চীনের সঙ্গে করা চুক্তির খুঁত ধরবে না বিএনপি

  18-10-2016 12:55PM



পিএনএস ডেস্ক: চীনের সঙ্গে করা ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রশ্ন তোলেনি বিএনপি। অথচ এর আগে বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে যতগুলো চুক্তি করেছে সরকার তার প্রতিটির ক্ষেত্রেই বিস্তারিত তথ্য না জেনেই সমালোচনায় মুখর ছিল বিএনপি।

বর্তমান সরকারের আমলে করা কোনো চুক্তিই দেশের পক্ষে নয়- গত ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এই মন্তব্য করেন। অথচ একই বক্তব্যে তিনি দাবি জানান, ভারতের সঙ্গে করা বেশ কিছু চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশের। অর্থাৎ চুক্তির সব কিছু না জেনেই বিএনপি নেত্রী এই চুক্তিগুলোতে দেশবিরোধী বলেছেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিক সবগুলো চুক্তি নিয়েই সমালোচনায় মুখর বিএনপি। এমনকি সমুদ্র সীমা নিয়ে মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতের রায় বাংলাদেশের পক্ষে আসায় সরকারকে একবার অভিনন্দন জানিয়েও পরে তা ফিরিয়ে নিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এই বাস্তবতায় চীনের সঙ্গে সরকারের করা চুক্তিগুলো নিয়ে নজিরবিহীনভাবে নীরব বিএনপি। বরং দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিং এর সফরের পরদিন নানা আলোচনায় চীনকে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু ও এসব চুক্তির ফলে বাংলাদেশ লাভবান হবে-এমন বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি নেতার। অথচ চুক্তিগুলোর বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করেনি সরকার।

বিস্তারিত না জেনেই চুক্তির প্রশংসা করার কারণ জানতে চাইলে বিএনপির একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে বলছেন, চীন বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু। এসব সমঝোতা চুক্তি যখন প্রকল্প হিসেবে চূড়ান্ত করার আগে তারা এ নিয়ে নেতিচাবক কিছু বলবেন না।

দুইদিনের বাংলাদেশ সফরে এসে শনিবার সকালে ঢাকা ছাড়েন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। জিনপিং দ্বিতীয় চীনা রাষ্ট্রপতি যিনি বাংলাদেশ সফর করলেন।

এই সফরে উপকূলীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণসহ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও চীন। এর মধ্য যে ১২টি ঋণ ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং দুই দেশের সরকারের মধ্যে ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক। এছাড়াও দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও ১৫টি চুক্তি হয়েছে। টাকার অংকে দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় মিলিয়ে চার হাজার কোটি ডলারের বেশি।

এর আগে যতগুলো চুক্তি হয়েছে তার সবগুলো সংসদে উত্থাপনের জোরালো দাবি ছিল বিএনপির। কিন্তু চীনের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো সংসদে তোলা বা আলোচনার কোনো দাবি করেননি দলের নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কাছে প্রশ্ন ছিল, চীনের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে বিএনপির বিরোধিতা না করার কারণ কী। জবাবে তিনি বলেন,‘চীন আমাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত বন্ধু। বাংলাদেশের উন্নয়নে বহুদিন ধরে দেশটি নানাভাবে ভুমিকা রেখেছে। যে কারণে আমরা দেশটির রাষ্ট্রপতির সফরকালে সম্পাদিত চুক্তিগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।’

এই নেতার বলেন,‘এখন তো মাত্র সমঝোতা স্মারক হয়েছে। এটাই তো সব কিছু নয়। আর এখন তো আমরা বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানতে পারিনি। তাই চুক্তির উপর ভিত্তি করে প্রকল্প তৈরি করা হবে। তখন বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত দেখেশুনে কথা বলার সুযোগ আছে।’

কিন্তু এর আগে বিস্তারিত না জেনেই যে বিএনপি বিভিন্ন চুক্তিকে দেশবিরোধী বলেছে, সে বিষয়ে খন্দকার মোশাররফের কোনা বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চীনের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের সাক্ষাত নিয়ে তারা বেশ উৎফুল্লু।তাদের অভিযোগ,বিদেশিদের কাছ থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করতে সরকার নানা ষড়যন্ত্র করেছে।কিন্তু এরপরও আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপির গুরুত্ব কমেনি।তাই যেভাবেই হোক তারা এই সুসম্পর্ক ধরে রাখতে চান।যে কারণে আপাতত চীনের সঙ্গে চুক্তিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই চুক্তিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবে বিএনপি। খন্দকার মোশাররফ হোসেনও বলেন, ‘বিস্তারিত জানান পর খারাপ কিছু দেখা গেলে বিএনপি অবশ্যই এ নিয়ে কথা বলবে।’

চীনের রাষ্ট্রপতি দেশ ছাড়ার পর চুক্তির বিষয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কোনো প্রকল্প অঙ্ক দিয়ে কিন্তু মাপা যাবে না।দেখতে হবে এটা দেশের জন্য কতটুকু ভালো কিছু হচ্ছে সেটা। তবে চীনের সঙ্গে এই চুক্তি বা বিনিয়োগকে আমি কোনোভাবে ডিসক্যারেজ করছি না। ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে এটাই আশা করি।’

চীনের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ আছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমানের।তিনি চীনের রাষ্ট্রপতির সফরকে ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করলেন। তিনি বলেন,‘চীন বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুরাষ্ট্র। তাদের ওপর আস্থা রাখা যায়। সুতরাং এই সফর ও চুক্তি নিয়ে নেতিবাচক কোনো কথা বলতে চাই না।’ সূত্র: ঢাকাটাইমস

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন