ফের আন্দোলনের ছক বিএনপির

  04-12-2016 07:33AM

পিএনএস ডেস্ক : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির অংশগ্রহণবিহীন দশম সংসদ নির্বাচনের দিনকে 'গণতন্ত্র হত্যা দিবস' হিসেবে পালন করে আসছে দলটি। এ দিবসকে ঘিরে টানা দুই বছর বড় ধরনের আন্দোলনে ব্যর্থ হলেও এবারও একই দিনকে ঘিরে আন্দোলনের ছক সাজাচ্ছে তারা। তবে এবার হরতাল অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা না থাকলেও এদিন ঢাকায় বড় জমায়তের কথা ভাবা হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র একনেতা জানান, জাতিকে একতরফা নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে আগামী ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে রাজপথে থাকার পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের কারণে তা হচ্ছে না। এখন সবকিছু ঠিক হচ্ছে নাসিক নির্বাচনকে ঘিরে। তাই এই নির্বাচনে ক্ষমসতাসীন দলের অবস্থান এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মকা- দেখে রাজপথে নামার পরিকল্পনা আছে দলটির। যদি নাসিকে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে আন্দোলনের ধরন হবে এক রকম। আর বিগত সময়ের ধারাবাহিকতায় প্রহসনের নির্বাচন হলে অন্য ধরনের কর্মসূচি ঠিক করবে বিএনপি। তবে ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে। আর এই কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চলবে। প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হবে। পরে কাঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে বিএনপি সূত্রের দাবি।
জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় ধরনের জমায়েত করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এ ছাড়া ঢাকার বাইরেও একাধিক বড় জমায়েতের কথা ভাবা হচ্ছে। বিভাগীয় পর্যায়ে এসব কর্মসূচি সফল করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এর আগে সাংগঠনিক যে দুর্বলতা আছে, তা কাটিয়ে উঠতে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর ধারাবাহিকতায় কয়েকটি জেলায় চলতি মাসের মধ্যেই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব ঠিক করার কথাও বলা হয়েছে। এ ছাড়া যুবদল ও ঢাকা মহানগর বিএনপিকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে কমিটি দেয়ার কার্যক্রমও প্রায় সম্পন্ন করে আনা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রমতে, এবার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনকে টার্গেট করেই ৫ জানুয়ারিতে মাঠে নামতে চায় বিএনপি। কারণ আগামী ফেব্রুয়ারিতে নতুন কমিশন গঠন করা হবে। এর আগে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে। বিভাগীয় ও ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে স্বাধীন কমিশন গঠনে সরকারকে আল্টিমেটামও দেয়া হতে পারে। সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা না হলে এ ইস্যুতে আন্দোলন জোরদার করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এক নেতা বলেন, চলতি মাসেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত পরিচালনা, শহীদ জিয়ার মাজার সরানোর উদ্যোগ এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের আয়োজনে সরকারের একটি উদ্দেশ্যে আছে। আর তা হচ্ছে, ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের বিষয়টি থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে রাখা। কিন্তু ক্ষমতাসনীর বিএনপিকে যত প্রতিকূলতার মধ্যেই রাখুন না কেন গণতন্ত্রের জন্য কোনো আপোষ করা হবে না। সব প্রতিকূলতা আইনি এবং রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করেই একতরফা নির্বাচনের প্রতিবাদে ৫ জানুয়ারি বিএনপি কর্মসূচি পালন করবে।
৫ জানুয়ারিকে বিএনপির কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখনো কোনো কর্মসূচিই চূড়ান্ত হয়নি। তবে ডিসেম্বরের শেষদিকে অথবা জানুয়ারির শুরু থেকে বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার টার্গেট নেয়া হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ওইসব সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন। তার সফরসূচি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে। সবার মতামত নিয়ে চেয়ারপারসন সফরসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন রুখতে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে সহিংস কর্মসূচি পালনের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এরপর প্রায় মাসজুড়ে বিএনপি কঠোর কর্মসূচি পালন করে। পরে কর্মসূচিতে বিরতি দিয়ে বিএনপি সরকারকে প্রায় এক বছর সময় দেয়। কিন্তু ২০১৫ সালের এইদিনকে ঘিরে সমাবেশ করতে বাধা পেয়ে বিএনপি লাগাতার অবরোধের ডাক দেয়। তিন মাসের অবরোধ-হরতাল চলাকালে যানবাহনে পেট্রল বোমা হামলায় বহু মানুষ হতাহত হওয়া ছাড়াও বহু গাড়ি পোড়ানো হয়। এসব নাশকতার ঘটনায় দেশজুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পাহাড় জমে। এরপরও মূলত বিএনপি কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি থেকে সরে আসে। গত বছর অবশ্য এই দিনে অনুমতি নিয়ে ঢাকায় একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছিল বিএনপি।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন