এখন অ্যাপস ব্যবহার করছে জঙ্গিরা!

  01-12-2019 05:48PM

পিএনএস ডেস্ক : রাজধানীর খিলক্ষেতে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৪। গতকাল শনিবার রাতে খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মো. মাসুম মিয়া ওরফে মাসুম (৩০), আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে এমরান (১৯), রাকিবুল হাসান ওরফে সিয়াম (১৮) ও মো. আব্দুল্লাহ আল রোমান ওরফে রোমান খান (২২)। তাদের গ্রেপ্তারের সময় জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদ সম্পর্কিত বই, লিফলেটসহ উগ্রবাদী ডিজিটাল কনটেন্ট ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে র‌্যাব।

র‌্যাব-৪-এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর), সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল জানান, দেশের প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে ‘ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা’ করাই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মূল উদ্দেশ্য। গ্রেপ্তারকৃতরাও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিপক্ষে। তারা এই শাসনব্যবস্থা নস্যাৎ করে ‘ইসলামি শাসনব্যবস্থা’ কায়েম করতে চায়। ‘ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠায়’ যারা প্রতিহত বা বিরোধ সৃষ্টি করে তাদের চূড়ান্ত শাস্তির ব্যবস্থা করত তারা। তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতাকারীদের ওপর তারা আকস্মিক আক্রমণ করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে থাকে। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় আগ্নেয়াস্ত্রের পরিবর্তে চাপাতি ব্যবহার করা হয়।

সাজেদুল ইসলাম আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-এর সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মাসুম মিয়া জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষস্থানীয় নেতার অনুসারী আমির হোসেনের (গ্রেপ্তার) মাধ্যমে পরিচত হন এবং তার মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হন।

পরবর্তীতে অনলাইনে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী আইডি থেকে জঙ্গি সংক্রান্ত পোস্ট ডাউনলোড করেন এবং বিভিন্ন জঙ্গির সঙ্গে পরিচয় হন। তিনি জঙ্গি সংগঠনে বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছেন। সাতক্ষীরা অঞ্চলের শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গি আমীর হামজার (গ্রেপ্তার) কাছ থেকে জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয়তা সম্পর্কে জানতে পারেন। পরবর্তীতে তিনি অনলাইনে শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত মিটিংয়ের আয়োজন করেন। তিনি তিন বছর ধরে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। জঙ্গি সদস্য এমরান জানান, তিনি ফাজিল প্রথম বর্ষের ছাত্র। বাংলাদেশি বীর মুজাহিদ নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে অ্যাপসের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন। তাদের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ সংগঠনে যোগ দেয়। তিনি দুই বছর ধরে এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন অ্যাপস যেমন, টেলিগ্রাম, টর, ম্যাসেঞ্জার ও ইমো ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্মনামে আইডি ব্যাবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন রকম জঙ্গিবাদী কার্যক্রম পরিচালন করে আসছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে পরিচিত হয় এবং নিয়মিত যোগাযোগ করাসহ সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘জঙ্গি তৎপরতা, প্রশিক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে গ্রেপ্তারকৃতরা নিজেদের মধ্যে অনলাইনে যোগাযোগ করত। তবে কোনো নাশকতার পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, গোপনীয় তথ্য সরবরাহ ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অফলাইনে দেখা-সাক্ষাৎ করত তারা। জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নির্দেশ প্রতিপালনে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি, নতুন সদস্য ও অর্থ সংগ্রহসহ জঙ্গিবাদী কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তারা গোপন মিটিং করতে খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ এলাকায় তাদের পূর্বনির্ধারিত স্থানে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করছিল।’

সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার রাতেও তারা নিকুঞ্জ এলাকায় সমবেত হয়েছিল। খিলক্ষেত থানায় গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ তাদের অন্য সহযোগীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন