ফকিরশাহ পুকুর লাখ মানুষের সুপেয় পানির একমাত্র ভরসা

  19-06-2017 05:40PM

পিএনএস, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : খুলনার পাইকগাছা, কয়রা ও দাকোপ উপজেলার প্রায় ১৮টি গ্রামে লাখ মানুষের সুয়েপ পানির একমাত্র ভরসা ফকিরশাহ পুকুর। জেলা শহর থেকে পাইকগাছা সদরের দূরত্ব প্রায় ৭০কিলোমিটার। আর উপজেলা সদর থেকে গড়ইখালী ইউনিয়ন সদরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। ১৭টি গ্রাম নিয়ে গঠিত গড়ইখালী একটি দূর্গম ও নদীবেষ্টিত ইউনিয়ন। এর এক পাশে ঐতিহ্যবাহী শিবসা নদী, আর অন্য পাশে মিনহাজ নদী, সবশেষ প্রান্তে রয়েছে গাংরখী নদী।

ইউনিয়নের সীমান্ত জুড়েই রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। যার ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ আঘাত হানলেই সর্বপ্রথম আক্রান্ত হয় গড়ইখালীর মানুষ। এক সময় এখানকার বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা নির্বাহ ছিল সুন্দরবনের উপর। যদিও নানামূখি কর্মসংস্থান হওয়ার ফলে এখন আর তেমনটি নাই। বর্তমানে ইউনিয়নে লোকসংখ্যা ৩০ হাজার। প্রত্যান্ত এলাকা হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান এখনো তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। সুন্দরবনের সাথেই ইউনিয়নটির অবস্থান হওয়ায় প্রাকৃতিক দূর্যোগের পাশাপাশি এ ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তী এলাকার মানুষের সমস্যার যেন অন্তনেই। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুতায়নসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষের বর্তমানে প্রধান সমস্যা সুপেয় পানি।

নদীবেষ্টিত ইউনিয়ন হওয়ায় কোথাও কোনো সুপেয় পানির সু-ব্যবস্থা নাই। শতভাগ নলকূপ ব্যবহারের অনুপোযোগী। লবণ আর আর্সেনিকে ভরা ভূ-গর্ভস্থপানি। ফলে পুকুর কিংবা বৃষ্টির পানি ধরে রাখায় একমাত্র সুপেয় পানির সু-ব্যবস্থা। ইউনিয়নে অতিপরিচিত একটি গ্রামের নাম ফকিরাবাদ। এখানে প্রায় শত বছর আগে একটি পুকুর খনন করেন আলমশাহ ফকির বংশধররা। পুরাতন এই পুকুরটি অত্র ইউনিয়নের গড়ইখালী, বাসাখালী, ফকিরাবাদ, আমিরপুর, শান্তা, হুগলারচক, বাইনবাড়িয়া, কানাখালী, পাতড়াবুনিয়া, কুমখালী, বগুড়ারচক সহ পাশ্ববর্তী, সোলাদানা, লস্কর ও চাঁদখালী ইউনিয়ন এবং কয়রা উপজেলার আমাদী, মহেশ্বরীপুর এবং দাকপের চতুরখালী সহ আশপাশ এলাকার প্রায় ১লাখ পরিবারের সুপেয় পানির একমাত্র ভরসা ফকিরশাহ পুকুর।

প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দূর-দূরন্ত থেকে লোকজন পিকআপ, নছিমন, করিমন, ইঞ্জিন ভ্যান, নৌকা এবং গৃহবধুরা প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করছে। স্থানীয় হোটেল রেস্তরার সুপেয় পানির একমাত্র মাধ্যম পুকুরটি। তাছাড়া পুকুরের পানি বিক্রি করে অনেক পরিবার জীবিকা ধারণ করছে।

এ প্রসঙ্গে গড়ইখালী ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বিশ্বাস জানান, পুকুরটি বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তদারকি করা হয়। পানি ভাল রাখার জন্য মাছ চাষ, হাত-পা ধোয়া এবং গোসল করা নিষেধ রয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে অনেক সময় হাস এবং গরু-ছাগল পুকুর এরিয়ার মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং হাস ও গরু-ছাগলের মল-মুত্র বৃষ্টির পানিতে পুকুরে নেমে যায়। এতে পানির মান অনেক সময় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। সীমানা প্রাচীরসহ পুকুরটি সংরক্ষণ জরুরী।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন