এবারও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে এপ্রিল

  22-04-2024 11:38AM



পিএনএস ডেস্ক: ঘর থেকে বের হলেই চারপাশ থেকে গরম বাতাস ও রোদের উত্তাপে শরীর যেন পুড়ে যায় অবস্থা। দরদর করে ঝরছে ঘাম। অতিরিক্ত তাপে কোথাও কোথাও গলে যাচ্ছে রাস্তার পিচ। বছরের এই সময়ে মাঝেমধ্যে কালবৈশাখী ও বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি আনে, কিন্তু এবার তাও নেই। গত দুই বছরের মতো এবারও এপ্রিল মাস যেন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।

এপ্রিলের এ সময়ে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে তা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। শনিবার (২০ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে গেছে। এছাড়া দেশের ১২ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রির ওপরে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ বেশি অসুস্থ হচ্ছেন। এ ধরনের উষ্ণ আবহাওয়া বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাণঘাতী দুর্যোগে রূপ নিতে শুরু করেছে। তীব্র দাবদাহে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক সপ্তাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।

গত ১০ বছরে দেশের ৮০ শতাংশ এলাকাজুড়ে মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত থেমে থেমে তাপপ্রবাহ বইছে। আর সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও ভোগান্তি তৈরি করছে এ মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে বয়ে যাওয়া অতি উষ্ণ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা, যা ‘ওয়েট বাল্ব গ্লোব টেম্পারেচার’ নামে পরিচিত।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, চলতি মাসের বাকি সময়জুড়ে তো বটেই, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ ধরে সারা দেশে থেমে থেমে তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। আর অতি উষ্ণ ও আর্দ্রতার বিপদ থাকতে পারে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত। ফলে এ ধরনের আবহাওয়ার সঙ্গে কীভাবে খাপ খাইয়ে চলা যায়, এই গরমের মধ্যে কীভাবে সুস্থ থাকা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাপমাত্রাবিষয়ক গবেষক ও ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়ার অধ্যাপক শামসুদ্দিন শহিদ বলেন, এপ্রিল মাসজুড়ে বাংলাদেশে এই অতি উষ্ণতার বিপদই তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে শুধু তাপমাত্রার তীব্রতা দিয়ে মানুষের কষ্ট ও বিপদ বোঝা যাবে না। কোথাও তাপপ্রবাহ অর্থাৎ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে না গেলেও বিপজ্জনক আবহাওয়া তৈরি হতে পারে। কোথাও যদি তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে এবং আর্দ্রতা ৪০ শতাংশের বেশি হয় এবং বাতাসের প্রবাহ কম থাকে, তাহলে সেখানে অতি উষ্ণতার বিপদ তৈরি হতে পারে।

সম্প্রতি ‘বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, গত ৬০ বছরে এপ্রিলের উষ্ণতা দ্রুত বেড়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকায় তাপপ্রবাহ বইছে। অন্য বছরগুলোতে এই সময়ে কয়েক দিন পরপর একাধিক কালবৈশাখী, ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়। এতে তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসে। এবার বৃষ্টি ও বাতাস নেই বললেই চলে। চার দিন ধরে দেশের ৭০ শতাংশ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে গেছে। আর শনিবার (২০ এপ্রিল) দেশের ১২টি জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, এপ্রিল মাসে আর্দ্রতা বা বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৭৫ শতাংশ; কিন্তু এ মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে তা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে ছিল। গতকাল ঢাকার বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ঘোষণা করা হয়। আর তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর আর্দ্রতা ৩০–এর ওপরে গেলে একে বিপজ্জনক আবহাওয়া হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ওই উচ্চ গরমের সঙ্গে মানুষের শরীর খাপ খাওয়াতে পারছে না। এতে নানা ধরনের রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে, ফসলের উৎপাদন কমছে, খরা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। মানুষের মেজাজ খিটখিটে হওয়া এবং সামাজিক অশান্তি তৈরির ক্ষেত্রেও ওই অতি উষ্ণতা ভূমিকা রাখছে।

অতি উষ্ণতার বিপদ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা কৃষিতে অতিরিক্ত সেচের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে গবাদিপশুর জন্য অতিরিক্ত পানি ও ছায়ার ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন।


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন