চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যর্থদের গোশতের দাম নির্ধারণ মানায় না

  27-05-2017 07:02PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : ২৬ মে শুক্রবার দেশের কোথাও পবিত্র মাহে রমযানের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় ২৮ মে রবিরার থেকে রমজান মাস শুরু হবে। সে হিসেবে শনিবার রাতে তারাবিহ ও সেহরি খেয়ে রোজা পালন করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

আজ রাত থেকেই এশার নামাজের পর তারাবি নামাজ আদায় করবেন এবং রোজা রাখতে শেষ রাতে সেহরি খাবেন মুসলমানরা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী প্রথম রোজার সেহরির শেষ সময় রাত ৩টা ৪০ মিনিট। আর ইফতারের সময় ৬টা ৪৪ মিনিটে।

ধর্মাপ্রণ মুসলমানদের কাছে রমজান মাস সংযম, আত্মশুদ্ধি এবং ত্যাগের। এই মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো পানাহার, স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকেন রোজাদাররা। বিরত থাকেন নানা রকম হারাম ও পাপাচার থেকে। মশগুল থাকেন ইবাদত-বন্দিগিতে। এ মাসে প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ পাক ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেন।

রমজান মাসে শয়তানের গলায় জিঞ্জির পরানো হয়। দোজখের আজাব বন্ধ রাখা হয়। আর এই মাসের শেষ দশে বেজোড় একটি রাত রয়েছে, যে রাতের এবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। সেটি হলো কদরের রাত। এই মাসেই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন নাজিল হয়েছে। অতি উত্তম এ মাসে মুসলমানরা সংযমের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভে নিয়োজিত থাকেন।

রমজানে রোজা যারা রাখেন, তাদের জন্য আল্লাহ পাক নিজে বিনিময় দেবেন। সে বিনিময় কী এবং কতটা অসীম, তা ভাবনার অতীত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এক হাদিসে আছে, যারা নিয়ম মেনে পুণ্যের আশায় আল্লাহকে খুশি করার জন্য রোজা পালন করবেন, তারা সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবেন।

রমজানে রোজাদারদের কষ্ট হয়- এমন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। আর রোজাদারদের কষ্ট হয়- এমন গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। অথচ আমাদের দেশে এদিকে খুব একটা নজর দেয়া হয় না। রোজাদারদের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী যেন মুখিয়ে থাকে এ মাসটির জন্য! তারা যে পণ্য বেশি বিক্রি হয়, সেটার দাম সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দেয় এবং আদায় করে নেয়।

এই রমজানে ভেজাল খাদ্য সরবরাহ করে একটি মহল। ২৭ মে সকালে আরটিভির সংবাদপত্র পর্যালোচনায় একটি তথ্য উঠে আসে যে, বাজারে যে ফলই হোক দেশি বা বিদেশী- এগুলোর ৯০ শতাংশই ফরমালিন যুক্ত! মানুষ খাবেটা কি! যাবে কোথায়! এসব যাদের দেখার দায়িত্ব, তাদের ঘুম ভাঙবে কবে? তারা জেনে-বুঝে মানুষকে আর কত বিষ খাওয়াবেন? ফরমালিন হিসেবে পরিচিত আমাদের জনপ্রতিনিধি কিছু আছেন, যারা নিজের সেবার কাজটা ঠিকমতো করতে না পারলেও কমিশনের বিনিময়ে গোশত ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো করতে সফল। যেখানে ব্যবসায়ীরা নিজ থেকে বলছেন, চাঁদাবাজি ও ইজাদারের দৌরাত্ম্য বন্ধ হলে তারা ২৫০ টাকা কেজি গরুর গোশত বিক্রি করতে পারেন। সেখানে ৪৭৫ টাকা কেজি নির্ধারণ করে যারা দেন, ওরা কারা! যারা চাঁদাবাজি ও ইজাদারদের দমনে ব্যর্থ, তাদের ৪৭৫ টাকা নির্ধারণপূর্বক সাধারণ মানুষের পকেট কাটার দায়িত্ব নেয়াটা মানায় না! এতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়, তারা সাধারণ মানুষের নয়- চাঁদাবাজি ও ইজাদারদের বান্ধব।

চাল-ডাল, লবণ-তেলসহ রমজানে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, দিনের বেলায় হোটেল-রেস্তরাঁ বন্ধ রাখা, অনৈসলামিক কার্যক্রম ও বেলেল্লাপনাসহ সামাজিক অনাচার থেকে রোজাদারদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। রোজাদারদের ইবাদত-বন্দিগিতে কষ্ট যেন না হয়, সে জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি রোজা সবার জীবনে সংযম, আত্মশুদ্ধি এবং ত্যাগের অম্লান নজির বয়ে আনুক। আল্লাহ সব বালেগ মুসলমান নর-নারীকে রোজা পালনের তৌফিক দিন। আমিন।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]


পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন