বাল্যবিয়ের পাত্র পুলিশ কর্মকর্তা!

  27-04-2017 07:54AM


পিএনএস, কক্সবাজার: পুলিশ কর্মকর্তা পাত্র পেয়ে হাতছাড়া করতে চাচ্ছিল না স্কুল ছাত্রী পাত্রীর পরিবার। রাজি ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তাও। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছিল। বিষয়টি টের পেয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ও প্রশাসন।

তবে ওই বাল্যবিয়ে করতে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি তারা। একটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, ওই পুলিশ কর্মকর্তা চট্টগ্রাম জেলার কোনো থাকার উপপরিদর্শক (এসআই)। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরে ওই এসআইও কেটে পড়েন।

বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পাওয়া স্কুল ছাত্রী সুকর্ণা বড়ুয়া চকরিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড়ুয়াপাড়ার সারনাথ বড়ুয়া ও মঞ্জু বড়ুয়ার মেয়ে।

এই বাল্যবিয়ে বন্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সুকর্ণার বিয়ে ঠিক হওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে তা ঠেকাতে প্রথমে মাঠে নামেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন মঞ্চের সদস্যরা। তাঁরা একযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে স্ট্যাটাস দেন। এর পর তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্যরা। পড়ালেখা করার ইচ্ছা পোষণ করে এই বিয়েতে মত না থাকার কথা জানায় সুকর্ণাও। বিষয়টি জেনে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও এগিয়ে আসেন এই বাল্যবিয়ের কার্যক্রম বন্ধ করতে।

সর্বশেষ টিআইবি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সুকর্ণার মা-বাবাকে নিয়ে দেখা করতে বলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. দিদারুল আলম। নির্দেশ পেয়ে গত মঙ্গলবার রাতে ভূমি অফিসে হাজির হলে দিদারুল আলম বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে সুকর্ণার মা-বাবাকে বোঝাতে সক্ষম হন। এরপর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে মেয়েকে বিয়ে দেবেন না বলে অঙ্গীকার করেন মা-বাবা। এতে বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় সুকর্ণা। নিশ্চিত হয়ে গতকাল বুধবার যথারীতি বিদ্যালয়ে যেতে শুরু করে সে।

স্বাধীন মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক আবুল মাছরুরসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির একাধিক সদস্য জানান, সুকর্ণা মেধাবী ছাত্রী। লেখাপড়া করে সে বড় কিছু হতে চায়। এ কথা জেনেই তাঁরা এই বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে উদ্যোগ নেন। এতে সফলতাও এলো।

টিআইবি-সনাক সদস্য জিয়াউদ্দিন জিয়া বলেন, ‘সুকর্ণার বাল্যবিয়ে ঠেকানোর উদ্যোগ নিতে টিআইবির এরিয়া ম্যানেজার জসীম উদ্দিনের শরণাপন্ন হই। এরপর তিনি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. দিদারুল আলমকে বিষয়টি অবহিত করেন। ’

টিআইবি চকরিয়ার এরিয়া ম্যানেজার মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘বাল্যবিয়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতির খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমাকে ছাত্রীর বাড়িতে পাঠিয়ে মা-বাবাকে তাঁর দপ্তরে হাজির করার দায়িত্ব দেন। সেই মোতাবেক মা-বাবা মঙ্গলবার রাতে হাজির হন। ’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘টিআইবি কর্মকর্তার মাধ্যমে ছাত্রীসহ মা-বাবাকে ডেকে এনে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে। এ সময় মা-বাবা আমার কাছে মুচলেকাসহ অঙ্গীকার করেন যে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের মেয়ে সুকর্ণাকে বিয়ে দেবেন না। ’

টিআইবি কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন আরো বলেন, ‘সুকর্ণা ঠিকমতো স্কুলে যাচ্ছে কি না বা তার বাবা-মা গোপনে তাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কি না স বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হবে।’

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন