মিতু হত্যাকাণ্ড : মুসা ‘আসলে’ কোথায় জানতে চান স্ত্রী

  13-05-2021 10:08AM

পিএনএস ডেস্ক : চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আরেক আসামি সাইদুল ইসলাম সিকদার প্রকাশ শাকুকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ান (র‍্যাব)। গতকাল বুধবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। গ্রেপ্তার অপরজন হলেন মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার। গতকাল বুধবার দায়ের হওয়ার নতুন এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

রাংগুনিয়া থেকে সাইদুল ইসলাম সিকদার প্রকাশ শাকুকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উয়িংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খুনের এ ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর প্রথম মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা ‘আসলে’ কোথায় সে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্নকারী মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার। সন্তানদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এতদিন কোনো কথা না বললেও দীর্ঘদিন স্বামীর কোনো হদিস না পেয়ে এ প্রশ্ন তোলেন পান্না। মামলার স্বার্থেই মুসাকে খুঁজে বের করা উচিৎ বলে উল্লেখ করছেন তিনি।

মিতু হত্যায় বুধবার পিবিআই বাবুল আক্তারকে ১ ও মুসাকে ২ নম্বর আসামি করে নতুন মামলা দায়ের করে। এ ছাড়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়েছে। মামলার অন্যতম আসামি মুসা। হত্যাকাণ্ডের স্থানে তাকে দেখা গেছে এবং তিনি বাবুল আক্তারের সোর্স এবং পলাতক। মুসা কোথায় প্রশ্নে এ তথ্য জানান পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার।

মুসার কোনো খোঁজ না পেয়ে প্রশ্ন তোলা পান্না গণমাধ্যমের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পর মুসার কাছে একটি ফোন আসে, তখন মুসা মুখ খোলার কথা বলেছিলেন।

কী বলছেন পান্না

পুলিশের খাতায় মুসা পলাতক। কিন্তু কাঠঘর তিন রাস্তার মোড় থেকে পান্নার চোখের সামনে দিয়ে তার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে মুসারি কোনো হদিস নেই।

পান্নার প্রশ্ন, মিতু হত্যাকাণ্ডে মুসাকে ঘটনার নির্দেশদাতা বলা হয়েছে, কিন্তু কারও নির্দেশে তিনি কেন একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যা করবেন? এই প্রশ্নের জবাব পুলিশ খোঁজেনি।

পান্না আরও জানান, মুসা পুলিশের সোর্স ছিলেন। মিতুর স্বামী বাবুল তার সঙ্গে নিয়মিত যোগযোগ রাখতেন। সুদানে গিয়েও মুসার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাবুল। মিতুর হত্যাকাণ্ডের দিন (৫ জুন, ২০১৬) মুসার সঙ্গে চট্টগ্রামের কালামিয়া বাজারের বাসায় ছিলেন পান্না। পরে জানতে পারেন তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি মুসাকে বাসায় রেখে রাঙ্গুনিয়ায় বাবার বাসায় চলে আসেন। সেখানে যাওয়ার পর তিনি জানতে পারেন, তাদের বাসায় পুলিশ গেছে। সাদাপোশাকে পুলিশ মুসাকে খুঁজছে।

এসব ঘটনা চলাকালীন মুসা তার শ্বশুর বাড়ি চলে যান। তার কয়েকটি ফোন ছিল। একদিন একটি ফোন স্ত্রীর কাছে রেছে বাইরে বেরিয়েছিলেন মুসা। ওই ফোন নম্বরে টিঅ্যান্ডটি থেকে ফোন আসে, এবং মুসাকে সাবধানে থাকতে বলা হয়। কিন্তু কে কল করেছিলেন, তা জানেন না বলে জানা পান্না। স্বামী বাসায় ফিরলে তার কাছ থেকে ঘটনার ব্যাপারে জানতে চান পান্না।

পুলিশ কেন খুঁজছে? কেন সাবধানে থাকতে বলা হচ্ছে জানতে চাইলেও প্রথমে স্ত্রীর প্রশ্ন এড়িয়ে যান মুসা। এর মধ্যে যে মোটরসাইকেল মিতু হত্যায় ব্যবহার হয়েছিল সেটি খুঁজতে পুলিশ রাউজান পৌঁছায়। বাবুল আক্তার সে সময় মুসাকে কল করেন। সময়টি ছিল ২০১৬ সালের ১৮ বা ১৯ জুন। সেদিন স্বামীর পাশেই বসেছিলেন পান্না। তিনি জানান, ফোনের অপর প্রান্তের কথা পরিষ্কার শোনা না গেলেও তার স্বামী যা বলেছেন, তার পুরোপুরি মনে আছে তার। মুসা ফোনকারী ব্যক্তিকে বলেছিলেন, ‘আমার পরিবারের কিছু হলে আমি কিন্তু মুখ খুলব স্যার।’

পরে স্বামীকে কী ঘটছে তা সরাসরি জিজ্ঞেস করেন পান্না। মিতু হত্যায় জড়িত কিনা প্রশ্নে মুসা উত্তর দেন, বাবুল আক্তার তাকে খুন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। নিজ রাজি না হলেও লোক দিয়েছিলেন। কারণ, কাজটিতে সহায়তা না করলে বাবুল তাকে ফাঁসিয়ে দেবেন, এমন আশঙ্কা করছিলেন। তবে, বাবুল তাকে ‘শেল্টার’ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। মুসার কিছু হবে না বলেও জানান।

পান্না আক্তার জানান, পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছিল। আমাদের পরিবারে আর কোনো পুরুষ ছিল না। এ অবস্থায় মুসা ২২ জুন আদালতে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। এদিনও একটি টিঅ্যান্ডটি নম্বর থেকে ফোন আসে এবং মুসাকে সাবধানে থাকতে বলা হয়। সেদিনই মুসাকে পুলিশ তার সামনে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে চলে যায়। কিন্তু বলা হচ্ছে, মুসা পলাতক।

পান্নার দাবি, তার স্বামী যদি পালিয়েই যেতেন, বাসা থেকে পাসপোর্ট নিয়ে যেতেন। কিন্তু সেটি এখনও তাদের বাসায়। সন্তানদের খোঁজ নিতেন, কিন্তু তার কিছু হচ্ছে না। মুসা অন্যায় করলে বিচার হোক, তবে তিনি কোথায় আছেন, সে তথ্য প্রকাশ করারও দাবি করেন ‍মুসার স্ত্রী পান্না।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। এ ঘটনায় ঢাকায় অবস্থান করা মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে নিজের জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে কয়েক দিনের মাথায় মামলার তদন্তে নতুন মোড় নেয়। এক পর্যায়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার শ্বশুর মোশারফ হোসেন।

পিবিআই সূত্র জানায়, আলোচিত এই মামলাটি প্রথমে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ও চট্টগ্রামের গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেওয়া হয়। পিবিআই তদন্তে নেমে প্রথমবারের মতো মামলার বাদী ও সন্দেহভাজন হিসেবে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলছে। কয়েকদিন আগে নিহত মিতুর বাবার সঙ্গেও পিবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা কথা বলেন বলে জানিয়েছে ওই সূত্র।

আলোচিত এই হত্যা মামলা নিয়ে নানা নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে বাবুল আক্তারকে পুলিশ সুপারের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছেন বলা হলেও তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছিলেন। পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর তিনি প্রথমে কিছুদিন রাজধানীর আদ্বদীন হাসপাতালে চাকরি করলেও বর্তমানে ব্যবসা করছেন বলে জানা গেছে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন