শেরপুর হাসপাতালে নবজাতক ও প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

  20-02-2018 06:57PM

পিএনএস, শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা : বগুড়ার শেরপুরে বেসরকারি পালস্ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতক ও প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ফেব্রুয়ারি) জেলা সিভিল সার্জন ডা. সামছুল হকের নির্দেশে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল কাদেরকে প্রধান করে ৩সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অন্যরা হলেন-উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের গাইনি চিকিৎসক ডা. জয়োৎপলা শোকলা ও ডা. মোকছেদা খাতুন। আগামি ৩দিনের মধ্যে তাদেরকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে গত ১৭ফেব্রুয়ারি চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতি পুতুলী ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় এই হাসপাতালের থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ছে।

মঙ্গলবার (২০ফেব্রুয়ারি) উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পশ্চিমপ্রান্তে হামছায়াপুর কাঁঠালতলা এলাকায় গড়ে তোলা পালস জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পর্কে অনুসন্ধান করে জানা যায়, এই হাসপাতালটির সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন পাবনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (চর্ম ও যৌন) ডা. আখতারুল আলম আজাদ ও বগুড়া আর্মি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. তুনারজিনা আখতার মুক্তি। তারাই এই হাসপাতালের মালিকও বটে। সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী তারা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বহুতল ভবনের ফটকের সঙ্গে লাগানো রয়েছে বড় মাপের একটি সাইনবোর্ড। যেখানে লাল রংয়ে ‘পালস জেনারেল হাসপাতাল’ লেখা।

এছাড়াও হাসপাতালের ভবনের সামনে অংশে অন্তত ১৮-২০জন ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম লিখে ছোট ধরনের সাইনবোর্ড সারিবদ্ধভাবে টানিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব চিকিৎসক এই হাসপাতালে আসেন কি-না তাও কারো জানা নেই। আর যেসব চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে তারাও এ ব্যাপারে অবগত কি-না সেটাও কারো জানা নেই।

স্থানীয়রা জানান, এই হাসপাতালে অপারেশনের কাজটা করেন ওই চিকিৎসক দম্পতি। প্রায় সব রোগীর অপারেশনকারী চিকিৎসক এই স্বামী-স্ত্রী! এ কারণে প্রায়ই রোগী মৃত্যুর মত ঘটনাও ঘটে। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় এতোদিন বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছেন। তারা আরও জানান, বেশ কয়েকমাস আগে কাজীপুর উপজেলার এক প্রসূতিকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যথারীতি চিকিৎসক স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রসূতির অপারেশন করেন। কিন্তু তাদের ভুলের কারণে প্রসূতি বেঁচে গেলেও মারা যায় নবজাতক। পরে ম্যানেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাপাচা দেয়া হয়। সেই প্রসূতি এক ব্যাংকারের পরিচিতজন ছিলেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের সাবেক এক কর্মচারী বলেন, শুধু অপারেশনের আগে রোগীকে অজ্ঞানের কাজটি করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। এছাড়া ছোট থেকে বড় এমনকি জটিল থেকে জটিলতর রোগের অপারেশনের কাজটি করেন ওই চিকিৎসক দম্পতি। আর সিজারের কাজটি যেন তাদের কাছে মুড়ি মোয়ার মত ব্যাপার। অপারেশন করতে রোগী মারা গেলে বা মারা যাওয়ার উপক্রম হলে সঙ্গে সঙ্গে সেই রোগীকে আর এখানে রাখা হয় না। অ্যাম্বুলেন্স বা অন্য কোন যানবাহনে করে অক্সিজেন লাগিয়ে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) হাসপাতালে রোগীকে দ্রুত পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর এভাবে অত্যন্ত কৌশলে দাঁয় এড়িয়ে যান ওই চিকিৎসক দম্পতি বলে ওই কর্মচারী দাবি করেন। তবে গত ১৭ফেব্রয়ারি প্রসূতি পুতুলী ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ঘটনার রাতেই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ২১।

উক্ত মামলায় পালস জেনারেল হাসপাতালের মালিক ডা. আখতারুল আলম আজাদ, ডা. লুৎফুন্নেছা, হাসপাতালের ম্যানেজার আমিনুর ও স্টাফ ইউসুফকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ আমিনুর ও ইউসুফকে গ্রেফতার করে।

শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, মামলার অপর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে কারো নাম উঠে আসলে তাকেও এই মামলায় আসামি করা হবে। তারা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এদিকে ঘটনাটি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে হাসপাতালের মালিক ডা. আখতারুল আলম আজাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই পলাতক থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন