বোল্ট-মেজবাহর ‌‌‌‘পার্থক্য’ ১ সেকেন্ডেরও ‌‌কম?

  23-07-2017 05:37PM

পিএনএস ডেস্ক : মোনাকোর ডায়মন্ড লিগে উসাইন বোল্ট আবারও ১০ সেকেন্ডের নিচে ১০০ মিটার দৌড় শেষ করলেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আগে বোল্ট তাঁর শেষ দৌড়ে ৯.৯৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে পেছনে ফেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইসিয়া ইয়ং আর দক্ষিণ আফ্রিকার আকানি সিম্বিনেকে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়া দুজনের টাইমিং যথাক্রমে ৯.৯৮ আর ১০.০২ সেকেন্ড।

এবার দৃষ্টিটা ফেরানো যাক বাংলাদেশের দিকে। গতকাল শনিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ১৩তম সামার অ্যাথলেটিকসের ১০০ মিটার ইভেন্টে ১০.৮০ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথম হয়েছেন মেজবাহ আহমেদ। বাংলাদেশের দ্রুততম মানব মেজবাহ টাইমিংয়ে বিশ্বের দ্রুততম মানব বোল্টের চেয়ে পিছিয়ে আছেন ‘মাত্র’ দশমিক ৮৫ সেকেন্ড। ১ সেকেন্ডেরও কম। তবে শুনে বোল্টের সঙ্গে মেজবাহর দূরত্ব যতটা কম মনে হচ্ছে, বাস্তবতা হলো, এই ১ সেকেন্ডেরও কম স্প্রিন্টে যেন হাজার ক্রোশের ব্যবধান! অন্তত সামর্থ্যের দিক দিয়ে।

মেজবাহ নিজেও খুব ভালো করেই জানেন এই পার্থক্যটা কত। খুব সহজ হিসাবে বলে দিলে, ১০০ মিটারের দৌড় ১০ সেকেন্ডের নিচে নেমেছে ১৯৬৮ সালে। আর এখনো বাংলাদেশ পড়ে আছে ১০ সেকেন্ডের ওদিকে। ১০০ মিটার দৌড়ে ১ সেকেন্ড কত বড় পার্থক্য, সেটি এই তথ্য থেকেও বুঝতে পারবেন: ১৮৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লুথার ক্যারি সময় নিয়েছিলেন ১০.৮ সেকেন্ড। যেটি ছিল সে সময়ের বিশ্ব রেকর্ড। আর এই টাইমিংটিকে ১ সেকেন্ড কমিয়ে ৯.৮-এ আনতে পৃথিবীর অ্যাথলেটদের সময় লেগেছিল ৯৬ বছর। ১৯৮৭ সালে করা বেন জনসনের সেই রেকর্ডটা পরে বাতিল করা হয়। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে এখন ৯.৮-এর প্রথম টাইমিংটা কার্ল লুইসের, করেছিলেন ১৯৯১ সালে। ক্যারির ঠিক ১০০ বছর পর!

১০০ মিটার রেকর্ডটা কীভাবে এগিয়েছে, এ সম্পর্কে ধারণা পেলে বুঝতে সহজ হবে, এখানে ১ সেকেন্ড কেন, ১ সেকেন্ডের ১০০ ভাগের ১ ভাগও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

১০০ মিটার দৌড়ে অ্যাথলেটদের টাইমিংটা ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ছিল বহু বছর। মেজবাহ যে টাইমিংটা করলেন কাল, সেই ১০.৮ বিশ্বরেকর্ড ছিল ১৮৯১ সালের। ১৯০৬ সাল পর্যন্ত এই টাইমিং ছিল বিশ্বের সেরা। ১৯০৬ সালে লুথারের রেকর্ড ভেঙে নিজের টাইমিংটাকে ১০.৬ করেন সুইডেনের নট লিন্ডবার্গ। গোথেনবার্গের ট্র্যাকে লিন্ডবার্গের এই রেকর্ডটা অবশ্য বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৯১১ সালে জার্মানির এমিল ক্যাটারার ১০.৫০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০০ মিটার দৌড় জিতেছিলেন।

এই টাইমিংটা দীর্ঘস্থায়ী হয়। ১৯২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চার্লি প্যাডক ১০.৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০০ মিটার জিতেছিলেন। ১০.৪ থেকে টাইমিং ১০.০০-এ নেমে আসতে লেগে যায় আরও ৩৯ বছর। ১৯৬০ সালে পশ্চিম জার্মানির আরমিন হ্যারি সুইজারল্যান্ডের জুরিখে ১০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০০ মিটার দৌড় জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন গোটা বিশ্বকে।

আজকের দুনিয়ায় বোল্টসহ বড় বড় পুরুষ অ্যাথলেট ১০০ মিটার দৌড়ে ১০ সেকেন্ডের নিচে দৌড়ান নিয়ম করেই। কিন্তু ১০০ মিটার দৌড়ের সেরা টাইমিং ১০-এর নিচে নামাতে লেগে গিয়েছিল ৭৭ বছর! ১০.৮০ সেকেন্ড থেকে ১০০ মিটার দৌড়ের টাইমিং প্রথমবারের মতো ১০-এর নিচে নামে ১৯৬৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের স্যাক্রামেন্টোতে ৯.৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে দুনিয়ায় হইচই ফেলে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জিম হাইনস। মানুষ ১০ সেকেন্ডের নিচে ১০০ মিটার শেষ করতে পারবে কি না, এই মানসিক বাধা ভেঙে দিয়েছিলেন তিনি।

৯.৯০-এর নিচে প্রথমবারের মতো টাইমিং নামিয়েছিলেন কানাডার বেন জনসন। ১৯৮৮ সালে সিউল অলিম্পিকে ৯.৮৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০০ নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন। কিন্তু ডোপ পরীক্ষায় দোষী প্রমাণিত হয়ে সে রেকর্ড আর অলিম্পিক সোনা দুটিই হারান জনসন। জনসনের বাতিল হয়ে যাওয়া টাইমিং ৯.৮৩ ধরলেও ৯.৯০ থেকে নিচে নামতে লেগে গিয়েছিল আরও ২০টি বছর।

লুইসের পর অ্যাথলেটদের যেন পেয়ে বসে দ্রুততার নেশা। ১৯৯৪ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের লিরয় বারেল, কানাডার ডনোভান বেইলি, মরিস গ্রিন, টিম মন্টেগোমারি, আসাফা পাওয়েল, জাস্টিন গ্যাটলিন আর উসাইন বোল্টরা টাইমিং ৯.৮৬ থেকে নামিয়ে নিয়ে এসেছেন ৯.৬৩ সেকেন্ডে।

বোল্ট নিজেই ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা তিনটি অলিম্পিকে তিন রকম টাইমিং করেছেন। বেইজিংয়ে তিনি ১০০ মিটার দৌড় শেষ করেছিলেন ৯.৬৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে তিনি নিজের রেকর্ড ভেঙেছেন ৯.৬৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে তিনি সময় নেন ৯.৮১ সেকেন্ড। বোল্টই বার্লিনে বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে নিজের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিলেন ৯.৫৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে। এটাই এখন ১০০ মিটারের রেকর্ড।

এই হলো প্রিন্টের বর্তমান গতি। হাইস্পিডের যে ট্র্যাকে বাংলাদেশ এখনো চালাচ্ছে ১৮৯১ সালের গাড়ি!

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন