ডিমলায় গাইড বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষের দূর্দশায় ত্রাণ বিতরণ

  19-08-2017 08:08PM

পিএনএস, ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি : উজানের ঢলে ও ভারী বর্ষনের ফলে প্রায় ৫ সহ্রারাধিক পরিবার সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছিলো। তিস্তার পানি নেমে গেলেও বসত ভিটে-মাটি হারিয়ে নিরুপায় হয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার গাইড বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। তিস্তা নদীর কড়াল গ্রাসে ও বানভাসী মানুষের দূর্দশা চরমে পৌঁছেছে। তিস্তা নদীর অববাহিকায় নিম্নাঞ্চলগুলি থেকে তিস্তার পানি নেমে গেলেও দুর্দশা কমেনি এ অঞ্চলের মানুষের।

গত বৃহস্পতিবার তিস্তাপাড়ে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার ভাঙ্গন ও পানিবন্দি পরিবারের সদস্যরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। বসতভিটা ও বাড়ীঘর হারিয়ে কিংবা বসত বাড়ীগুলো পানিবন্দি থাকায় তারা চরম বিপাকে পড়েছে। প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার ডালিয়া পাউবো’র গাইড বাঁধে তিস্তার ডান তীরে পলিথিন ও কুড়ে ঘর বানিয়ে কোন মতে জীবন যাপন করেছে। পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকটসহ নানা রোগবালাই। বন্যা কবলিত এলাকায় টিউবয়েল ও লেট্রিনের সংকটসহ দেখা দিয়েছে জ্বর, সর্দি কাশি, আমাশয়,ডায়নিয়াসহ নানা রোগ। বিশেষ করে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এসব পরিবারের সদস্যরা জানায়, হঠাৎ করে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় আমরা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ি। নি:শ্ব রিক্ত হস্তে সব কিছু নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় এখন শুধু মানুষগুলো কোন মতে বেঁচে আছি এই বাঁধের উপর। কখনও খেয়ে কখনওবা না খেয়ে দিনাতিপাত করছি।

সরকারের পক্ষ থেকে যা ত্রাণ পাচ্ছি তা দিয়ে তো সংসার চলে না। সংসারে সদস্য অনেক কিন্তু ত্রান যৎ সামান্য, এ দিয়ে কি আর দিন চলে ? নীলফামারীর ডিমলার টেপাখড়িবাড়ী ইউপি’র উত্তর ও পূর্ব খড়িবাড়ী গ্রামের তিস্তা রক্ষা স্বপন বাঁধের প্রায় ১ হাজার মিটার নদী গর্ভে বিলীণ ও মসজিদ পাড়া গ্রামের মসজিদ সংলগ্ন স্বপন বাঁধটি ভেঙ্গে গিয়ে ৪ টি পরিবারের অবকাঠামো পানির প্রবল স্রোতে ও ভাঙ্গনের কবলে পরে তলিয়ে যায়। ফলে পরিবারগুলি নি:শ্ব হয়ে পড়ে। তেলির বাজারের উত্তর ও পূর্বে ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলি আশ্রয় নিয়েছে গাইড বাঁধে। দ্রুত তিস্তার পানি নেমে যাওয়ায় ভাঙ্গন আতঙ্গে পরেছে তিস্তারপারের মানুষ। টানা ভারীবর্ষনসহ অব্যাহত বৃষ্টিপাত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়ে এ অঞ্চলের মানুষজন। আকর্ষিক স্বপন বাঁধটি পানির তোড়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় ইলিয়াছ উদ্দিন (৬১)’র ৩ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা বসত বাড়ীটি মাটির ভূ-গর্ভে তলিয়ে যায়। ফলে স্বর্বশান্ত হয়ে পরেছে পরিবারটি। ভেঙ্গে যায় উক্ত এলাকায় জাকারিয়া (৩৬), বারেকসহ প্রায় ৮টি পরিবারের বাড়ী-ঘর।

ভাঙ্গনের শিকার পরিবারের সদস্যরা নি:শ্ব রিক্ত হস্তে প্রাণে বেঁচে যান বলেও জানান ইলিয়াছের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। সেই সাথে সরকারের পাশাপাশি বিজিবি’র পক্ষে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এদিকে বৃহস্পতিবার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ী গ্রামে ১৫০ জন বন্যা দূগর্ত এলাকায় পরিবারগুলোর মাঝে ৮ কেজী চাল, ১ কেজী ডাল, ১ কেজী তেল, ২৫০ গ্রাম গুড়, ১ কেজী চিড়া, ১ কেজী লবন ও দেড় লিটার বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করেন অধিনায়ক ৭- ব্যাটালিয়ান, রংপুর এর লে: কর্ণেল মাহফুজ-উল-বারী পিএসসি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কোম্পানী কোমান্ডার সুবেদার মশিউর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রবিউল ইসলাম শাহিন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মিয়ার উদ্দিন প্রমূখ।

এ ব্যাপারে নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডাঃ রঞ্জিত কুমার বর্মণ বলেন, বন্যায় প্লাবিত ও নদী ভাঙ্গন এলাকায় জরুরী মেডিকেল টিম সার্বক্ষনিক স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত রয়েছে এবং মনিটরিং করা হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন জানান, ভাঙ্গন কবলিত স্বপন বাঁধটি দ্রুত সংস্কার করা হবে এবং যারা ভাঙ্গন ও পানিবন্দি হয়ে পড়ে গাইড বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে তাদের সার্বক্ষনিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন