যেভাবে আল্লামা শফীর ‘বড় হুজুর’খ্যাতি অর্জন করেন

  19-09-2020 12:52AM

পিএনএস ডেস্ক : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী, ভক্ত ও সহকর্মী রেখে গেছেন।

আল্লামা আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। গত বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে তার শারীরে অসুস্থতা অনুভব হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি বিভাগীয় প্রধান ডা. কাজলের তত্ত্বাবধানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গতকাল বিকেলে আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকায় নেওয়া হয়। এরপর তাকে গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।


আজ শনিবার হাটাহাজারী মাদ্রাসা মাঠে আগামীকাল শনিবার জোহরের নামাজের পর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার শেষে মাদ্রাসার উত্তর পাশে মাকবারায়ে জামিয়া মসজিদের পশ্চিম পাশে তার অছিয়ত অনুযায়ী দাফন করা হবে।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তাদের কাছে তিনি ‘বড় হুজুর’ নামেই বেশি পরিচিত।

‘বড় হুজুর’ হয়ে ওঠা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ার টিলা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বরকত আলীর ঘরে জন্ম নেন আল্লামা শফী। তার মার নাম মেহেরুন্নেছা বেগম। আহমদ শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়া করেন।

দেওবন্দে থাকাবস্থায় তিনি বহু বুযুর্গের সান্নিধ্যে আসেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা আওলাদে রাসূল মাওলানা সাইয়্যেদ হোসাইন আহমাদ মাদানী (রহ.)। আল্লামা শাহ আহমদ শফী হফিযাহুল্লাহ দেওবন্দে অধ্যয়নরত অবস্থাতে তার মেধা-দক্ষতা দেখে ছাত্র অবস্থায় তাকে মাওলানা সাইয়্যেদ হোসাইন আহমাদ মাদনী খেলাফত প্রদান করেন।

ভাষার পাণ্ডিত্য

আল্লামা শফী ছিলেন ঊর্দু, ফার্সি, আরবি ভাষা ও সাহিত্যের পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষায় একজন সুদক্ষ পণ্ডিত। তিনি ১৯৮৬ সালে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে আসীন ছিলেন। এ মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল তার ছাত্র। সবার কাছেই তিনি ‘বড় হুজুর’ হিসেবে পরিচিতি পান। দেশের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাটাহাজারী মাদ্রাসাটি আল্লামা শফীর কারণে বেশ আলোচিত ছিল।

আহমদ শফী বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে ৯টি বইয়ের রচয়িতা। তিনি দেশের কওমী মাদ্রাসা সমূহের সম্মিলিত শিক্ষা সংস্থা আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) এর সভাপতি পদে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আসীন ছিলেন।

হেফাজত ইসলাম গঠন

দেশের প্রবীণ কওমি আলেম আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বেই প্রায় একযুগ আগে গঠিত হয়েছিল আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। শুরু থেকেই আল্লামা আহমদ শফী সংগঠনটির আমীরের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

২০১৩ সালের ৫ ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবরোধ ও সমাবেশের কর্মসূচির পর ব্যাপকভাবে দেশে ও দেশের বাইরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হন আহমদ শফী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে মাঠে নেমে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।

দুই ছেলে

আহমদ শফীর দুই ছেলের মধ্যে মাওলানা আনাস মাদানী হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক ও হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক। অন্যজন মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ার টিলা কওমী মাদ্রাসার পরিচালক।

প্রসঙ্গত, হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম বা মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে যাওয়ার একদিন পরই আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন