ফাইনালে ইতিহাস গড়বে ক্রোয়েশিয়া

  14-07-2018 10:36AM

পিএনএস ডেস্ক: আগামীকাল ১৫ জুলাই রোববার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে নামবে ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া।
তরুণ প্রজন্মের ফ্রান্সের কাছে এবার হাতছানি থাকছে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ট্রফিতে চুমু খাওয়ার। এর আগে ১৯৯৮ সালে ঘরের মাঠে প্রথম ও একমাত্র শিরোপা জিতেছিল ফরাসিরা। অন্যদিকে সেই আসরেই প্রথমবার সুযোগ পেয়ে চমক দেখানে ক্রোয়েটরা খেলেছিল সেমিফাইনালে। ফলে রাশিয়ায় ইতিহাস তৈরিতে নজর থাকবে ১৯৯১ সালে স্বাধীন হওয়া দেশটির।

তাদের সামনে আর একটি ধাপ, ম্যাচ ও বাধা। স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য একটি জয়। ব্যাস, তারপরেই বুক চিতিয়ে ঘরে ফেরা। ক্রোয়োশিয়ার ফুটবলাররা কি পারবে ফ্রান্স নামক বাধা ডিঙিয়ে বিশ্ব ফুটবলের সিংহাসনে অধিষ্ঠ হতে?

বিশ্ব মানচিত্রের ছোট দেশটি এখন ইতিহাস সৃষ্টির দ্বারপ্রান্তে। আর্জেন্টিনাকে নাস্তানাবুদ করার পর সুইডেন, রাশিয়া এবং সবশেষ ইংল্যান্ডকে বিদায় করে বিশ্বকাপের ফাইনালে এখন ক্রোয়েশিয়া। প্রথম শিরোপা জয়ের পথে বাধা এখন কেবলই ফ্রান্স। জন্মের ৩৭ বছরের মধ্যে ইতিহাসে এখন ক্রোয়েশিয়া। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৪ সালের মধ্যবর্তী সময়কালে ফিফা স্বীকৃতপ্রাপ্ত দল হিসেবে ব্যানোভিনা অব ক্রোয়েশিয়া এবং স্বাধীন রাষ্ট্র ক্রোয়েশিয়া ১৯ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্টে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৫ সালে ক্রোয়েশিয়া যুগোস্লাভিয়ার সঙ্গে একীভূত হলে দলটি বিলুপ্ত হয়। ১৯৪৫ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ক্রোয়েশিয়া পৃথক দল হিসেবে প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশগ্রহণ করেনি। তখন ক্রোয়েশীয় খেলোয়াড়রা যুগোস্লাভিয়া জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গনে অংশগ্রহণ করে।

ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা এ ফুটবল। যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভের পরেই আধুনিককালের ক্রোয়েশীয় ফুটবল দল ১৯৯১ সালে গঠন করা হয়। ১৯৯৩ সালে ফিফা ও উয়েফার সদস্যপদ লাভ করে। এরপর ফুটবলে এগিয়ে যেতে থাকে দলটি। ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ সালে ফিফা কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে বছরের সেরা অগ্রসরমান দলের মর্যাদা পায় ও পুরস্কৃত হয় দেশটি। শুরুতে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ক্রোয়েশিয়ার অবস্থান ছিল ১২৫তম। কিন্তু ১৯৯৮ সালের ফিফা বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করে ও র‌্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় স্থানে চলে আসে, যা ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে পরিবর্তনশীল দলে রূপান্তরিত হয়।

মাত্র ২৪ বছর আগে এ ক্রোয়েশিয়া ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশেরও নিচে ছিল। এ দুই যুগে ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল ঘুরে গেছে ৩৬০ ডিগ্রি। ১৯৯৪ সালে ১৬৭ দেশের মধ্যে সে বছর বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিং ছিল ১১৯। ৬ ধাপ পেছনে ছিল ক্রোয়েশিয়া ১২৫। তার আগের বছর ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিং ছিল ১১৬ আর ক্রোয়েশিয়ার ছিল ১২২। ৯৪-এর শেষদিক থেকেই ধূমকেতুর মতো উত্থান শুরু হয় তাদের। তারই ধারাবাহিকতায় রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে এখন ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বকাপে তাদের চমকপ্রদ নৈপুণ্যে ফুটবল সমর্থকদের কাছে এখন অনেক প্রিয় নাম ক্রোয়েশিয়া। লুকা মদ্রিচ, রাকিতিচ অথব মানজুকিচদের এখন সবার পরিচিত নাম।

এদিকে ১৯৯৮ সালে সেমিফাইনাল খেললেও ক্রোয়েশিয়াকে কিন্তু পরের আসরগুলোতে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০০২ এবং ২০০৬ বিশ্বকাপে তারা বিদায় নিয়েছিল গ্রুপপর্ব থেকেই। ২০১০ সালে র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দশে থাকলেও বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। ২০১৪ বিশ্বকাপে খেললেও ক্রোয়াটদের বিদায় নিতে হয়েছিল গ্রুপপর্ব থেকে।

এবার তারা ছাড়িয়ে গেছে ১৯৯৮ সালের সাফল্যকেও। এ প্রথমবারের মতো লুকা মদ্রিচ, ইভান রাকিটিচরা ক্রোয়েশিয়াকে তুলে এনেছেন বিশ্বকাপের ফাইনালে। ১৫ জুলাই ফ্রান্সকে হারাতে পারলে প্রথমবারের মতো নয় শুধু, বিশ্বকাপে নতুন চ্যাম্পিয়ন হবে ক্রোয়েশিয়া। স্বাধীনতার ২৭ বছরের ব্যবধানে বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলবে তারা।

ইউরোপ মহাদেশের একটি দেশ ক্রোয়েশিয়া। দেশটির রাজধানী জাগ্রেব। ইউরোপের দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত এ জায়গাটির সরকারি নাম রিপাবলিক অফ ক্রোয়েশিয়া। প্রায় হাজারেরও বেশি নানা আকৃতির দ্বীপ রয়েছে ক্রোয়েশিয়ার উপকূলে। তবে এর আশপাশে শুধু জল আর জল। সেখানকার অপূর্ব সুন্দর দ্বীপগুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে আপনার।

ক্রোয়েশিয়ার আয়তন ৫৬ হাজার ৫৯৪ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে দেশটির অবস্থান ১২৬তম। ২০১৬ সালের তথ্যানুযায়ী, দেশটির মোট জনসংখ্যা ৪১ লাখ ৭১ হাজারের কিছু অধিক। ক্রোয়েশীয় দেশটির সরকারি ভাষা। ভাষাটি রোমান বা লাতিন লিপির একটি পরিবর্তিত সংস্করণে লিখিত হয়। একই ভাষা সার্বিয়াতে সার্বীয় ভাষা, বসনিয়াতে বসনীয় ভাষা নামে পরিচিত, এদের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই।

ক্রোয়েশিয়ার বর্তমান সংবিধান ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর গৃহীত হয়। দেশটি ১৯৯১ সালের ২৫ জুন প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ক্রোয়েশিয়ায় খ্রিস্টান জনসংখ্যা সর্বাধিক, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৮৬ শতাংশ।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন