বরগুনায় হানাদারমুক্ত দিবস পালিত

  03-12-2016 04:19PM

পিএনএস, বরগুনা : বিজয় শোভাযাত্রা, শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বরগুনা হানাদার মুক্ত দিবস। শিশু কিশোর সংগঠন সাগরপাড়ী খেলাঘর আসরের আয়োজনে শনিবার সকাল সাড়ে সাতটায় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি বিজয় শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে শেষ হয়।

শোভাযাত্রা শেষে বিভিন্ন সংগঠন স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুর রশিদ মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা কমরেড আবদুল হালিম, আনোয়ার হোসেন মনোয়ার, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এডভোকেট মো. শাহজাহান, জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী নাজমা বেগম, মুক্তিযোদ্ধা সুখরঞ্জন শীল, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মতিয়ার রহমান মাস্টার, কেন্দ্রীয় খেলাঘরের প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্তরঞ্জন শীল, আবদুল বারেক মিয়া, মনির হোসেন কামাল, এডভোকেট সেলিনা আক্তার, জাফর হোসেন হাওলাদার ও মনিরুজ্জামান নশা। সভাপতিত্ব করেন, সাগড়পাড়ি খেলাঘরের সভাপতি বেবী দাস।

সবশেষে খেলাঘরের ভাই বোনেরা মিষ্টি বিতরনের মাধ্যমে হানাদার মুক্ত দিবসে উল্লাস প্রকাশ করেন। মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সত্তারের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর বরগুনা জেলা হানাদারমুক্ত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষনের পরে বরগুনার মুক্তিকামী সহস্রাধিক তরুন বাঁশের লাঠি, গুটি কয়েক রাইফেল, বন্দুক নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলো। এরই মধ্যে পাকবাহিনী দুর্বল প্রতিরোধকে উপেক্ষা করে পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালী জেলা দখল করে ফেলে। ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞ ও ক্ষয়-ক্ষতির ভয়ে বরগুনার মুক্তিযোদ্ধারা এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। কেননা পাক বাহিনীর মোকাবেলা করার মতো তাদের কোন অস্ত্র ছিলনা। পাক বাহিনী বিনা বাধায় বরগুনা শহর দখল করে ফেলে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বরগুনার বিভিন্ন থানা ও তৎকালীন মহাকুমা সদরে পাক বাহিনী অবস্থান করে পৈশাচিক নারী নির্যাতন ও নির্বিচারে গণহত্যা চালায়।

২৯ ও ৩০ মে বরগুনা জেলখানায় ৭৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সময়ের ব্যবধানে কয়েক মাসের মধ্যেই বরগুনার মুক্তিযোদ্ধারা শক্তি অর্জন করে মনোবল নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন। বরগুনা, বামনা, বদনীখালী ও আমতলীতে যুদ্ধের পরে পাকবাহিনীর সদস্যরা বরগুনা ট্রেজারী ও গণপূর্ত বিভাগের ডাকবাংলোয় অবস্থান নেয়। মুক্তিযুদ্ধে বরগুনা ছিল নবম সেক্টরের বুকাবুনিয়া সাব-সেক্টরের অধীন। মুক্তিযোদ্ধা হেড কোয়ার্টারের নির্দেশ পেয়ে বুকাবুনিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা ৭১ এর ২ ডিসেম্বর বরগুনা বেতাগী থানার বদনীখালী বাজারে আসেন।

রাত তিনটার দিকে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সত্তার খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা নৌকা যোগে বরগুনার খাকদোন নদীর পোটকাখালী স্থানে অবস্থান নেয়। সংকেত পেয়ে ভোর রাতে তারা কিনারে উঠে আসেন। তারা দলে ছিলেন মাত্র ২১ জন। যাদের মধ্যে ১০ জন বরগুনার ও বাকী ১১ জন ছিলো ঝালকাঠির। কারাগার, ওয়াবদা কলনী, জেলা স্কুল, সদর থানা, ওয়ারলেস ষ্টেশন, এসডিওর বাসাসহ বরগুনা শহরকে কয়েকটি উপ-বিভাগে ভাগ করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা যে যার অস্ত্র নিয়ে অবস্থান অনুযায়ী শীতের সকালে ফজরের আজানকে যুদ্ধ শুরুর সংকেত হিসেবে ব্যবহার করেন। আজান শুরুর সাথে সাথে ৬টি স্থান থেকে একযোগে ফায়ার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। দ্বিতীয় দফা ফায়ার করে তারা জেলখানার দিকে এগোতে থাকেন। চারজন সহযোগিসহ সত্তার খান ছিলেন, কারাগার এলাকায়। তারা এসময় জেলখানায় অবস্থানরত পুলিশ ও রাজাকারদের আত্মসমর্পন করিয়ে এসডিও অফিসের সামনে নিয়ে আসেন। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা গিয়ে স্বাধীনতাকামী তৎকালীন এসডিও আনোয়ার হোসেনকে আত্মসমর্পন করান।

দুপুর বারোটার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশাসনিক দায়িত্ব এসডিওকে সাময়িকভাবে বুঝিয়ে দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে বুকাবুনিয়া সাব-সেন্টারে চলে যান।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন