উজানে ভারতের দেওয়া প্রত্যেকটি বাঁধ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী : ড. এস আই খান

  28-11-2014 07:42PM

পিএনএস ডেস্ক : জাতিসংঘের সাবেক পানি বিশেষজ্ঞ ড. এস আই খান বলেছেন, ‘উজানের বিভিন্ন নদীতে দেওয়া ভারতের প্রত্যেকটি বাঁধ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। ওই বাঁধ ভারতের জনগণের কোনো উপকারে আসেনি বরং তা বাংলাদেশের জনগণের মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।’

‘বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন’র নবম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার ‘বাংলাদেশ নদী ব্যবস্থাপনা : প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সম্মানিত আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এস আই খান বলেন, ‘শুধু ফারাক্কা বাঁধের কারণে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পে (জিকে প্রেজেক্ট) ১৫ হাজার কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তিস্তা বাঁধের কারণে ক্ষতি হয়েছে ১৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ফসল। মেঘনায় পানির প্রবাহ ১০ মিটার কমে গেছে। মেঘনার মোহনায় ৫ মিটার পানি প্রবাহ কমে গেলে লবণাক্ততা সিলেটে পৌঁছাবে।’



তিনি বলেন, ‘পানির স্তর ৫ ফুট থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের ৫০ লাখ নলকূপ দিয়ে বছরের বিরাট একটা সময় পানি ওঠে না। পানির স্তর ২৬ ফুট নিচে নামলে শক্তিশালী গভীর নলকূপ দিয়েও পানি তোলা যাবে না।’

এই পানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সরকারিভাবে জাতিসংঘের ষষ্ঠ কমিটিতে প্রতিবাদ করা ছাড়া ভারতের সঙ্গে বিরাজমান নদী সমস্যার সমাধান হবে না।’

এস আই খান অভিযোগ করেন, ‘বাইরের দেশের পানি তুলে নেওয়া এবং দেশের মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত আচরণের কারণে দেশের নদীগুলো দুর্দশায় পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নদীর মালিকানা নদীকেই দিতে হবে। নদীর পাড়ে যারা বসবাস করেন তারা এর দেখভাল করার মালিক হবেন। মৌজা ম্যাপের সাহায্যে নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে।’



‘শোধন না করে নদীতে বর্জ্য ফেলার কারণে পাতালের পানিও বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে। এতে দেশের মানুষের নলকূপের পানিও বিষাক্ত হয়ে যাবে’ আশঙ্কা এ পানি বিশেষজ্ঞের।

রাজধানীর মহাখালীতে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক মো. আনোয়ার সাদাত উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। আলোচনা করেন জল ও পরিবেশ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান পানি প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, বেসরকারি সংস্থা বেলার নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি রিসার্চ’র পরিচালক অধ্যাপক ড. শওকত ওসমান, জনকণ্ঠের মহাব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম ও পিনাকল সোর্সিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রিবাইন পিপল’র সেক্রেটারি জেনারেল শেখ রোকন, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের ঢাকা মহানগর সভাপতি ব্যারিস্টার কাজী আখতার হোসাইন ও মিহির বিশ্বাস। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেন। আলোচান সভা শেষে দ্বিতীয় পর্বে জাতীয় প্রতিনিধি সভা-২০১৪ অনুষ্ঠিত হয়।



পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, ‘ইন্দারা গান্ধী থেকে শুরু করে ভারতের বিভিন্ন সরকার সবসময়ই বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। অথচ তারা বাংলাদেশকে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে একের পর এক নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি নিয়ে নিচ্ছেন। এতে বাংলাদেশের ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে ও হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ভারত এ পর্যন্ত যেসব বাঁধ দিয়েছে তাতে বাংলাদেশের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জাতিসংঘে তুলে ধরার সময় এসেছে। কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এর বস্তা বস্তা রেকর্ড পানি উন্নয়ন বোর্ড রেখেছে। শুধু সরলভাবে নয় ভারতীয়দের বাঁধের কারণে এখন চক্রাবর্তহারে ক্ষতি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত যেভাবে নদী ব্যবহার করছে সেভাবে নদী ব্যবহার করার এখন আর কোনো আন্তর্জাতিক আইন নেই। নদী ব্যবহার করা প্রতিটি মানুষের ঐতিহাসিক অধিকার। জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের সনদ অনুযায়ী প্রতিটি নদীর ঐতিহাসিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, ‘নতজানু অবস্থার কারণে এ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার জাতিসংঘে যেতে পারছে না। এ নতজানু অবস্থা থাকলে আমরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হব।’


পিএনএস/দোজা/শাহাদাৎ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন