৯টি গ্রামের মধ্যে ৭টি গ্রাম নদীর গর্ভে বিলীন

  01-10-2016 11:53AM


পিএনএস, শরীয়তপুর: শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের ৯টি গ্রামের মধ্যে ৭টি গ্রাম পদ্মা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এবার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের কলমির চর রিয়াজ উদ্দিন মাদবরের কান্দি ও বেপারী কান্দি এ দুটি গ্রামও পদ্মার ভাঙনের কবলে। কুন্ডেরচর ইউনিয়নে ১০হাজার লোক বসবাস করতো। তিন বছর আগেও এই ইউনিয়নটি ছিলো অন্য ইউনিয়নগুলোর মতই । তিন বছরের ভাঙনে কুন্ডেরচর ইউনিয়নটির ৯০ ভাগ পদ্মা নদীর গর্ভে হারিয়ে গেছে। তাই ঘর-বাড়ি ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলো অন্যত্র বাসা বেদেছে। কুন্ডেরচর ইউনিয়নটি এখন পদ্মা নদী।

ভাঙনের কবলে পরে নদীর গর্ভে হরিয়েগেছে নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ, ফসলি জমি, পাকা সড়ক, নৌকা ঘাট, ঘড়-বাড়ি, মসজিদ, ব্রীজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।উল্লেখ্য যে, জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বাড়ি সহ মীর আলী মাদবর কান্দি, তাইজদ্দিন মাদবর কান্দি, রঞ্জন ছৈয়াল কান্দি, মৃধা কান্দি, কোতোয়াল কান্দি, মোখলেছ বেপারী কান্দি, সরদার কান্দি, মুন্সী কান্দি, পালের চর ইউনিয়নের সরদার কান্দি, মাঝি কান্দি, বিলাশপুর ইউনিয়নের আকন কান্দি, মেছের চেয়ারম্যানের কান্দি, মোহন খার কান্দি, ভুইয়া কান্দি। নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর বাজার, সুরেশ্বর লঞ্চঘাট, সুরেশ্বর মাজার, সুরেশ্বর কলেজ, মুলফৎগঞ্জ হাসপাতাল, মুলফৎগঞ্জ বাজার, মুলফৎগঞ্জ সিনিয়র মাদ্রাসা এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর গৌরঙ্গ বাজার বর্তমানে পদ্মা নদীর ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে যে কোন সময় বিলীন হতে পারে তিন উপজেলার এ স্থানগুলো।

পদ্মা নদী ভাঙ্গন কবলিত কুন্ডেরচর ইউনিয়নের এলাকাবাসী জানায়, ১সপ্তাহ আগে আমাদের বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি নিয়ে কোথায় যে থাকবো বুঝে উঠতে পারছিনা। আমাদের ঘড়-বাড়ি ভেঙে গেল তাই সবকিছু নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছি। আমাদের বিপদের দিনে চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কোন সহায়তা পাইলাম না। আমরা বোধহয় দেশের বোঝা, আমাদের বাঁচা মরায় কার কি আসে যায়।

রিজিয়া বেগম জানান, আমাদের বিপদে মেম্বার, চেয়ারম্যন পাশে থাকলেও সাহস পেতাম। তাদের কাছেতো আমরা সাহায্য চাইতাম না। তাদের কোন খোঁজ খবরও নাই। স্কুল, মাদরাসাও নদীর মধ্যে ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার আর কোন ব্যবস্থা রইল না। আমাদের পোড়া কপাল পোড়াই রইল, দোষ দিমু কার। এখন একজনের বাড়িতে পাটনা দিছি। বেশী দিন ঐ বাড়িতে থাকতে পারব না।

কুন্ডেরচর ইউনিয়নের মনির হোসেন, নাজির হোসেন মাদবর, আবু সিদ্দিক হাওলাদার ও কল্পনা বেগম বলেন, আপনারা আমাদের জন্য কি করবেন। ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপিই আমাদের খবর নেয়না। গত ৩ বছরে প্রায় ৫কিলোমিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এদের কেউই আমাদের খোঁজ খবর নেয়ার প্রয়োজন মনে করে নাই। আমরা সাহায্য সহযোগীতাও পাইনি।

জানা যায়, ইতিমধ্যে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিভিন্ন এনজিও ও সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে কুন্ডেরচর ইউনিয়নের ৬৫৩টি পরিবার, বিলাসপুর ইউনিয়নের ১৫৩টি পরিবার ও বড়কান্দি ইউনিয়নের ৬৫৭টি পরিবারকে সরকারিভাবে সাহায্য সহযোগীতা করা হয়েছে। এর প্রতি পরিবারকে ১হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। এতে তিনটি ইউনিয়নের ১হাজার ৪৬৩টি পরিবারকে ১৪লাখ ৬৩হাজার নগদ টাকা ও ১হাজার ৯৭ মন ২৫ কেজি চাল দেয়া হয়েছে।

জাজিরা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরী করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারী ভাবে জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর, বিলাসপুর ও বড়কান্দি ইউনিয়নের ১হাজার ৪৬৩টি পরিবারকে সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে সরকারিভাবে নগদ টাকা ও চাল বিতরণ করা হয়েছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন