জাতিসংঘের মিঁউ মিঁউ ভূমিকায় আরাকানে জাতিগত নিধন ত্বরান্বিত হচ্ছে

  21-09-2017 11:58AM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : কিয়ামতের সব আলামত মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সংঘটিত করছে সে দেশের সামরিক জান্তা ও বৌদ্ধরা। নির্যাতনের হেন নির্মম-পৈশাচিক উপায় নেই, যা তারা ব্যবহার করছে না। গুলি-পুড়িয়ে-বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে এমনকি কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে মারা হচ্ছে।


নির্যাতনের স্টিমরোলার থেকে রেহাই পাচ্ছে না নারী-শিশু-বৃদ্ধরা। নারীদের কাউকে প্রকাশ্যে ধর্ষণ করছে, কাউকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অজানার উদ্দেশ্যে। নিষ্পাপ শত শত ছেলে-শিশুকে সারিবদ্ধভাবে বেঁধে জবাই করে হত্যা করা হচ্ছে। প্রতিদিনই এমনটা ঘটছে। নির্মমতার সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে সে দেশের খুনিচক্র।


অমানসিক নির্যাতন, খুন, জখম করে বসে নেই শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চির রক্তপিপাসু সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধরা। তারা মাইকিং করে বসতি ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে, যারা যাচ্ছে না; তাদের ঘরে তালাবদ্ধ করে গ্রামের পর গ্রাম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে বিরাণ ভূমিতে পরিণত করছে।


প্রকাশ্যে মানুষ হত্যার এমন ভয়ানক অবস্থা সৃষ্টিকারী মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না মানবাধিকার কর্মী এবং ত্রাণকর্মীদের। এটা তো এখন শতভাগ সত্য যে, আরাকান রাজ্যে মানবীয় বিপর্যয়ের ভয়াবহতাকে লোকচক্ষুর আড়াল করার জন্যই সেখানে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না।


মানবতার এমন করুণ পরিণতির পরও জাতিসংঘ তার সঠিক ভূমিকা বা করণীয় ব্যাপারে অনেক অনেক দূরে! লোক-দেখানো হম্বিতম্বি ছাড়া সেখানে জাতিগত নিধন বন্ধে আরাধ্য কাজটা করছে না। এমনকি জাতিসংঘের অধীন সেখানে একটি নিরাপদ অঞ্চল গঠনেও সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারছে না!


এক কথায় জাতিসংঘ কর্তৃক আরাকানে সময়ের করণীয় নির্ধারণের সময়ক্ষেপণকে কাজে লাগিয়ে অং সান সু চির অনুসারীরা হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে আরাকান রাজ্যকে মানবশূন্য করতে শতভাগ সফল হয়েছে। জাতিসংঘের বিড়াল-মাশির মিঁউ মিঁউ শব্দকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা দানবীয় কায়দায় একটি জাতিকে বিনাশ ও জন্মভূমি থেকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।


জাতিসংঘ ও বিশ্বমোড়লদের আকাশসম দুর্বলতার কারণে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা আরাকানে বর্বরতার সব সীমা অতিক্রমের সুযোগ পেয়েছে। সবুজ অরণ্যে ঘেরা মানব বসতিকে ছারখার করে সেখানে লাশের মিছিল দীর্ঘ করতে সফল হয়েছে। ঘর-বাড়ি আর লাশ পোড়া উৎকট গন্ধে আরাকানের আকাশ-বাতাস ভারী।


মানুষ হত্যার রকমফেরভাবে জঘন্য পাপাচারকে প্রশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘ দেশে দেশে ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করেন মানবাধিকারে বিশ্বাসী মানুষরা। তাদের মতে, এর দীর্ঘমেয়াদি কুফল বিশ্বকে ভোগ করতে হতে পারে। সময়ের এক ফোঁড়কে গুরুত্ব না দেয়ায় এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।


মিয়ানমারে আদিকাল থেকে বসত আরাকের মুসলমানদের। সেখানে তারা বংসপরম্পরায় এমপি শুধু নয়, মন্ত্রীও ছিল। ঠুনকো মনগড়া অজুহাত তুলে শত শত বছর ধরে বাস করা রোহিঙ্গাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়ন করা মানে মৌলিক অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা। এটা অমানবিক ও মানবাধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।


ঐতিহাসিক সত্য হলো, মঙ্গলীয় আমল থেকে আরাকানের মুসলমানরা সেখানে বসবাস করে আসছে। ১৯৭৮ সাল এবং ১৯৯৩ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও সেটার সত্যতা আছে। তাই তাদের প্রতি যে নির্দয় অমানবিক আচরণ করা হয়েছে, এর সুষ্ঠু বিচার এবং তাদের স্বদেশে ফেরত নেয়া সময়ের দাবি।


লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে
ই-মেইল : [email protected]

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন