সেই টিটু রায়কে নীলফামারী থেকে গ্রেপ্তার

  14-11-2017 01:37PM


পিএনএস, রংপুর: ফেসবুকে ধর্মকে অবমানোনা করে স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনার মূলহোতা সেই টিটু রায়কে মঙ্গলবার নীলফামারী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো বিস্তারিত কোনো কিছু জানা যায়নি।

শনিবার (১১ নভেম্বর) রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জানিয়েছিলেন, যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে রংপুরের ঠাকুরপাড়া গ্রামে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, সে আইডি উদ্ধার ও তার ব্যবহারকারীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে হামলাকারীদের স্টিল ছবি থেকে শুরু করে ভিডিও ফুটেজও আছে। কারা, কিভাবে হামলা করেছে এবং কারা ইন্ধন দিয়েছে, সবার ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। সেই সঙ্গে যে ফেসবুক আইডি নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত, সেটি আমরা উদ্ধার করার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‘যে ফেসবুক স্ট্যাটাসের কথা বলে এই হামলা চালানো হলো তা এখনও আমাদের হাতে আসেনি। আমরা সেটা পাওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের টিম নারায়ণগঞ্জে টিটুকে আটকের জন্য গেছে। তাকে পাওয়া গেলে ঘটনার রহস্য জানা যাবে।’

তবে তিনি একথাও জোর দিয়ে বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করাতেই পরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা ঠাকুরপাড়া গ্রামে তাণ্ডব চালিয়েছে।’

রংপুরের এই টিটু রায়ের ছবি ব্যবহার করে মো. টিটু নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে বিতর্কিত একটি পোস্ট শেয়ার দেওয়ার অভিযোগ এনে শুক্রবার ঠাকুরপাড়া গ্রামে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধরা।

এদিকে, শনিবার সকালে ঘটনাস্থল ঠাকুরপাড়া গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের অনেকেই ফেসবুকে এ স্ট্যাটাসটি দেখেছেন। তবে ভয়ে কেউ পুলিশের কাছে মুখ খুলতে চাননি। পরে কমলাকান্ত নামে এক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, তাদের গ্রামের বেশিরভাগই গরিব ও নিরক্ষর মানুষ। তাদের বেশিরভাগই দামি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না।

ফলে ফেসবুক সম্পর্কেও অনেকে অবগত নন। তারপরেও এলাকার বাজারে গেলে স্থানীয় কিছু লোক তাদের ফেসবুক থেকে টিটুর নামে দেওয়া স্ট্যাটাস তাদের দেখিয়েছিল। সেখানে টিটুর ছবি দেওয়া ছিল। তবে সেখানে ইংরেজিতে তার নাম টিটু রায় না লিখে মো. টিটু (এমডি টিটু) লেখা ছিল।

এসময় তার কথা সমর্থন করেন স্থানীয় অনেকে। তবে ফেসবুক স্ট্যাটাসটি কার হাতে দেখেছিলেন সেকথা ভয়ে বলতে চাননি তারা। তবে বলেছেন, এই স্ট্যাটাসটিকে ঘিরে মাসখানেক ধরে পাশের এলাকায় বেশ আলোচনা হচ্ছিল এবং টিটুর বিচারের দাবিতে তাদের গ্রামে হামলার হুমকিও তারা দিয়ে আসছিলেন।

পরে ফেসবুক স্ট্যাটাসটিতে দেখা যায়, সেই আইডিটি মো. টিটু নামে দু’মাস আগে খোলা হয়েছে। তবে আইডিতে ঠাকুরপাড়া গ্রামের টিটু রায় ও তার পরিবারের ছবি রয়েছে। ঠাকুরপাড়া গ্রামের বাসিন্দারাও এসব ছবি টিটু ও তার পরিবারের বলে শনাক্ত করেছেন। সেখানে নবী (সা.) কে ব্যঙ্গ করে যে পোস্টটি দেওয়া হয়েছে সেটি রাকেশ মন্ডল নামে জনৈক ব্যক্তির পোস্ট করা। টিটুর আইডি থেকে তা শেয়ার করা হয়েছিল। এই রাকেশ মণ্ডলকেও চিনতে পারেননি স্থানীয়রা।

আবার, হিন্দু হয়েও কেন টিটু রায় মুসলমান নাম ব্যবহার করবেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীও। বিষয়টা এলাকাবাসীর কাছেও রহস্যজনক মনে হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় না আসায় তারা টিটুর ছবি চিনতে পারলেও ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি তার কিনা তা বলতে পারেননি।

এদিকে, যার বিরুদ্ধে কথিত এই স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগ সেই টিটু রায় ফেসবুক ব্যবহার তো দূরে থাক, কোনও পড়ালেখাই জানেন না বলে দাবি করেছে তার পরিবার। এ ব্যাপারে টিটুর ছোট ভাই বিপুল বলেন, ‘টিটু রায়ের নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে বলে আমরা কয়েকদিন আগে শুনেছি। কিন্তু আমার ভাই টিটু তো লেখাপড়া জানে না। সে ফেসবুক চালাবে কী করে?’ বিপুলের দাবি, ‘আমাদের ধারণা অন্য কেউ টিটু রায়ের নামে ফেসবুকে আইডি খুলে এই অপকর্ম করেছে। বিষয়টি তদন্ত করলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।’

টিটু রায়ের মা অনিলা রানী বলেন, ‘সাত বছর ধরে আমার ছেলে বাড়িছাড়া। পাওনাদারের জ্বালায় সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এরপর আর কখনই বাড়িতে আসেনি। আজ অবধি তার সঙ্গে কোনও কথাও হয়নি। দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে আমার দিন গেছে।’টিটুকে ফাঁসিয়ে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে, শুক্রবার হামলার ঘটনার সময় যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছে তাদের মধ্যে ৫৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের সবাই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন