায়গা কিনে বসবাস শুরু করে। মিজান বলেন, ‘মরলেও এখানে থাকব, বাঁচলেও। ’ তবে টিভিকেন্দ্র এলাকার গৃহবধূ পারভীন আক্তার (৩৬) বলেন, ‘যদি সরকার নিরাপদ কোথাও একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয় তাহলে চলে যাব। ’ তিনি জানান, দিনমজুর স্বামী অনেক কষ্টের টাকায় পাহাড়ে ঘর করেছিলেন।

জুনের দুর্যোগের প্রায় ৪৩ দিন পরেও গতকাল বুধবার চলমান ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষের অবস্থান দেখা গেছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক ভয়াবহতার পর অনেকেরই টনক নড়েছে। এখন আবহাওয়া অধিদপ্তর নিয়মিত তথ্য দিচ্ছে। জেলা প্রশাসন দুর্যোগ সেল গঠন করেছে। সব সময় সতর্ক থাকছে ফায়ার সার্ভিস।

ক্ষতিগ্রস্তদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ এবং তাদের ভূমির বর্তমান অবস্থা ও মালিকানা বের করে ইতিমধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) আহ্বায়ক করে গঠন করা হয়েছে কমিটি। পুনর্বাসনের জন্য নিরাপদ স্থান খুঁজে বের করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের পৃথক আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই কমিটি প্রতিবেদন দেবে। সাম্প্রতিক দুর্যোগের পর জাতীয় দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুব্রত সাহাকে আহ্বায়ক করে গঠিত ২৭ সদস্যের জাতীয় কমিটিও প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা দেবে। এসবের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক। ইতিমধ্যে জাতীয় কমিটির সদস্যরা রাঙামাটির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন।

অক্ষত পাহাড়েও ধস : এবার রাঙামাটি-সুভলং নৌপথ, রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এমন সব পাহাড় ধসে পড়তে দেখা গেছে, যেগুলো কখনোই কাটা হয়নি কিংবা নির্মিত হয়নি বসতবাড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সরকার গঠিত জাতীয় কমিটির সদস্য ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, মনুষ্যসৃষ্ট কারণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক কারণও ধস ঘটাচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে অতিবৃষ্টি, পাহাড়গুলোর গঠন এবং পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল সৃষ্টি হওয়াটা অন্যতম। সরকারের গঠিত জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুব্রত সাহা বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে দেখেছি, মানুষ বসবাস করে না এমন ভার্জিন পাহাড়ও ধসে পড়েছে। এটা আমাদের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা। ’ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের নির্বাহী প্রধান হেফাজত উল বারি সবুজ বলেন, সেগুন, জুম ও আনারস চাষ পাহাড়ের গাঁথুনিকে দুর্বল করেছে। কাপ্তাই বাঁধের কারণেও অর্ধশতাব্দী ধরে পাহাড়গুলো পানিতে ঢুবে আছে। এখানকার মাটি বেলে দোআঁশ। টানা বর্ষণে গাঁথুনি ছেড়ে দেবে—এটাই স্বাভাবিক। তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ওপরই নির্ভর করছে রাঙামাটির ভবিষ্যৎ!

চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে বছর বছর বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বিগত ১০ বছরে পাহাড়ধসে প্রাণ হারিয়েছে ২৩৪ জন। এর মধ্যে ২০০৭ সালে ১২৭ জন, ২০০৮ সালে ১১ জন, ২০০৯ ও ২০১০ সালে ১৫ জন, ২০১১ সালে ১৭ জন, ২০১২ সালে ২৩ জন, ২০১৩ সালে পাঁচজন, ২০১৫ সালে পাঁচজন এবং চলতি বছরের জুন ও জুলাই মাসের এ পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ, সীতাকুণ্ড ও বাঁশখালীতে ৩১ জন মারা গেছে। এর পরও চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড়ে বা পাহাড়ের পাদদেশে বাস করছে কয়েক লাখ মানুষ—যারা মূলত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভিটেমাটিহীন মানুষ।

চট্টগ্রামে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জুন। এতে নারী-শিশুসহ ১২৭ জন মারা যায়। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি ২৮টি কারণ নির্ধারণ করে ৩৬টি সুপারিশ করে। সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের উচ্ছেদ ও পুনর্বাসন, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে পাহাড়ে পাহারা বসানো, সামাজিক বনায়ন ইত্যাদি। কিন্তু এসবের বাস্তবায়ন প্রায় শূন্যের কোঠায়।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ১০ বছরে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৭টি সভা হয়েছে। শুধু সভা, আলোচনা ও বর্ষা মৌসুমে কয়েক দিন উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে কমিটির কার্যক্রম। সভায় অধিকাংশ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাজিরও হন না। সর্বশেষ সভায় কমিটির সভাপতি ও বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমীন ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং কর্মকর্তাদের উপস্থিত হতে তাগাদা দেন।

চট্টগ্রামে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনসহ প্রভাবশালী গোষ্ঠী। সীতাকুণ্ডের দুর্গম জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় পাহাড়ে বসতি বাণিজ্য নিয়ে মারামারিও হয় মাঝেমধ্যে। পরিবেশকর্মী শরীফ চৌহান বলেন, পাহাড় কাটা ও দখলে জড়িতরা চিহ্নিত হলেও প্রশাসন কখনোই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে প্রতিবছরই পাহাড়ে অবৈধ বসতি বাড়ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ের গঠনশৈলী বালুমিশ্রিত, কম্প্যাক্ট নয়। এসব পাহাড় কাটলে মাটি আলগা ও ঝরঝরে হয়ে যায়। ভারি বর্ষণের সময় প্রচুর পানি চুষে পাহাড়গুলো ধসে পড়ে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল জলিল বলেন, প্রবল বর্ষণের সময় লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া ও মাইকিং করা হয়।

কক্সবাজার থেকে জেলা প্রতিনিধি তোফায়েল আহমদ জানান, গত ১০ বছরে কক্সবাজারে পাহাড়ধসে শতাধিক প্রানহানি ঘটেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে সংখ্যাটি অবশ্য ৫৫। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার লাইটহাউস এলাকায় প্রাণ হারায় পাঁচজন। কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, কক্সবাজারে কয়েক বছর ধরে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন খুব বেড়ে গেছে। দেশের নানা প্রান্তের লোকজনের সঙ্গে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপনে যোগ হয়েছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার স্রোত। কলাতলী, সাহিত্যিকা পল্লী এলাকা, সাত্তার ঘোনা, বাদশা ঘোনা, টেকনাইফ্যা পাহাড়, বর্মাইয়া পাহাড় নামে পরিচিত এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গা জনবসতির ছড়াছড়ি। রোহিঙ্গারা সস্তায় পাহাড় কাটার মজুর হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পাহাড় কেটে ফেলে। তাই পাহাড় কাটার কাজে রোহিঙ্গাদের কদরও বেশি।

কক্সবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতে কমপক্ষে ৫০ হাজার পরিবারের বসতি রয়েছে। জেলা প্রশাসন পাহাড় কেটে বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় শুধু বর্ষা মৌসুমে।

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম মজুমদার বলেন, একেবারে বন্ধ করা যাচ্ছে না পাহাড় কাটা। সরকারি কর্মকর্তা ও সুধীসমাজের লোকজনকে নিয়ে নিয়মিত বৈঠকের পাশাপাশি গঠিত হয়েছে একটি শক্তিশালী কমিটিও, যে কমিটির কাজ হচ্ছে লোকজনের মাঝে পাহাড় কাটার নেতিবাচক দিক তুলে ধরে তাদের সচেতন করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া।

কক্সবাজার পরিবেশ অদিপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, পাহাড় কাটার ব্যাপারে ২০১২ সাল থেকে কক্সবাজারে এ পর্যন্ত ১৪৫টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার আসামির সংখ্যাও সহস্রাধিক। তিনি বলেন, পরিবেশ কর্তৃপক্ষের অব্যাহত অভিযানের কারণে পাহাড় কাটার ঘটনা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।

কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও পরিবেশের লোকজন নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে। তবে এভাবে পাহাড় কাটা শুধু সাময়িক বন্ধ করা যায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিং অং রাখাইন বলেন, ‘রাখাইন ঐতিহ্যের শহর কক্সবাজারে পাহাড়খেকোরা ধ্বংস করে দিয়েছে শত শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য। ’ জাদি পাহাড়ের চূড়ায় রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী প্যাগোডার অদূরেই পাহাড়ের তৃতীয় স্তরে বহুতল পাকা ভবন নির্মাণ করছেন স্থানীয় অনিল স্টোর নামের একটি দোকানের মালিক অনিল দে। অনিল দে বলেন, ‘দাদা, আমি পাহাড় কাটিনি। তবে কাটা পেয়েছি, তাই ঘর নির্মাণ করছি।’

খাগড়াছড়ির জেলা প্রতিনিধি আবু দাউদ বলেন, ঝুঁকিতে থাকা পাহাড়ের মানুষগুলোকে সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনও। এ পর্যন্ত খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলাসহ পাঁচটি উপজেলার ৪৫১টি ঝুঁকিপূর্ণ বসতির তালিকা করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক এ টি এম কাউছার হোসেন জানিয়েছেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি জানান, এবার পাহাড়ধস ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে এ পর্যন্ত ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বর্ষায় জেলার লক্ষ্মীছড়িতে দুজন ও রামগড়ে আরো দুজন পাহাড়ধসে মারা গেছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলা শহরের শালবন, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, সবুজবাগ, কুমিল্লাটিলাসহ কয়েকটি এলাকা, জেলা সদরের বিভিন্ন গ্রাম এবং জেলার মানিকছড়ি, দীঘিনালা, রামগড়, মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় পাহাড়ি ও বাঙালিরা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এর মধ্যে কিছু ভূমিহীন মানুষ বাধ্য হয়ে বসবাস করলেও বহু পরিবারই প্রভাব খাটিয়ে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তুলেছে। তারা সুযোগ বুঝে পাহাড়ের ঢালে মাটি কেটে রাখে, যাতে বৃষ্টি এলেই পাহাড় ধসে পড়ে। এরপর তারা বসতি সম্প্রসারণ করে থাকে।

বান্দরবানের নিজস্ব প্রতিবেদক মনু ইসলাম জানান, গত ২০ বছরে এই জেলায় প্রাণহানি হয়েছে শতাধিক। সবচেয়ে বেশি লামা উপজেলায়। ১৯৯৭ সাল থেকে লামায় কমপক্ষে ৪৫ জন মারা যায়। পাহাড়ের ঢালে নির্মিত হওয়ায় বান্দরবান-রুমা সড়ক এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিলেও এই সড়কের ২২ কিলোমিটার পয়েন্টে ১৩ জুন থেকে এ পর্যন্ত তিনবার পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানি ঘটেছে পাঁচজনের। ২০১৫ সালে ব্যাপক পাহাড়ধসের পর বান্দরবান জেলা প্রশাসন ও বান্দরবান পৌরসভা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছিল, কিন্তু শেষ করেনি। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক এবং বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী জানান, বিকল্প স্থানে পুনর্বাসনের অঙ্গীকার করেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের তাদের অবস্থান থেকে সরিয়ে আনা যাচ্ছে না। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক প্রভাব বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

স্থানীয় মৃত্তিকা সংরক্ষণ ও পানি ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের ইনচার্জ কৃষিবিদ মাহবুবুল ইসলাম জানান, অনিয়মিত ও হঠাৎ করে প্রবল বৃষ্টিপাতই পাহাড়ধসের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন