দেশে ৪৩ ভাগ নারী ইয়াবার গ্রাহক!

  24-04-2017 06:35AM

পিএনএস ডেস্ক: দেশে নারীদের মধ্যে তামাক এবং মাদকের ব্যবহার আশংকাজনক হারে বেড়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে মাদকবিরোধী সংগঠন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)।

এ সংক্রান্ত একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘তামাক, মাদক ও নারী-বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটির লেখক ও মানসের সভাপতি ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ১৫ বয়সোর্ধ্ব ৪৩ শতাংশ মানুষ তামাকে আসক্ত। তামাক গ্রহণকারীদের মধ্যে ২৯ শতাংশ নারী। মাদক গ্রহণে শুধু ইয়াবা গ্রহণ করছেন ৪৩ শতাংশ নারী।

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, মাদকেও ভেজাল দেয়া হচ্ছে। ওই ভেজাল মাদক গ্রহণে অঙ্গহানির আশংকা রয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তে ৪০টি কারখানায় তৈরি হচ্ছে। এসব ইয়াবার ৮০ শতাংশই ভেজাল।

রোববার দুপুরে সোনারগাঁও হোটেলে ‘মানস’ আয়োজিত গ্রন্থ প্রকাশনা ও আলোচনা সভায় এসব কথা বলা হয়।

ডা. অরুপ রতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, কোনো দেশের যুবসমাজ যদি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে সে দেশের কোনো উন্নয়নই কাজে আসে না। দেশে যে হারে বাংলাদেশে মাদকাসক্তদের সংখ্যা বাড়ছে তা খুবই আতংক ও উদ্বেগের বিষয়। মাদক নির্মূল ও প্রতিরোধ কেবল সরকারের একার দায়িত্ব নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের নাগরিকদের এ বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

তিনি বলেন, দেশ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়েও যাবে। কিন্ত তরুণ সমাজ যদি দিন দিন মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তাহলে সবই উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে। নারীরা শুধু মাদক সেবনই করছে না, তারা মাদক ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়েছে। নারীরা নানা কৌশলে মাদসক সেবন ও বিক্রি বেড়েছে। মাদক সেবন ও বিক্রিতে শিশুদের জড়ানো হচ্ছে। এমনকি হিজাব পরেও নারীরাও ইয়াবাসহ নানা মাদক ব্যবসা জড়িয়ে পড়েছেন।

ডা.অরূপ রতন চৌধুরীর গবেষণার তথ্যমতে, কর্মক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ এবং জনসমাগমের স্থানে ২১ শতাংশ নারী পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। নারীরা শুধু পরোক্ষভাবেই নয়, প্রত্যক্ষভাবেও তামাক গ্রহণকারীর সংখ্যাও বাড়ছে। সরকারিভাবে কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসেবে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭০ লাখেরও বেশি। কোনো কোনো সংস্থার হিসেবে মাদকসেবীর সংখ্যা দেশে ১ কোটিরও বেশি। তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ তরুণ-তরুণী। এটাই এখন সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়।

মাদক নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর আইন করা হচ্ছে, যাতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হচ্ছে জানিয়ে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক সালাউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আইন কিংবা প্রতিরোধকারী সংস্থা দিয়ে কখনও মাদক নির্মূল করা যাবে না। সামাজিক আন্দোলন তথা সর্বস্তরের মানুষকে মাদকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

দেশে ক্ষমতাসীন দল ছাড়াও প্রভাবশালী মানুষরা তলে তলে মাদক ব্যবসা করেন- এই অভিযোগ করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার আড়ালে কেউ কেউ মাদক ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়েছেন। একজন সংসদ সদস্য মাদক ব্যবসায়ে জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে।

তরুণ-তরুণীদের মধ্যে মাদকের ভয়াল ছোবল রয়েছে জানিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, ‘সন্তানকে শুধু মা-বাবাই মানুষ করবে তা নয়, এক্ষেত্রে সমাজের ভূমিকাও অনেক। সামাজিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’

প্রকাশনা ও আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, নারী নেত্রী মালেকা বেগম, অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, মানস এর সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান তালুকদার প্রমুখ।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন