‘বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের প্রবনতা কমেছে’

  12-03-2018 09:32PM

পিএনএস, গাজীপুর প্রতিনিধি : মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বলেছেন সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ যেমন নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি করা, নারীকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা এবং ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করায় বাংলাদেশের বাল্য বিবাহ কমেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফি হেলথ সার্ভে অনুযায়ী ২০০৪ সালে বাল্য বিবাহের সংখ্যা ছিল ৬৮.৪ শতাংশ। ২০১৪ সালে সেটা কমে হয়েছে ৫৮.৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যুরো অফ স্টাটিস্টিক (বিবিএস) এবং ইউনিসেফের যৌথ ভাবে সম্পাদি মাল্টিপল ক্লাস্টার সার্ভে অনুযায়ী ২০০৫ সালে বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের সংখ্যা ছিল ৬৪.১ শতাংশ। ২০১৩ সালে তা কমে দাড়িয়েছে ৫২.৩ শতাংশ । এই দুইটি জরিপেই বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের প্রবনতা কমেছে বলে প্রতিয়মান হয়।

তাছাড়া ২০১৭ সালে বিআইডিএস সম্পাদিত এক জরিপে দেখা যায় বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের সংখ্যা ৪৭ শতাংশ এবং ১৫ বছর বয়সের নিচে সম্পাদিত বিয়ের সংখ্যা ১০.৭ শতাংশ। সামগ্রীক ভাবে বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের প্রবনতা কমেছে বলে প্রতিয়মান হয়। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন কোন সমীক্ষার মাধ্যমেই প্রমান করা যাবেনা বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু গত ৭ মার্চ ২০১৮ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের প্রবনতা বেড়েছে।

নারী ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ যখন বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভ’ক্ত হচ্ছে সে সময় ৮ মার্চের আগে এ প্রতিবেদনটি আমাকে খুবই মর্মাহত করেছে এবং সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাব মূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। আমি এ প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করছি। প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবেদককে আরও বেশি যতœশীল ও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। প্রতিমন্ত্রী আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে বাংলাদেশের বাল্য বিবাহ পরিস্থিতি বিষয়ক এক প্রেস কনফারেন্সে একথা বলেন।

এ প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেনন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম এনডিসি, অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা শারমীন বেনু, ইউনিসেফের বাংলাদেশ রিপ্রেনজেনটেটিভ এ্যাডওয়ার্ড বিজবার্ডার (Edouard Beigbeder), বিবিএস এর জয়েন্ট ডাইরেক্টর এন্ড প্রজেক্ট ডাইরেক্টর এ কে এম আশ্রাফুল আলম প্রমুখ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন আমরা যখন আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৮ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ঠিক সেই সময় গত ৭ই মার্চ একজন ছাত্রীকে রাজধানীর বাংলামটরে লাঞ্চিত করার ঘটনা আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ঠিক আগের দিন এরকম একটি ঘটনা আমাকে খুবই মর্মাহত করেছে। আমি এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং প্রকৃত অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। আমরা আশা করছি প্রকৃত অপরাধিদের শনাক্ত করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ইউনিসেফের বাংলাদেশের রিপ্রেনজেনটেটিভ এ্যাডওয়ার্ড বিজবার্ডার (Edouard Beigbeder) বলেন ইউনিসেফের কোন ডকুমেন্টেই বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের প্রবনতা বেড়েছে এ কথা বলা হয় নাই বরং সকল তথ্য উপাত্ত্যের মাধ্যমে বোঝা যায় বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের প্রবনতা কমেছে। কিন্তু বাল্য বিবাহের সঠিক সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। বাল্য বিবাহের সঠিক সংখ্যা নিরূপন করার জন্য ইউনিসেফ ও বিবিএস যৌথ ভাবে একটি জরিপ কার্য পরিচালনা করবে। ২০১৮ সালে আগষ্ট মাসে ডাটা কালেক্ট করা হবে এবং ডিসেম্বর নাগাদ একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হবে। আমার ধারনা বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের সংখ্যা ৫০ শতাংশেরও কম হবে এবং পূর্ণাঙ্গ জরিপের মাধ্যমে তা বেরিয়ে আসবে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন