বিবিএসের ১৮ কোটি টাকার জরিপ : দেশের মানুষ মাছ মাংস বেশি খাচ্ছে

  14-10-2019 01:33PM

পিএনএস ডেস্ক : বিবিএস ১৮ কোটি টাকা খরচ করে ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে পরের বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত এক বছর ধরে দেশজুড়ে সর্বশেষ খানা জরিপটি করে। দুই হাজার ৩০৪টি নমুনা এলাকার ৪৬ হাজার ৮০টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে দাবি করে বিবিএস। খানা জরিপকাজের দুই বছর দুই মাস পর গত মে মাসে ঘোষিত চূড়ান্ত ফলটি সংগ্রহ করে অনুসন্ধানে নামে কালের কণ্ঠ।

দেখা গেল, জরিপফলে বলা হয়েছে, দেশবাসীর দৈনিক মাথাপিছু ভাত গ্রহণের পরিমাণ ২০১০ সালের ৪১৬.০১ গ্রাম থেকে ২০১৬ সালে ৩৬৭.১৯ গ্রামে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে দৈনিক মাথাপিছু রুটি খাওয়ার পরিমাণ ২০১০ সালের ২৬.০৯ গ্রাম থেকে কমে ২০১৬ সালে ১৯.৮৩ গ্রামে নেমে এসেছে। একইভাবে ফল খাওয়ার পরিমাণ ৪৪.৭০ গ্রাম থেকে কমে ২০১৬ সালে ৩৫.৭৮ গ্রামে নেমেছে।

মনে প্রশ্ন জাগে, মানুষ ভাত খাওয়া কমালে তো রুটি খাওয়া বাড়ানোর কথা, কিন্তু রুটিও কমবে কেন? আর যদি ভাত, রুটি, ফল—তিনটিই খাওয়া কমিয়েই দেয়, তাহলে তো নিশ্চয় অন্য কিছু খাওয়া বাড়িয়েছে অথবা খাদ্যতালিকায় নতুন কিছু যোগ করেছে দেশবাসী। কী সেটা?

জরিপফল ঘেঁটে দেখা গেল, দেশবাসীর সবজি খাওয়ার পরিমাণ ২০১০ সালের চেয়ে ২০১৬ সালে বেড়ে দৈনিক মাথাপিছু ১৬৬.০৮ গ্রাম থেকে ১৬৭.৩০ গ্রাম হয়েছে। একইভাবে মাছ খাওয়া বেড়ে ৪৯.৫০ গ্রাম থেকে হয়েছে ৬২.৫৮ গ্রাম; মাংস খাওয়া বেড়ে ১৯.০৭ থেকে হয়েছে ২৫.৪২ গ্রাম; ডিম খাওয়া বেড়ে ৭.২৫ গ্রাম থেকে হয়েছে ১৩.৫৮ গ্রাম। তবে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য গ্রহণ কমে হয়ে ৩৩.৭২ গ্রাম থেকে হয়েছে ২৭.৩১ গ্রাম।

মনের খটকা নিয়ে বিবিএসের ওই জরিপফলসহ গত ২৭ আগস্ট ছুটলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের শরণাপন্ন হলে তিনি বললেন, ‘২০১২ সালে দেশের মানুষের খাদ্যভ্যাস নিয়ে আমরা একটি জরিপ করেছিলাম। তখন মানুষের খাদ্য গ্রহণের যে হার দেখেছি, সেটার সঙ্গে বিবিএসের তথ্যের পার্থক্য বিস্তর।’

ফল খাওয়ার হার যেটা দেখানো হয়েছে, সেটিও সঠিক নয় বলে তাঁর মত। তবে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে অনেকের মাঝে স্বাস্থ্যসচেতনতা বেড়েছে; অনেকেই ভাত-রুটি কমিয়ে মাছ, মাংস, ডাল, শাকসবজি খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে—এটা ঠিক। সে কারণে ভাত খাওয়ার প্রবণতা কমতে পারে, তবে এতটা বেশি নয়। মনে রাখতে হবে, দেশের ২০ শতাংশেরও বেশি মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। তাদের পক্ষে ভাত কমিয়ে ডাল-সবজি, মাছ-মাংস কিনে বেশি বেশি খাওয়া সম্ভব নয়। ’

এই পুষ্টিবিদ আরো বললেন, গণনাকারী যখন মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করতে যান, তাঁর সেই কাজে অনেক দুর্বলতা থাকে। এখানেও সে রকম কিছু হতে পারে। যেকোনো জরিপ শুরুর আগে ভালো গণনাকারী নির্বাচন করতে হয়, তাঁদের ভালো করে প্রশিক্ষণ দিতে হয়, কাজের কৌশল শেখাতে হয়। এসব না করে যদি কাউকে তথ্য সংগ্রহের জন্য মাঠে পাঠানো হয়, তাঁর পক্ষে সঠিক তথ্য নিয়ে আসা কঠিন।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন