চিকিৎসক নেই, অনুমোদনহীন ক্লিনিকে চলছে সিজার!

  09-03-2021 11:27AM

পিএনএস ডেস্ক: প্রসব বেদনা উঠলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্ত্রীকে রাজগঞ্জ মর্ডান হসপিটালে ভর্তি করেন ওই বাজারের ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। এরপরপরই সিজারের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন ওই নারী। জন্মের পরেই গুরুত্বর অসুস্থ নবজাতককে যশোর সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। তারপর রাত সাড়ে নয়টার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয়।

ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে শিশুর মৃত্যুর খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর বেরিয়ে আসে রাজগঞ্জ মর্ডান হসপিটালটির ভেতরের খবর। অভিযোগ ওঠে অনুমোদনহীন ক্লিনিকটিতে নেই কোন অজ্ঞান বা সিজার করা ডাক্তার এমনকি জরুরি সেবার জন্য একজন মেডিকেল অফিসারও। নামমাত্র অনভিজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে নিয়মিত রোগীর সিজার হয় সেখানে।

এদিকে ক্লিনিকে শিশুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ভিড় জমতে থাকে স্থানীয় কয়েকজন রিপোর্টারের। পরে কর্তৃপক্ষ তাদের ১০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনাটি চাপা দেয়। বিপত্তি ঘটে সেখানে। ১০ হাজার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে ভিতরের খবরটি বেরিয়ে আসে। পরে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খবর নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালে ১০ শয্যার রাজগঞ্জ মর্ডান হসপিটালটি গড়ে উঠলেও তার নেই কোন লাইসেন্স রোগী ভর্তির অনুমোদন। এমনকি লাইসেন্স পাওয়ার আবেদনও করেননি ক্লিনিকের মালিকপক্ষ।

স্থানীয়রা জানান, অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকলেও নিয়মিত রোগী ভর্তি করে সিজার করিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মর্ডান ক্লিনিকের মালিক। প্রকাশ্যে ঘটনাটি ঘটলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না যথাযত কর্তৃপক্ষ। ফলে স্থানীয় কয়েকজন দালাল বাটপারকে ম্যানেজ করে ক্লিনিকটি চালাচ্ছেন মালিকপক্ষ।

মণিরামপুর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অনুপ বসু বলেন, উপজেলায় ১৭টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। যারমধ্যে মনোয়ারা ক্লিনিক, রোকেয়া ক্লিনিক, দি প্যাথ ও সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলার অনুমোদন রয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে পাঁচটিতে সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে সিলগালা ও জরিমানা করা হয়েছে। কাগজপত্রে ত্রুটি ও প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় অন্যসবগুলো বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। রাজগঞ্জের মর্ডান ক্লিনিক, সেভ ডায়াগনস্টিক এবং বাঁকড়া পারবাজার সার্জিকাল ক্লিনিকের কোন লাইসেন্স নাই।

এ বিষয়ে মর্ডান হসপিটালের পরিচালক আমিরুজ্জামানের বলেন, ক্লিনিকের অনুমোদন না থাকার বিষয়টি আমি স্বীকার করছি। তিনি জানান, অনুমোদনের জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে।

নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে আমিরুজ্জামান বলেন, সিজার করার পর শ্বাসকষ্ট হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে নবজাতককে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শিশুটি মারা গেছে।

মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা শুভ্রারানী দেবনাথ বলেন, রাজগঞ্জের মর্ডান হসপিটালের কোনপ্রকার কাগজপত্র না থাকায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তারা রোগী ভর্তি করাতে পারবেন না। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, অভিযোগ পেলে ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন