হঠাৎ অসুস্থ আইভীকে ঢাকায় আনা হচ্ছে

  18-01-2018 05:20PM

পিএনএস ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে ঢাকা পপুলার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা আবু সুফিয়ান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তিনতলায় চিকিৎসাধীন সাংবাদিক শরীফউদ্দিন সবুজ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলমসহ আহতদের দেখতে এসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

আওয়ামী লীগ নেতা আবু সুফিয়ান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে তাকে বিকেল ৪টার সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা পপুলার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীসহ আত্মীয় স্বজন রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২৭ দিন ধরে শহরে হকার উচ্ছেদ নিয়ে উত্তেজনা চলছে। এর মধ্যে সোমবার বিকেলে শহরের চাষাঢ়ায় হকারদের আয়োজিত সভায় এমপি শামীম ওসমান এসে সহমত জানান। ওইসময় হকারদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নারায়ণগঞ্জ ডিসি, এসপি ও ব্যবসায়ী সংগঠন চেম্বারকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সময় দেন শামীম ওসমান।

এই আল্টিমেটামের নির্ধারিত সময়ে হকাররা চাষাঢ়ায় গত মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় অবস্থান নেন। খবর পেয়ে মেয়র আইভী তার লোকজন নিয়ে চাষাঢ়ার অদূরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের বিপরীতে সায়ম প্লাজার সামনে এসে অবস্থান নেন। এসময় শামীম ওসমান সমর্থকরা হকারদের নিয়ে মেয়র আইভী ও তার লোকজনদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে উভয় গ্রুপ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় মেয়র আইভী ও তার লোকজনদের উপর হামলা করা হয়। পরে আইভীর লোকজনও শামীম ওসমানের লোকজনের উপর হামলা চালায়। এরপর উভয় গ্রুপ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া করে প্রায় এক ঘণ্টা। পরে পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ উভয় দিকে একাধিক ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে। এতে মেয়র আইভী, সাংবাদিকসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে আইভিসহ আহত অর্ধশতাধিক
নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল তাই সত্য হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে মঙ্গলবার বিকালে বন্দর নগরী রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় অন্তত ৫০ জন। এদের একজন স্বয়ং মেয়র আইভী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ‘হকার মুক্ত ফুটপাথ চাই’ স্লোগান ধরে লোকজন নিয়ে চাষাড়ার দিকে হেঁটে আসছিলেন সেলিনা হায়াত আইভী। এ সময় শামীম প্লাজা থেকে আইভীর লোকজনের ওপর বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পিস্তল উচিয়ে ফাঁকাগুলোও ছোড়া হয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কিতে সড়কে পড়ে যান সেলিনা হায়াত আইভী। তার পায়ে ইটের আঘাত লেগেছে। সেখান থেকে তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, সাংসদ শামীম ওসমানের নির্দেশে এ হামলা চালানো হয়েছে।

ঘটনাস্থল চাষাড়ায় পুলিশ থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকেরা পুলিশের কাছে জানতে চান, তারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। পুলিশ জানায় অর্ডার নেই। তবে পাঁচটার দিকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। সাড়ে ৫টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আসে।

প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আইভি বলেন, আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। আমি শান্তিপূর্ণভাবে হেঁটে আসছিলাম। চাষাড়ার রাইফেলস ক্লাবে বসে শামীম ওসমান আমার ওপর হামলা চালানো নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ পেয়ে তার লোকজন ইট পাটকেল ছোড়ে। এটা নিরস্ত্র লোকের সশস্ত্র হামলা। এ হামলায় সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
সিটি করপোরেশনে একমাত্র নারী মেয়র আইভী অবিলম্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের পদত্যাগ দাবি করেন।

পুলিশের নীরব ভূমিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মইনুল হক বলেন, আমরা ঘটনাস্থলের মাঝখানে থেকে উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। জানমালের নিরাপত্তার দিতে চেষ্টা করেছি। মেয়র আইভী অভিযোগ করেছেন শামীম ওসমানের প্রতি আপনারা সহানুভূতিশীল ছিলেন এর জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করা।

উল্লেখ্য, এর আগে ডিসেম্বরের শেষ দিকে নগরী থেকে হকার উচ্ছেদ করেছিল সিটি করপোরেশন। আর তাদেরকে বসতে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন শামীম ওসমান। সোমবার তিনি মেয়রকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, হকাররা নারায়ণগঞ্জে বসবে, এটা তার অনুরোধ নয়, এটা তার নির্দেশ। মেয়র আইভীও জবাব দেন এভাবে যে, নারয়ণগঞ্জ শহর শামীমের এলাকা না। এখানে তার নির্দেশ চলবে না।

দুই নেতার অনঢ় অবস্থানের কারণে সকাল থেকেই নগরীতে ছিল উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। চাষাঢ়ায় শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান নেয় পুলিশও। বিকাল ৪ টা ১৮ মিনিটে নগর ভবনের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের নিয়ে অবস্থান নেন মেয়র আইভী। ওখান থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আবু সুফিয়ান আইভীর পক্ষে কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন করে চাষাড়ার দিকে আসতে থাকেন। পরে নেতাকর্মীদের নিয়েই আইভী হকার উচ্ছেদ করতে করতে চাষাড়ার দিকে আসতে থাকেন। এসময় আইভীর সঙ্গে সিটি করপোরেশন কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্যরাও ছিলেন।

অপর দিকে হকার এবং শামীম ওসমানের অনুসারীরা অবস্থান নিয়েছিলেন চাষাঢ়া শহীদ মিনারে। আইভী যখন চাষাঢ়া সায়েম প্লাজার সামনে আসেন, তখন শামীম ওসমানের লোকজন আইভীর লোকজনদের বাধা দেয়।
এসময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে মেয়র আইভী, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফুদ্দীন সবুজ ও শামীম ওসমানপন্থী মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুয়েল হোসেনসহ অর্ধশতাধিক নেতা কর্মী আহত হন। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। আর কয়েকশ পুলিশ এসে দুই পক্ষকে দুই দিকে সরিয়ে দেয়।

বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে চাষাঢ়া রাইফেলস ক্লাব থেকে বের হন শামীম ওসমান। নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি চাষাঢ়া সায়াম প্লাজা পর্যন্ত শোডাউন করেন। অপরদিকে আইভী তার নেতাকর্মীদের নিয়ে চাষাড়া ত্যাগ করেন। পরে শামীম ওসমান রাইফেলস ক্লাবে ফিরে যান। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সকল মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়। যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন