বিতর্কিত ভোটে খুলনার মেয়র তালুকদার খালেক

  16-05-2018 12:18AM

পিএনএস ডেস্ক:কেন্দ্র দখল, ভোট জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ আর বিতর্কের মুখে খুলনা সিটি নির্বাচনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ভোটে অবশেষে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বিজয়ী হয়েছেন। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।

খুলনায় মোট ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অনিয়মের অভিযোগে ৩টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। ফলে ২৮৬টি কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে তালুকদার আব্দুল খালেক মোট ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯২০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৯৫৬ ভোট। মঞ্জুর চেয়ে ৬৭ হাজার ৯৬৪ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন খালেক। তবে স্থগিত ৩ কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।

এছাড়া ৩১টির মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ আব্দুর রাজ্জাক, ২নং ওয়ার্ডে মো: সাইফুল ইসলাম (বিএনপি), ৩ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ আব্দুস সালাম (আওয়ামী লীগ), ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সুলতান মাহমুদ পিন্টু ( বিএনপি), ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ডালিম হাওলাদার (বিএনপি), ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এম মাহফুজুর রহমান লিটন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কাজী তালাত হোসেন কাউট, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী আব্দুল ওয়াদুদ, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির মনিরুজ্জামান মনি, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের এস এম খুরশিদ আহম্মেদ টোনা, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের শেখ মোশাররফ হোসেন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে আনিসুর রহমান বিশ্বাস (বিএনপি বিদ্রোহী), ২১ নম্বর ওয়ার্ডে মো: শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন (আওয়ামী লীগ) , ২২ নম্বর ওয়ার্ডে হাসান ইমাম চৌধুরী ময়না (স্বতন্ত্র), ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে মো: শমশের আলী মিন্টু (বিএনপি), ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে মো: আলী আকবর টিপু, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে জেড এ মাহমুদ ডন (আওয়ামী লীগ)।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার পর প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে সঙ্গে নিয়েই খুলনার উন্নয়নে কাজ করার কথা জানিয়ে বিজয়ী প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যখন খুলনার মেয়র ছিলাম, তখন তিনি (নজরুল ইসলাম মঞ্জু) এমপি ছিলেন। সে আমার আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমরা যখন খুলনা শহরে বিভিন্ন আন্দোলনে মাঠে ছিলাম, সে-ও সেই আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল। মাঠ পর্যায়ের একজন নেতা সে- এটা আমি অস্বীকার করি না। কাজেই নির্বাচনে একজন হারবে একজন জিতবে এটা স্বাভাবিক। তবে নগরবাসীর উন্নয়নে আমি তাকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের একসঙ্গেই চলতে হবে।’

খুলনা শহরের উন্নয়নে মঞ্জুর যে কোনো ধরনের সহযোগিতা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘খুলনা শহর আমাদের। আমরা সবাই বসবাস করি। এই শহরটা যদি ভালো থাকে আমরা ভালো থাকব। আমি চেষ্টা করব, যে সমস্ত অঙ্গীকার করেছি সেগুলো বাস্তবায়ন করার।’

ভোটে জালিয়াতি ও কারচুপি বিষয়ে বিএনপির করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তালুকদার খালেক বলেন, ‘সকাল থেকে ৪টা পর্যন্ত আমি বিভিন্ন কেন্দ্রে গেছি। উনি (মঞ্জু) কোন কেন্দ্রে গেছে, আমি জানি না। আমার সঙ্গে অনেক সাংবাদিক ছিল। কোনো কেন্দ্রে আমার চোখের সামনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা একটা সাজানো নাটক। নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা।’

এদিকে ১০০ কেন্দ্রের বোট বাতিল চেয়ে বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছেলে-পেলে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে। এই রকম কেন্দ্রের সংখ্যা ১০০টিরও বেশি হবে। সেসব কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে যে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে, সেটা বাতিল করতে হবে। এরপর সেখানে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে।’

এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে একযোগে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরীর ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

ভোট ঘিরে বড় কোনও সাংঘর্ষিক ঘটনা না ঘটলেও জালভোটের অভিযোগে এদিন দুপুর ১টার দিকে ৩০নং ওয়ার্ডের রুপসা হাইস্কুল ও রুপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দুটির ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এর পর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইকবাল নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটও স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। তবে বড় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এবারই প্রথম খুলনায় মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এছাড়া নগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবারের নির্বাচনে খুলনা সিটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ ও নারী ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন। ভোটকক্ষ ১ হাজার ১৭৮টি।

নির্বাচনে ২৮৯টি ২৫৪টিকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৩৫টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এবার মোট ভোটকক্ষ ছিল ১ হাজার ৫৬১টি। আর অস্থায়ী ভোট কক্ষ ৫৫টি। প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার ছিলেন ৪ হাজার ৯৭২ জন।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া ভোটের তথ্যের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ফলই চূড়ান্ত। যদিও রিটার্নিং কর্মকর্তাই বিজয়ী প্রার্থীকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন