পাম্প গুলোতে তেল নেই, ট্রেন স্টেশনে টিকিট নেই!

  28-02-2017 09:51PM

পিএনএস, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রাপ্ত বাসচালক জামির হোসেনের মুক্তির দাবিতে চলা লাগাতার ধর্মঘটে অচল প্রায় চুয়াডাঙ্গা জেলা। রায় ঘোষণার দিন থেকেই চুয়াডাঙ্গায় নির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। ঐ দিন থেকেই জেলার সকল রুটে বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল। ফলে চরম দূর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা ফেরীঘাট রোডের নিচের বাজারে দেখা যায়, চাষীরা তাদের বরজের পান বাজারে নিয়ে এসে চরম বিপাকে পড়েছেন। ধর্মঘটের কারণে ব্যবসায়ীরা কিনতে চাচ্ছে না তাদের উৎপাদিত ফসল।

এ ব্যাপারে রমজান আলী নামের এক পান ব্যাপারী জানান, আমরা চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা কয়েক লক্ষাধিক টাকার পান কিনে এখন বিপদে পড়েছি। ধর্মঘটের কারণে গাড়ী পাচ্ছি নে। কাঁচামাল পাঠাতে না পারলে কিনে কী করবো। ধর্মঘট হবে সরকারের সাথে- আমরা কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা কী দোষ করেছি, যে আমাদের জিম্মি করে ধর্মঘট করা লাগবে।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিবেশক সমিতির সভাপতি হাজী মো. সালাউদ্দিন চান্নু জানান, লাগাতার ধর্মঘটের কারণে সকল প্রকার মালামালের আমদানী-রপ্তানী বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের গুদামের মালামালও প্রায় শেষের দিকে। আর দু একদিন পরে ভোজ্য তেল, ডাল, চাল, আটা, ময়দা, সূজীসহ নিত্যা প্রয়োজনীয় কোনো মালামালের যোগান দেওয়া সম্ভব হবে না। ব্যবসায়ীদেরকেও দোকান বন্ধ করে পথে বসতে হবে।

অন্যদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলার তিনটি প্রধান স্টেশনের কোনোটিতেই মিলছে না পর্যাপ্ত টিকেট। আসন সংখ্যা তুলনায় যাত্রী চারগুণ ফলে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষের। আসন বিহীন টিকিট পেলেও ট্রেনেই উঠতে পারছেন না অনেক যাত্রী। ফলে বর্তমানে দেশের যোগাযোগের একমাত্র ব্যবস্থা ট্রেন পথেও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার মো. আব্দুল খালেক জানান, যাত্রী তুলনায় ট্রেনের টিকেট অতিসীমিত। তার পরেও আসন বীহিন টিকিটে অনেকে যেতে উৎসাহী হলেও সে ক্ষেত্রে দেখা যায় সময় স্বল্পতার কারণে ট্রেনেই উঠতে পারছেন না অনেকে। প্লাটফর্মে ট্রেন দাড়ানোর সময় ৩-৪ মিনিটের ব্যবধানে অতিরিক্ত সময় ১২-১৫ মিনিট করার পরেও হীমশিম খেতে হচ্ছে। দুরপাল্লার যাত্রীরা আসন না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন বেশি।

এদিকে, সারাদেশে পরিবহণ ধর্মঘট আর নতুন করে দেওয়া শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ডিপো গুলো থেকে জ্বালানী তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। শহরের সবকটি তেল পাম্পের ডিপোতে থাকা ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিন গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে শেষ হয়ে গেছে। ফলে মোটরসাইকেল নিয়ে অফিসে আসা অনেকেই ফেরার পথে বিপাকে পড়েছেন । কেউ কেউ দীর্ঘক্ষণ পাম্পে বসে থেকে নিরাশ হয়ে ফিওে যাচ্ছেন। এমনকি পরিবহণ ধর্মঘটের বিকল্প বাহন সিএনজি, আলমসাধু, নছিমন, করিমনসহ ডিজেল ইঞ্জিন চালিত যানবাহন গুলোতেও তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিকল্প ব্যবস্থায়ও অনেকে গন্তব্যে পৌছুতে পারছেন না। এই অবর্ণনীয় সমস্যা সমাধানে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগী সাধারণ মানুষ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-ট্রাক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম. জেনারেল ইসলাম মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে চুয়াডাঙ্গাসহ বর্তমানে সারাদেশে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। খুলনা বিভাগে পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহারের নির্দেশ থাকলেও শ্রমিকেরা এখন কর্মবিরতী পালন করছে। দাবি না মানলে আরো কঠোর আন্দোলনে যাবে শ্রমিকেরা।

উল্লেখ্য, মাসুদ-মনির নিহতের রায়ের প্রতিবাদে ঐ দিন থেকেই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের শুরু হয় চুয়াডাঙ্গা জেলায়। গত রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় অনির্দষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট পালন করে আসছে খুলনা বিভাগীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। তবে ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) খুলনা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. ফারুক হোসেনের সভাপতিত্বে পরিবহন শ্রমিকদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শ্রমিকরা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে বৈঠক শেষে জানানো হয়। খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ফারুক হোসেন ও খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব সোমবার সন্ধ্যা থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহারে যৌথ ঘোষণাদেন।

কিন্তু সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়নি বলে জানানো হয়। খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক আব্দুর রহিম বক্স দুদু জানিয়েছিলেন, ধর্মঘট প্রত্যাহারে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শ্রমিক ফেডারেশনের কোন প্রতিনিধি অংশ নেয়নি। ওই বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেও সেটি কার্যকর হবে না। এদিকে শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাবে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রাজধানীর সঙ্গে সারাদেশের সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন