আসন্ন কোরবানিতে প্রস্তুত দেড় কোটি পশু, ভারতীয় গরুর প্রয়োজন নেই

  14-08-2017 12:33PM

পিএনএস ডেস্ক: আসন্ন ঈদ-উল আযহায় কোরবানির জন্য চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত গরুসহ সব ধরনের প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশে। ভারতীয় গরু আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন খামারি- ব্যাপারি ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, হঠাৎ করে ভারতের গরু দেশে ঢুকলে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হবে, দামও পড়ে যাবে। ফলে গরু পালন ও মাংস উৎপাদনে চাষিদের মাঝে অনিহা দেখা দেবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পাঁচ লাখ ২২ হাজার খামারিও।

দেশে এক কোটির কিছু বেশি পশু কোরবানি দেওয়া হয়। এর মধ্যে থাকে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ গরু। এর আগে দেশি খামারিরা ৩০ থেকে ৩৫ লাখ গরু জোগান দিতেন। বাকিটা ভারত, নেপাল ও মায়ানমার থেকে আনা হতো। এ বছর ৪৫ লাখ গরুর চাহিদার প্রায় পুরোটাই দেশি গরু দিয়ে মেটানো সম্ভব বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।

অধিদফতরের মহাপরিচালক আইনুল হক আরও জানান, এবার চাহিদার অনেক বেশি এক কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। ফলে ভারতীয় গরুর কোনো দরকারই নেই।

খামারিদের অভিযোগ, কোরাবানির ঈদের সময় মূলত ভারতের নিম্নমানের গরু কাঁটাতার পার করে আনা হয়। ভারত অন্যতম বড় মাংস রফতানিকারক দেশ। যেসব গরু তাদের দেশে চলে না, সেগুলোকেই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

ভারতের গরু আসার অপেক্ষায় অনেকেই আগে-ভাগে কেনেন না। হয়তো ক্রেতারা চিন্তা করেন, দাম আরও কমবে। শেষ মুহূর্তে এসে গরু কেনায় হুড়োহুড়ি বেঁধে যায়। এতে কেউ ঠকেন, কেউ লাভবান হন।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক ইমরান হোসেন বলেন, ভারতের গরু এসে খামারিদের মধ্যে ও বাজারে শুধু শুধু অস্থিরতা তৈরি করে। সেগুলো না এলে আগেই স্বাচ্ছন্দ্যে গরু কেনেন ক্রেতারা। আর এলে শেষ মুহূর্তে অনেক ক্রেতা হুড়াহুড়ি করে গরু কেনেন। আসলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারতের গরুর কোনো প্রয়োজনই নেই।

দ্য হাম্বা ফ্যাক্টরি’র পরিচালক কাজী শাহজাদ বলেন, ‘ভারতের গরু খামারিদের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের বড় ক্ষতি, দেশেরও ক্ষতি। আমরা খাবারের মান নিশ্চিত করে গরু পালছি। আর ভারতের অচল গরু এসে বাজার নষ্ট করছে। সেগুলোকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতিই বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আমরা আর কতোদিন অন্যের দিকে চেয়ে থাকবো? ভারতের গরু পুরোপুরি বন্ধ না করা হলে কোনোদিনই সক্ষমতা অর্জন করতে পারবো না’।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ব্যাপারি আওলাদ হোসেন বলেন, গ্রামের একজন গরিব মানুষ বড় কষ্টে গরু পালেন। নিজে পরের জমিতে জন খাটতে যান। বাড়ি আসার সময় কিছু কাঁচা ঘাস এনে গরুকে খাওয়ান। অনেক সময় পরিবারের সবার খাওয়ার পর একটু ভাত ও ভাতের মাড় থাকলে সেগুলো গরুকে খাওয়ান। যদি ভারতের গরু আসায় দাম পড়ে যায়, তবে সেই গরিব চাষিও আর গরু পালবেন না। শুধু গরিব চাষিই নন, গৃহস্থরা গরু পালনে অনিহা দেখাবেন।

কমপ্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক আইনুল হকও বলেন, ভারতের গরু দেশে এলে গরু পালাই ছেড়ে দেবেন অনেকে। ফলে এখন যে পরিমাণে পশু উৎপাদিত হচ্ছে, তাতে বড় ধরনের ভাটা পড়বে। খামারিদের অর্থনৈতিক ছাড়াও শারীরিক ক্ষতি করবে। কারণ, অসুস্থ গরুগুলো থেকে পশু ছাড়াও মানুষও রোগে আক্রান্ত হয়। দেশে উৎপাদনের সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে বাইরের গরু আমদানি বন্ধ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।



পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন