অদম্য কিশোর সিয়াম আহাম্মেদ

  06-12-2017 01:43PM

পিএনএস, শরীয়তপুর: দু'হাতের কব্জি নেই। মাত্র আট মাস আগে উচ্চ ভোল্টেজের ছিঁড়ে পড়ে থাকা তারে জড়িয়ে গুরুতর আহত হওয়ার পর চিকিৎসায় হাত কেটে ফেলতে হয়। তবু ১৭ বছরের কিশোর সিয়াম আহাম্মেদ খান সামনের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত অনুলিখনকারীর সহায়তায় সদ্য সে টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে।

চলতি বছরের ৬ এপ্রিল জোহরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় শরীয়তপুরের নড়িয়ার বিঝারী গ্রামে এই দুর্ঘটনা হয়। আগের দিন বিকেলের ঝড়ে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের তার মাটিতে পড়ে যায়। স্থানীয় অধিবাসীরা শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জেলা কার্যালয়কে মোবাইল ফোনে জানালে সাময়িক বন্ধ রেখে মেরামত না করেই পরের দিন সকালে লাইনটি চালু করে দেওয়া হয়।

পল্লী বিদ্যুতের সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই গাফিলতিতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সিয়ামের পক্ষে একটি রিট মামলায় গত ৩ জুলাই দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট তাকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলেন। সিয়াম ক্ষতিপূরণ পায়নি, বরং পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে লড়ছে।

সিয়ামের বাবা ফারুক আহাম্মেদ খান বলেন, 'ঢাকা মেডিকেলে নিলে ডাক্তাররা আমার ছেলের দুই হাতের কব্জির ওপর থেকে কেটে ফেলেন। আমি একজন গরিব মানুষ। ধারদেনা করে ওর চিকিৎসা করাতে এ পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করেছি। আমি পথে বসে গেছি, আর পারছি না। এত করেও ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছি। হাইকোর্ট থেকে পল্লী বিদ্যুৎকে ৫০ লাখ টাকা দিতে বললেও এখনও কোনো টাকা পাইনি।'

সিয়ামের মা নাজমা বেগম বলেন, 'অনেক কষ্ট হয়। তবু ছেলেকে যেন সমাজে অবহেলা না করা হয়, সে জন্য যতদূর পারব লেখাপড়া করাব।'

নড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল খালেক জানান, কলেজ ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক ও ছাত্ররা মিলে সিয়ামের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, 'সিয়াম মেধাবী ছাত্র। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি। এ বছর আমাদের কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেবে।'

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, 'পড়ালেখার বিষয়ে সিয়াম ও নড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। এইচএসসির টেস্ট পরীক্ষায় লেখার জন্য সিয়ামকে একজন রাইটার দেওয়া হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষায়ও রাইটার দেওয়া হবে।' তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় সমাজসেবা তহবিল থেকে সিয়ামকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। সব সময় ওকে সহযোগিতা করা হবে।

গত ২৬ মে সিয়াম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তার পরিবার ঢাকায় বাবুবাজারের কাছে ভাড়া বাসায় আরও চার মাস থেকে চিকিৎসা নিয়ে নিজ গ্রামে ফেরে। সিয়ামের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য পরিবারটি এখন ভোজেশ্বর ইউনিয়নের মশুরা গ্রামে থাকে।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন