অকালমৃত্যুর ৫৩ শতাংশই দূষণে : বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

  29-03-2024 12:12PM



পিএনএস ডেস্ক: বিশ্বব্যাংকের নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ উদ্বেগজনক দূষণ ও পরিবেশগত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এতে বেশি ক্ষতি হচ্ছে দরিদ্র, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্ক ও নারী জনগোষ্ঠীর। মারাত্মক দূষণে বছরে অকালমৃত্যু ঘটছে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালিসিস (সিইএ) নামের প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি। প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ুমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন ও হাইজিন এবং সিসাদূষণে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি অকালমৃত্যু ঘটে। ফলে বছরে ৫২০ কোটি ‘অসুস্থতার দিন’ অতিবাহিত হয়।

সংস্থাটি বলছে, পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির কারণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপির ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ঘরের ও বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলায় ৫৫ শতাংশ অকালমৃত্যু ঘটেছে। এই ক্ষতির পরিমাণ ২০১৯ সালের জিডিপির ৮ দশমিক ৩২ শতাংশের সমান।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতির জন্য দায়ী উন্নত রাষ্ট্রগুলো। অথচ ফল পেতে হচ্ছে আমাদের। আমরা যখন উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলি, তারা আমাদের ঋণ নিতে উৎসাহ জোগায়। দেশের জলবায়ু অর্থায়নের ৪০ শতাংশ ঋণ করতে হয়। আমাদের জন্য এটি কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘পুরো জাতির সুস্বাস্থ্য নির্ভর করে দেশের পানির মান ও পরিবেশের ওপর। আজকে যে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়েছে তাকে স্বাগত জানানোর কিছু নেই। বাংলাদেশের মতো দেশের অনেক চ্যালেঞ্জ। আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন।’

সাবের হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাজেটে জলবায়ু খাতে বরাদ্দ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এ দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা চিহ্নিত করা কঠিন। চিহ্নিত সমস্যার জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করা খুব কঠিন। সে কারণে জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়ন-সংক্রান্ত বিষয়ে সম্পদের বিভাজন রোধে সব উন্নয়ন সহযোগীর এক প্ল্যাটফর্মে আসা উচিত।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ডুপ্লিকেশন ও ওভারল্যাপিং কমাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে সম্পদের সুরক্ষা অপরিহার্য।’

বিশ্বব্যাংকের উদ্দেশে সাবের হোসেন বলেন, ‘অর্থায়ন কতটা কঠিন, আমি একটি উদাহরণ দিই। ২০১৮ সালে আমরা পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য সে সময়ের কান্ট্রি ডিরেক্টরের কাছে গিয়েছিলাম, প্রকল্পে অনুমোদন দিতে ৬ বছর লেগেছে। এতেই স্পষ্ট আমাদের জন্য অর্থায়ন কত কঠিন।’

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম বলেন, ‘জলবায়ুসংকট মোকাবিলা আমরা একা করতে পারব না। আমাদের জনবল মাত্র ১ হাজার ১৩৩ জন। আরও বেশি জনবল প্রয়োজন। তবে মন্ত্রণালয় জোরালোভাবে মনিটর করছে। আমাদের অনলাইন ইটিপি মনিটরিং সেল আছে।’

কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য পরিবেশের ঝুঁকি মোকাবিলা একই সঙ্গে উন্নয়ন কর্মকা-ের ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ের অগ্রাধিকার। পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও তা টেকসই হয় না। শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নতি করতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই পরিবেশকে উপেক্ষা করতে পারবে না। এজন্য পরিবেশের ক্ষয়রোধ ও জলবায়ুসহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা খুব দরকার।’

বিশ্বব্যাংক বলছে, পরিবেশদূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। সিসার বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। এর ফলে বছরে আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট। গৃহস্থালিতে কঠিন জ¦ালানির মাধ্যমে রান্না বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। এটি নারী ও শিশুর বেশি ক্ষতি করছে। শিল্পের বর্জ্য, অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা অপরিশোধিত পানিতে বাংলাদেশের নদীগুলোর মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো ও জরুরি হস্তক্ষেপ, উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) ও সিসাদূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিবছর ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি অকালমৃত্যু ঠেকাতে পারে। পরিবেশসহায়ক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ, রান্নায় পরিবেশসহায়ক জ্বালানির ব্যবহার এবং শিল্প-কারখানার দূষণ রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা বায়ুদূষণ কমাতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশবিশেষজ্ঞ এবং প্রতিবেদনটির সহ-প্রণেতা আনা লুইসা গোমেজ লিমা বলেন, ‘সময়মতো এবং সঠিক নীতি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিবেশদূষণের ধারা পাল্টে ফেলতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষা জোরদারে ব্যবস্থা এবং রান্নায় পরিবেশসহায়ক জ¦ালানির জন্য বিনিয়োগ ও অন্যান্য প্রণোদনা, পরিবেশসহায়ক অর্থায়ন বাড়ানো, কার্যকর কার্বন মার্কেট প্রতিষ্ঠা এবং সচেতনতা বাড়ালে দূষণ কমতে পারে এবং এর ফলে পরিবেশসহায়ক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে।’

পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার জন্য সুশাসন জোরদার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে রিপোর্টে পরিবেশগত অগ্রাধিকারগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, বিভিন্ন ব্যবস্থার মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ, পরিবেশনীতি ও পদ্ধতির বিচিত্রকরণ ও জোরদারকরণ, সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো এবং পরিবেশসহায়ক অর্থায়নের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বাংলাদেশ পরিবেশকে রক্ষা করতে পারে।


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন