জামায়াত বিএনপির সঙ্গে থাকলেও আপত্তি নেই ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে’র

  13-10-2018 10:00AM


পিএনএস ডেস্ক: নিরপেক্ষ সরকারসহ সাত দফা দাবিতে বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে বিএনপি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্ট জোট। প্রাথমিকভাবে জোটের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। এ ফ্রন্ট সাংবিধানিকভাবে বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে একটি কমিটি গঠন করবে।

এদিকে যুক্তফ্রন্ট এতদিন বলে আসছিল স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দল বা ব্যক্তির সঙ্গে কোনোভাবেই ঐক্য হবে না। সেই অবস্থান থেকে তারা সরে এসেছে। নতুন সিদ্ধান্ত হচ্ছে, জোটভুক্ত অন্য কারও সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধীরা থাকলেও তাদের আপত্তি নেই। শুধু সরাসরি তারা স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে এক টেবিলে বসবে না। এর
মাধ্যমে মূলত ২০-দলীয় জোটের অন্যতম বন্ধু দল জামায়াত পরোক্ষভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক হিসেবে দাবিদার হয়ে গেল।

গতকাল শুক্রবার যুক্তফ্রন্ট নেতা ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। কর্মসূচি ঠিক করতে আজ শনিবার বেলা ৩টায় বৈঠক হবে গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের বাসায়।

বৈঠকে সব চূড়ান্ত হলে আগামীকাল রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে জোটের নতুন নামসহ সাত দফা দাবি, ১১ লক্ষ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে বলে বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা জানান।

এর আগে ৭ ও ৮ অক্টোবর দলগুলোর নেতারা আ স ম আবদুর রব ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসায় দুটি বৈঠক করেন। যুক্তফ্রন্ট, গণফোরাম ও বিএনপির ঘোষিত দফা ও দাবি থেকে সমন্বিতভাবে ৭টি দফা ও ১১টি লক্ষ্য ধরে কর্মসূচি ও ঐক্যের রূপরেখা এবং নির্বাচনী জোটের নাম নির্ধারণে নেতারা বৈঠক করেন।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর, বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা ওমর ফারুক, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, শহীদুল্লাহ কায়সার, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা জানান, আসন বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে ৭ দফা ও ১১ লক্ষ্য তুলে ধরা হলে বিকল্পধারার পক্ষ থেকে সংসদে আসন বণ্টনের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে ঐক্য নয় যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে অন্যদের যুক্তিসঙ্গত বাধার মুখে বিকল্পধারার প্রতিনিধি মাহী বি চৌধুরী তার অবস্থান থেকে সরতে বাধ্য হন। এ অবস্থায় লক্ষ্যের সঙ্গে শুধু স্বাধীনতাবিরোধীদের ঐক্য নয় যুক্ত হবে। এরপর পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সেখানে বেশিরভাগ দলই আন্দোলনের পক্ষে জনমত তৈরিতে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা বলেন, বিকল্পধারা নিয়ে এতদিন যে সন্দেহ ছিল, সেটা কেটে গেছে। সবাই ৭ দফা ও ১১ লক্ষ্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। আজ শনিবার ড. কামালের বাসায় বৈঠক হবে। এ বৈঠকে কর্মসূচিসহ সবকিছুর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে কাল রবিবার রাজধানীর কোনো একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করা হতে পারে।

গণফোরাম কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা। এ লক্ষ্যে ধারাবাহিক বৈঠক করছি। যে কোনো সময় জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।

৭ দফা : এক. সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত। দুই. যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা। তিন. নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, চার. শিক্ষার্থী-সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল, পাঁচ. নির্বাচনের ১০ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন। ছয়. দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা সাত. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা এবং নতুন কোনো মামলা না দেওয়া।

এ ছাড়াও ১১ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এক. স্বাধীনতাবিরোধী ছাড়া মুক্তি সংগ্রামের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন, দুই. ৭০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের যুগোপযোগী সংশোধন। তিন. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা, চার. দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা, পাঁচ. দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, ছয়. সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চয়তার বিধান করা, সাত. জনপ্রশাসন, পুলিশপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কারসাধন, আট. রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক স্বচ্ছতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা নিশ্চিত, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, নিম্নআয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবনমান নিশ্চিত এবং দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন-মজুরি কাঠামো নির্ধারণ।

নয়. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহার করতে না দেওয়া, দশ. সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয় এ নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ, এগারো. বিশ্বের সব নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমরসম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন