আজিমপুর কবরস্থানে শায়িত হলেন আবুল মকসুদ

  24-02-2021 07:11PM

পিএনএস ডেস্ক : রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে প্রখ্যাত সাংবাদিক, গবেষক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদকে। এর আগে তার মৃতদেহ জাতীয় প্রেসক্লাব ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হয়েছিল শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।

সৈয়দ আবুল মকসুদ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদের পুত্রবধু মুনমুন ফারজানা বাসসকে জানান, তার শ্বশুর বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়ার পর দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রথম জীবনে সরকারের তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন, পরবর্তীতে তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেন। তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) বার্তা বিভাগে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন।

আবুল মকসুদ ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদে সন্যাসীর মতো সেলাইবিহিন সাদা পোষাক পড়তে শুরু করেন। ২০০৪ সালে বাসস-এর চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে একাধিক গবেষণা কাজ করেছেন এবং মহাত্মা গান্ধী এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সম্পর্কে তার বিস্তৃত গবেষণা রয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ঋষিজ পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মা সালেহা বেগম। তার জন্মের দুই বছর পর ১৯৪৮ সালের ২০ নভেম্বর তার মা মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর তার বিমাতা বেগম রোকেয়া আখতার তাকে সন্তান স্নেহে লালনপালন করেন। তিনিও ১৯৮০ সালে মারা যান। তার বাবা কাব্যচর্চা করতেন। তাই শৈশব থেকে তিনি দেশি বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা পড়ার সুযোগ পান। তার বাবা বাড়িতে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা, দ্য স্টেটসম্যান ও ইত্তেহাদ এবং পরে ঢাকার দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইত্তেফাক ও মর্নিং নিউজ পত্রিকা রাখতেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে নানা বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। পাশাপাশি কাব্যচর্চাও করেছেন। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের ওপর। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

আবুল মকসুদের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজে। তাদের দুই সন্তান। মেয়ে জিহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স এবং মাস্টার্স করে ব্যাংকে চাকরি করছেন। ছেলে সৈয়দ নাসিফ মাকসুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স এবং মাস্টার্স করে দুই বছর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ করে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে চাকরি করছেন।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন