এমপি লিটন হত্যা পরিকল্পনায় সংঘটিত যারা

  23-02-2017 05:29PM

পিএনএস, গাইবান্ধা : গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলায় আরেক সহযোগী আনোয়ারুল ইসলাম রানাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে গাইবান্ধা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম।

এছাড়া লিটন হত্যা মামলায় গ্রেফতার সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানের গ্রামের বাড়ি থেকে বুধবার রাত ১ টার দিকে একটি পিস্তুল, ৬ রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করেছে পুলিশ। আরও অস্ত্র উদ্ধার পুলিশি অভিযান চলছে বলে পুলিশ সুপার জানান।

পুলিশ সুপার বলেন, লিটন হত্যায় গ্রেফতার জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সাবেক এমপি কর্ণেল এ কাদের খানের পরিকল্পনায় আব্দুল হান্নান, মেহেদী হাসান, শাহীন ও রানা হত্যাকা- সংঘটিত করে। এরআগে, আনোয়ারুল ইসলাম রানা ছাড়া বাকি তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেয়া আনোয়ারুল ইসলাম রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকেও ১৬৪ ধারার জবানবন্দীর জন্য আদালতে হাজির করা হবে। রানা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ভোলারায় কাজীর ভিটা গ্রামের তমশের আলীর ছেলে।

রিমান্ডে নেয়া কাদের খান জিজ্ঞাসাবাদে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা হত্যাকান্ডে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, কাদের খানের দেয়া তথ্যানুযায়ি গভীর রাতে তার বাড়ির উঠানের মাটি খুঁড়ে লুকিয়ে রাখা পিস্তল, গুলি ও ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়েছে। দশ দিন রিমান্ডের সবেমাত্র একদিন অতিবাহিত হয়েছে। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানানো যাবে।

এদিকে বুধবার দুপুর থেকে রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বশির আহমেদের নের্তৃত্বে জেলা পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলামসহ পুলিশের উদ্ধর্তন কর্মকর্তার একটি দল ও ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট কাদের খানের সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপরহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপরহাটি (খানবাড়ী) গ্রামের বাড়ি পুরো বাড়ি ঘিরে রেখে তল্লাসি চালায়। এছাড়া বাড়ির সামনের চারটি পুকুরের পানি মেশিন দিয়ে সেচে অভিযান শুরু করেন।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘কর্ণেল আবদুল কাদের খানের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী তার বাড়ির উঠানের মাটির নিচে রাখা একটি পিস্তুল, ছয় রাউ- গুলি ও ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া পিস্তুলটি এমপি লিটন হত্যাকান্ডে ব্যবহার করেছিল হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া কিলাররা। কাদের খান একটি পিস্তুল ও ১০ রাউন্ড গুলি আগেই জমা দিয়েছেন। এ নিয়ে দুটি অস্ত্র পুলিশের কাছে রয়েছে। আরও একটি অস্ত্র উদ্ধার করতে পুলিশি অভিযান চলছে।

কিলারদের প্রশিক্ষণ : সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি খান বাড়িতে কাদের খানের একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে। এই বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল গ্রেফতারকৃত কিলার শাহীন। পুলিশকে দেয়া তাদের তথ্য অনুযায়ি জানা গেছে, এই বাড়িতেই কিলারদের পিস্তল চালানো এবং কিলিং মিশন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিত কাদের খান। বাড়ি থেকেই অস্ত্রসহ গিয়ে এমপি লিটনকে হত্যা করা হয়।

সেদিন ওই পিস্তলটির ম্যাগাজিনে ৬ রাউন্ড বুলেট ছিল। কাদের খানের বাড়িতে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে অসাবধানতাবশতঃ পিস্তল থেকে একটি বুলেট বেরিয়ে গিয়ে দেয়ালে লাগে। পুলিশের অভিযানকালে ঘরের দেয়ালে বুলেটের আঘাতের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। ওই পিস্তলের ম্যাগাজিনে থাকা ৫ রাউন্ড গুলি ছুঁড়েই খুনিরা এমপি লিটনকে হত্যা করে।

চন্দনকে খুঁজছে পুলিশ : সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বামনডাঙ্গার মনমথ গ্রামের সুশীল সরকারের ছেলে চন্দন সরকারকে পুলিশ এখন খুঁজছে। কাদের খানের জব্দ করা মোবাইল ফোন ট্যাকিং করে তার সাথে এই চন্দন সরকারের ঘনিষ্ট যোগাযোগ সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ।

সেই মুলত : খুনের দিন এমপি লিটনের বাড়িতে তার অবস্থান এবং অনুকুল পরিবেশের খবর মোবাইল ফোনে খুনিদের জ্ঞাত করে। তার তথ্যমতে কিলিং মিশন সফল করে খুনিরা। উল্লেখ্য, অত্যান্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান চন্দন সরকার উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। ফলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দল থেকে বহিস্কার করে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এই ক্ষোভে সে সুন্দরগঞ্জে এমপি বিরোধী গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে লিখিত অভিযোগ প্রদান এবং সভা, সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে এমপির চরম বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। কাদের খানকে গ্রেফতার করার পর থেকেই সে এলাকা থেকে গা ঢাকা দেয়। ফলে পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজেও পাচ্ছে না।

অবৈধ অস্ত্রের খোঁজে পুলিশ : পুলিশ কাদের খানের অবৈধ অস্ত্রের সন্ধানে ব্যাপক তল্লাসী ও জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে লাইসেন্স করা পিস্তল এবং ১০ রাউন্ড বুলেট জব্দ করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় আরেকটি লাইসেন্স বিহীন পিস্তল বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে আরও আরেকটি লাইসেন্স বিহীন পিস্তল এবং অন্যান্য অস্ত্র তার কাছে রয়েছে। তবে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে এব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তারা জানতে পারবে বলে পুলিশ আশাবাদি।

কাদের খান? সুন্দরগঞ্জের এলাকার সর্বস্তরের মানুষের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, কাদের খানের পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল ময়মনসিংহ জেলায়। তার দাদা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি গ্রামে জমি কিনে পরিবার-পরিজনসহ বসবাস শুরু করেন। কাদের খানের পিতা হাসেন আলী খা। তার স্ত্রী ডাঃ নাসিমা আকতার একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ হিসেবে সরকারি চাকরি করছেন। সেনা বাহিনী থেকে কাদের খান কর্ণেল হিসেবে অবসর নেয়ার পরে বগুড়ার রহমান নগর দিলাদারপাড়ায় গরিব শাহ ক্লিনিক নামে একটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে স্বামী-স্ত্রী দ’জনেই ক্লিনিকটি পরিচালনা করেন।

ক্লিনিকের সাথেই তিনি বসতবাড়িও নির্মাণ করে বগুড়াতেই বসবাস শুরু করেন। এর পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতেও একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে সেখানে তিনি মাঝে মধ্যে এসেই বসবাস করতেন। এ সময়টিতে জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সাথে পূর্ব পরিচয়ের সুত্র ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতি শুরু করেন মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে জামায়াত প্রার্থী সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুল আজিজকে পরাজিত করে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন