ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর উজি পিস্তল: সিদ্ধান্ত নিতে কমিটি গঠন

  22-11-2020 07:08PM

পিএনএস ডেস্ক: দেশের বেসামরিক নাগরিকদের হাতে থাকা ‘মিলিটারি গ্রেডের’ উজি পিস্তলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকার ও আগ্নেয়াস্ত্র আমদানিকারকদের সভায়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সভাপতিত্বে রোববার (২২ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই ‘আমদানি ও বিক্রয় সভা’ অনুষ্ঠিত হয়।

পুলিশের মহা পরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ছাড়াও আগ্নেয়াস্ত্র আমদানিকারক ছয়টি কোম্পানির প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সভায় একটা কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে ওই অস্ত্র সাধারণ মানুষের কাছে থাকবে কি থাকবে না।”

মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদরদপ্তর, পুলিশের বিশেষ শাখা এবং অস্ত্র আমদানিককারকদের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে ওই কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।

গত ২০ অগাস্ট এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তারের পর দেখা যায়, তিনি একটি উজি পিস্তলের মালিক এবং সেটি লাইসেন্স করা। বিষয়টি পুলিশের মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে, কারণ নামে পিস্তল হলেও উজি পিস্তল আসলে অতি ক্ষুদ্র আকারের সাব মেশিনগান।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাংলাদেশে একজন বেসামরিক নাগরিকের কাছ থেকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ব্যবহৃত উজি পয়েন্ট টু-টু বোর পিস্তল উদ্ধারের পর থেকে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

এদিকে পুলিশ বলছে যে, এ ধরণের অত্যাধুনিক অস্ত্র সাধারণ মানুষের হাতে থাকাটা উদ্বেগজনক।

চলতি বছরের অগাস্টে মাদক ব্যবসার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে পাওয়া একটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জের ধরে উদ্ধার করা হয় একটি উজি পয়েন্ট টু-টু বোর পিস্তল। এই অস্ত্র মিলিটারি গ্রেডের উল্লেখ করে পুলিশ জানায়, বাংলাদেশের বেসামরিক নাগরিকদের এই অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি নেই। এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, প্রথম উদ্ধার করা অস্ত্রটির ধরন দেখে সন্দেহ হওয়ায় মতামত নিতে সেটি ঢাকা সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল।

পরে সেনাবাহিনীর প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ত্রের লাইসেন্সে পয়েন্ট টু টু বোর লেখা থাকলেও সেমিঅটোমেটিক উজি পিস্তল কেনা যাবে না। এর এক ম্যাগাজিনে ২০ রাউন্ড গুলি থাকে, যেখানে সাধারণ পিস্তলে থাকে ১৫ রাউন্ড।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শঙ্কা, ‘মিলিটারি গ্রেডের’ সেমি অটোমেটিক এই আগ্নেয়াস্ত্র সাধারণ মানুষের হাতে থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সে কারণে এসব অস্ত্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাটি হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, “পুলিশের কাছে যে অস্ত্র আছে, র্যাবের কাছে যে অস্ত্র আছে, সাধারণ মানুষের কাছে যদি তার চেয়ে অতিরিক্ত ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র থাকে, তাহলে তো বোঝাই যায় যে উদ্বেগের জায়গাটা কোথায়। আইনের ফাঁক গলে অনেক ব্যবসায়ী এই অস্ত্র আমদানি করছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের কাছে বিক্রি করছে।”

“তারা বলেছে যে তারা টু-টু বোর রাইফেল আনছে, কিন্তু এটা টু-টু বোর রাইফেল না, এটা পয়েন্ট টু-টু বোর পিস্তল।”

শফিকুল ইসলাম বলেন যে, আইন অনুযায়ী টু-টু বোর অস্ত্র আমদানি বৈধ। কিন্তু অটোমেটিক বা সেমি-অটোমেটিক অস্ত্র মানুষের কাছে বিক্রি করা যাবে না। এই বিক্রির বিষয়টা অ্যাভয়েড করে, উল্লেখ না করে তারা অস্ত্র আমদানি করছে আরকি।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস এন্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জামান বলেন, যে অস্ত্র নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটি সাব মেশিনগান ক্যাটাগরির একটা অস্ত্র। যেটা সাধারণত ইসরায়েলে তৈরি করা হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, এটা যে ধরনের অস্ত্র সেটা জনগণের কাছে থাকার কথা না এবং জনগণের কাছে বিক্রি করারও কথা না। এটার যে ধরনের ক্ষমতা আছে, সেটা একজন সাধারণ ব্যক্তিরও প্রয়োজন হওয়ার কথা না।

আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, বৈধ উপায়েই এই অস্ত্র আমদানি এবং খালাস করেছেন তারা। সেই সাথে বৈধ ক্রেতা যাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি সম্বলিত লাইসেন্স রয়েছে, শুধু তাদের কাছে এই অস্ত্র বিক্রি করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর মেজর উজিয়েল গালের করা নকশায় চল্লিশের দশকে প্রথম এ অস্ত্র তৈরি হয়। তার নামেই এ সাব মেশিনগানের নামকরণ হয়।

শুরুতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহার করলেও পরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানি লাইসেন্স নিয়ে উজি সিরিজের বিভিন্ন আগ্নোয়াস্ত্র তৈরি শুরু করে। বাংলাদেশে পাওয়া অস্ত্রটি তৈরি করেছে বিখ্যাত জার্মান অস্ত্র নির্মাতা কার্ল ওয়ালথার।

পরে জানা যায়, ছয়টি প্রতিষ্ঠান গত পাঁচ বছরে এ ধরনের মোট ১১১টি আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি করেছে। সবগুলোই আনা হয়েছে পয়েন্ট টু টু বোরের ‘রাইফেল’ ঘোষণা দিয়ে। যদিও কোনো মডেলের উজি তাদের আমদানি বা বিক্রি করতে পারার কথা নয়।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন