খেলা নিয়ে কুবিতে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ; আহত ১০

  15-12-2017 01:33AM

পিএনএস ডেস্ক: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় দিবস ক্রিকেট টুর্নামেন্টের খেলা নিয়ে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ সংঘর্ষে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ দুই গ্রুপের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিজয় দিবস উপলক্ষে শাখা ছাত্রলীগ আয়োজিত ক্রিকেট টুর্নামেন্টে কাজী নজরুল ইসলাম হলের কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদ এবং শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের মধ্যে খেলার আয়োজন করা হয়। খেলা চলাকালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদের সাথে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বজন বরণ বিশ্বাসের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে মাজেদের অনুসারী ও উপ-প্রচার সম্পাদক আহমেদ আলী বুখারী স্বজন বরণকে স্ট্যাম্প দিয়ে কোমরে আঘাত করে। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মী সিফাত ফয়েজ এগিয়ে এলে মাজেদের সহযোগীরা স্বজনের অনুসারী সিফাত ফায়েজ ও আতিকুর রহমানকে স্ট্যাম্প দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে গুরুতর আহত আতিকুর রহমানকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে হলে ফেরার পথে শালবন বিহারের সামনে রেজাউল ইসলাম মাজেদের সহযোগীরা স্বজন বরণের উপর আবার হামলা চালায়। স্বজন বরণ বিশ্বাসকে তারা মাটিতে ফেলে ব্যাট দিয়ে বেধড়ক পেটায়। পরে তাকে গুরুতর আহত আবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, খেলার ভেতরে একটু হাতাহাতি হয়েছে মাত্র। আমরা বসে সমাধান করছি। শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। এ বিষয়ে কেন্দ্রের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, খেলা নিয়ে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়েছে। আমি খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে এ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছি। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

শোক দিবসে ছাত্রদের পড়া বোঝানো কি অপরাধ, কুবি শিক্ষকের প্রশ্ন
ঢাকা: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাতীয় শোক দিবসে ক্লাস নেবার অভিযোগ নিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ওই শিক্ষককে এক মাসের যে বাধ্যতামূলক ছুটির আদেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তা প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সকাল থেকে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর বিবিসির। একই দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরাসহ আরো কয়েকটি সংগঠন। সেই সঙ্গে, ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে রবিবার আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ওই শিক্ষক।
তবে, এ নিয়ে এখনি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে রাজি নন উপাচার্য। ছাত্রলীগ বলছে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে।

ঠিক কী ঘটেছিল সে দিন?
অভিযোগের সময়কাল ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার। সকালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি চলছিল।
ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক এবং ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বিভাগে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন এমন অভিযোগ তোলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই সময়ই ক্লাসে ঢুকে পড়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এরপর থেকেই তারা ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।

তবে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বলছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছিলেন না। বিভাগের একটি কক্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তিনি কিছু বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। ‘আমি একেবারে ইনফর্মাল, ডায়াসেও দাঁড়াই নাই। শিক্ষার্থীদের বেঞ্চে বসে ওদের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম। ওরা এটা ওটা জিজ্ঞেস করছিল আমি উত্তর দিচ্ছিলাম।’ ‘এর মধ্যে হঠাৎ দেখলাম, ক্লাসরুমের পেছন দিকে থেকে ভিডিও করতে করতে একজন ঢুকে পড়ল। এরপরই সামনের দরজা দিয়ে ঢুকলো এখানকার ছাত্রলীগের নেতারা, তাদের সঙ্গে ৩০-৪০ জন আরো’।

‘তারা জানতে চাইল শোক দিবসে আমি ক্লাস নিচ্ছি কেন? আমি বললাম, এটা ক্লাস না, আমি পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছি। আর যে ব্যাচের কথা বলা হচ্ছে, তাদের ক্লাস ১৫দিন আগে থেকে বন্ধ, কারণ ওদের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। সেই হিসেবেও তো ওদের ক্লাস নেবার সুযোগ নেই’, বলছেন মি ভূঁইয়া।

শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও প্রতিক্রিয়া
এরপর ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে ছাত্রলীগ আন্দোলন শুরু করে। গত কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা লাগিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ ঘেরাও করে ভূঁইয়ার স্থায়ী অপসারণ দাবি করে ছাত্রলীগ। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট ওই শিক্ষককে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, এমন অভিযোগে শনিবার থানায় একটি জিডি করেছেন তিনি। তবে, ছাত্রলীগের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ইলিয়াস মিঁয়ার দাবি, শোক দিবসের দিনে ক্লাশ করিয়ে ভুইয়া বঙ্গবন্ধুকে এবং ওই দিনটিকে অপমান করেছেন।

কিন্তু একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পড়া বুঝিয়ে দিলে, সেটি কীভাবে অন্যায় হয়?
এই প্রশ্নের জবাবে ইলিয়াস মিয়া বলছিলেন, ‘আমরা বলছি না এটা অন্যায়। কিন্তু আপনারা সময়টা দেখেন, আমরা বাঙ্গালি জাতি অনুসারে, একদিকে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হইছে, ওইদিকে, টুঙ্গিপাড়ায় নেত্রী শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাইতেছে, আমরা এখানে প্রোগ্রাম করতেছি। এর মধ্যে উনি যা করছে, আমাদের মনে হইছে উনি কাজটা ঠিক করেন নাই’।

‘উনি একঘন্টা পরে ক্লাস করাইতো, দুই ঘন্টা পরে করাইতে পারতো। দুইঘণ্টা বসাই রাখতে পারতো। প্রোগ্রামটা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতো। এটা জাতির জনককে অপমান করা হয় না?’ এই প্রেক্ষাপটে গত ১৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভূঁইয়াকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায়। ভূঁইয়া অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার কাছে বিষয়টির কোনো ব্যাখ্যা দাবি না করেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

সে কারণে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে রবিবার আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন তিনি। এদিকে, একই দাবিতে সকাল থেকে মাঠে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং আরো কয়েকটি সংগঠন। ভূঁইয়ার ছুটির সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষক সমিতি অবরুদ্ধ করেছে উপাচার্য অধ্যাপক আলী আশরাফকে। তবে উপাচার্য দাবী করেছেন ছাত্রলীগের দাবির মুখ তিনি ওই ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তিনি বলছেন, ‘এখানে ছাত্রলীগ তাদের অভিযোগ দিয়েছে। ছাত্রলীগ সেই প্রেক্ষাপটে তিনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা মেরে রাখছে, ক্লাস পরীক্ষা হতে দেয় নাই। এই অবস্থায় তদন্ত কমিটি এবং সাময়িক ঐ ব্যবস্থাটা নেয়া হয়েছে’।

উপাচার্যের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের কার্যালয়ের করিডোরে অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি। এ কারণে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি তিনি। এদিকে, ওই সময়কার ক্লাশরুমের যে ভিডিও চিত্র ধারণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করছিলেন ভূঁইয়া, সেটি পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যপক আলোচনা।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন