প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়কে উপেক্ষা করে পাউবো চায়না কোম্পানীর ড্রেজার ক্রয়ে মরিয়া : নেপথ্যে কমিশন বাণিজ্য ও প্রকাশ্য দুর্নীতি-অনিয়ম

  26-04-2017 12:57AM

পিএনএস (মোঃ শাহাবুদ্দিন শিকদার) : নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক টেকনিক্যালী নন-রেসপনসিভ একটি তথাকথিত চায়না কোম্পানীকে কাজ দেওয়ার জন্য পাউবো মরিয়া হয়ে উঠেছে। ঐ কোম্পানীর প্রদত্ত বিভিন্ন দলিলাদি জাল হওয়ায় পরীক্ষান্তে বিআইডব্লিউটিএ কোম্পানীটিকে নন-রেসপনসিভ ঘোষণা করে এবং তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। অথচ পাউবো’র কাছে কোম্পানীটি ‘ধুয়া তুলসী পাতা।’ ভাবখানা এমন, “তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার চায়না ড্রেজার চাই।”

পাউবো’র দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি প্রভাবশালীদের টেলিফোনিক মাজেজায় উজ্জীবিত হয়ে এবং কমিশন পেয়ে কারিগরীভাবে অনুপযুক্ত চায়না কোম্পানীকে কাজ দিতে কোন কারিগরী যুক্তিকেই গ্রাহ্য করছে না। ‘চায়না কোম্পানীকে কাজ দিতে বলা হয়েছে, চায়না কোম্পানীকে কাজ না দিলে আমার এক্সটেশান হবে না, কারণ আমার এক্সটেনশানের নথি গেছে উপরে কিংবা চায়না কোম্পানীকে কাজ না দিলে আমার চেয়ার থাকবে না’- এরকম খোড়া যুক্তির কথা বলে বেড়াচ্ছেন দরপত্র মূল্যায়ণকারীরা যদিও পেছনে কাজ করছে কমিশন বাণিজ্য। অথচ যে কর্মকর্তার এক্সটেশানের নথি গেছে উপরে তিনি জামায়াতপন্থী একজন কর্মকর্তা। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসি হওয়া এক ব্যক্তির প্রকাশিত পত্রিকার তিনি নিয়মিত পাঠক।

সূত্রমতে, চায়না কোম্পানীটি যে সমস্ত ড্রেজার সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছে সেগুলোর প্রতিটির দাম ৫/৬ কোটি টাকার বেশী নয় কিন্তু ইউরোপিয়ান প্রতিটি ড্রেজারের দাম ২৫/৩০ কোটি টাকা। কারণ, চায়না কোম্পানীটির ড্রেজারের মান একেবারেই খারাপ। ২০০৫ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড দু’টি চায়না ড্রেজার কিনেছিল যা ১১ মাসও চলেনি। অথচ ১৯৫২ সালে নেদারল্যান্ড থেকে সংগ্রহ করা ড্রেজার এখনো চলছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে যে সমস্ত বেসরকারী কোম্পানী চায়না ড্রেজার কিনেছিল তাদের এখন মাথায় হাত। এসব খবর পাউবো’র এই দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির নিকট থাকলেও টাকার নেশায় মত্ত হয়ে তারা চায়না ড্রেজার ক্রয়ে পাগল প্রায়।

সূত্রমতে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে এই কোম্পানী সৌজন্য হিসেবে বিনামূল্যে কিছু ড্রেজার দিতে চেয়েছিল কিন্তু মানের কথা বিবেচনা করে তারা সে উপহারও গ্রহণ করেনি। অপরদিকে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাননীয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রীকে চায়না ড্রেজার ক্রয় না করতে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। অথচ পাউবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকেও বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করছেন।

সূত্র আরো জানায়, ইতিপূর্বে জি টু জি ভিত্তিতে চায়না বাংলাদেশকে কতোগুলো ড্রেজার দিতে চেয়েছিল কিন্তু পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে বাংলাদেশ সরকার চায়নার এই ড্রেজার গ্রহণ করেনি। কারণ, মান খারাপ।

সূত্রমতে, চায়নার এই কোম্পানীর বাংলাদেশে কোন শীপ বিল্ডিং কোম্পানী নেই- নেই কারিগরী অবকাঠামো। শুধুমাত্র কম্পিউটারে তৈরী কিছু কাগজপত্রই তাদের পূঁজি যার অধিকাংশই জাল। এই কোম্পানীকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কার্যাদেশ দিলে কোথায় এবং কিভাবে তারা ড্রেজার তৈরী করবে সেই প্রশ্নেরও কোন উত্তর নেই।

সূত্রমতে, কয়েকজন রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনকে কমিশন বাণিজ্য দিতেই একটি মহল সক্রিয় রয়েছে যা ইতিমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরে রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি শক্তিশালী কমিটি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে মর্মে এই প্রতিনিধিকে পত্র মারফত দুদকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে। অভিজ্ঞমহল মনে করেন, আইএসসি, এলিকট, ডামেন, ভোস্তা-এলএমজিসহ নেদারল্যান্ড, আমেরিকা, জার্মানী, রাশিয়ার কয়েকটি ড্রেজার কোম্পানী বিশ্বমানের ড্রেজার তৈরী করলেও কেন পাউবো চায়না কোম্পানীর ড্রেজার ক্রয় করতে চায় তা অবশ্যই রহস্যজনক।

দেশপ্রেমিকমহল এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন