আজ লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বেগম খালেদা জিয়া

  18-10-2017 09:02AM


পিএনএস ডেস্ক: আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসা শেষে আজ বুধবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার দেশে ফেরার খবরে প্রত্যাশার শেষ নেই দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল এবং অঙ্গ সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মীর। তাদের প্রত্যাশা বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে চিকিৎসার জন্য গেলেও সেখানে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সাথে দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন। দীর্ঘ এ সফর শেষে খালেদা জিয়া দেশে ফিরে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নতুন ও আংশিক কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করা ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেবেন এটাই তাদের আকাঙ্ক্ষা।

সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, দলের চেয়ারপারসন দেশে ফিরলে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের আংশিক কমিটিগুলো দ্রুত পূর্ণাঙ্গ হবে। ইতোমধ্যে ছাত্রদল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দলসহ কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। শিগগিরই সেগুলো এবং অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া পূরণ হবে দলের একাধিক শূন্য পদ, বাস্তবায়িত হবে ‘এক নেতা এক পদের’ বিধান। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তৃণমূল পুনর্গঠনও সম্পন্ন হবে বলে তৃণমূল বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠন নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা।

প্রসঙ্গত, চোখ ও পায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৫ জুলাই যুক্তরাজ্যে যান বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ আড়াই মাসের লম্বা সফর শেষে আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় দেশে ফেরার কথা রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালের টানা তিন মাসের আন্দোলনে সফলতা না পাওয়ায় দল পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন বেগম খালেদা জিয়া। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন থানা, জেলা ও তৃণমূল বিএনপি পুনর্গঠন করা হয়। ১১ অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে ৫টির আংশিক নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সংগঠন চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। এমতাবস্থায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা খালেদা জিয়া দেশে ফিরে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নতুন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা দেবেন। দল পুনর্গঠনেও কিছু সিদ্ধান্ত এখনো বাকি রয়েছে বিএনপির। স্থায়ী কমিটির তিনটি শূন্য পদসহ দুইটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক পদ এবং গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদকের পদ এখনো খালি রয়েছে। এ ছাড়া দলাদলি ও কোন্দলের কারণে গত দেড় বছরের বেশি সময়েও সম্পন্ন হয়নি তৃণমূল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে এসব প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।

ছাত্রদল : ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা হয় ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি। সংগঠনটির খসড়া গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, গত বছরের ১৪ অক্টোবর কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ছাত্রদলের শীর্ষ তিন নেতাকেই বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে সদস্য পদ দেয়া হয়েছে। গত ১৪ অক্টোবর সংগঠনের বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণের এক বছর পূর্ণ করেছে। কিন্তু বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের পদটি খালি থাকায় এ ব্যাপারে যোগাযোগ করার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না ছাত্রদল। ফলে নতুন কমিটি নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায় ছাত্রদলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাও হতাশার মধ্যে সময় পার করছেন। কেননা হচ্ছে হবে করেও কমিটি হচ্ছে না। ছাত্রদলের কমিটি না হওয়ায় অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের কমিটিগুলোও হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

যুবদল : গত ১৭ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী যুবদলের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই সাথে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তর এবং সাত সদস্যবিশিষ্ট মহানগর দক্ষিণের আংশিক কমিটিও ঘোষিত হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, যুবদলের কমিটি চূড়ান্ত। ম্যাডাম দেশে এলে ২৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

স্বেচ্ছাসেবক দল : গত বছরের ২৭ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাত সদস্যবিশিষ্ট নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া গত ১ মে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষিত হয়। এ নিয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, কমিটি প্রায় চূড়ান্ত। ম্যাডাম দেশে এলে স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

মহিলা দল : গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তিনটি কমিটিই পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফিরলে এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে বলে নেতাকর্মীদের আশা।
শ্রমিক দল : কোন্দলে বিপর্যস্ত জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলও চলছে মেয়াদহীন কমিটি দিয়ে। শ্রমিক দলের সপ্তম কাউন্সিল হয় ২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল। এ কাউন্সিলে আনোয়ার হোসাইনকে সভাপতি ও নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও সাত দিন পর এ কমিটি ঘোষণা করায় এর গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। কমিটিতে যোগ্যদের স্থান না হওয়া এবং এ নিয়ে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। ২০১৪ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর আনোয়ার-নাসিম কমিটিকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে ২০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে বিদ্রোহীরা। কমিটিতে নাজিম উদ্দিনকে সভাপতি ও আব্দুল খায়ের খাজাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

এ ছাড়া দেড় যুগের বেশি আগের কমিটি দিয়ে চলছে কৃষক দল। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালের ১৬ মে তৃতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কৃষক দলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। অন্য দিকে সর্বশেষ ২০১১ সালে মৎস্যজীবী দলের তিন সদস্যবিশিষ্ট বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি এখনো বহাল রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে তাঁতী দলও। ২০০৫ সালের প্রথম দিকে আব্দুল মালেককে সভাপতি ও শাহ নেছারুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে ওলামা দলের কমিটি করা হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতারা দলীয় মিলাদ ও দোয়া মুনাজাতের মধ্যেই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছেন। এর বাইরে ওলামা দলের তেমন কোনো কর্মসূচি দৃশ্যমান নয়।

ঢাকা মহানগর বিএনপি : গত ১৯ এপ্রিল ঢাকা মহানগর বিএনপিকে উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রায় সাত মাস পার হলেও থানা এবং ওয়ার্ড কমিটি দূরে থাক মহানগর কমিটিই এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। নেতাকর্মীদের আশা, খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে দুই কমিটিই পূর্ণাঙ্গ হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল গণমাধ্যমকে বলেন, মহানগর দক্ষিণের কমিটি চূড়ান্ত। ম্যাডাম দেশে এলেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে দক্ষিণের অধীন থানা ও ওয়ার্ড কমিটিও ঘোষণা করা হবে। মহানগর উত্তরের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, কমিটি চূড়ান্ত। খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন