সাতক্ষীরায় স্বামীকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তরুণীকে গণধর্ষণ

  14-09-2017 09:12PM

পিএনএস : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ১৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরও স্বামীকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এক তরুণীকে (১৯) ঘরের মধ্যে আটক রেখে গণধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।

ধর্ষিতার মা বাদী হয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ৭/৯ (৩)/৩০ ধারায় এ মামলা দায়ের করেন। ভারপ্রাপ্ত বিচারক সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ আশরাফুল ইসলাম মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলারোয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন, কলারোয়া উপজেলার পাঁচনল গ্রামের রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক ঢালীর ছেলে যুগিখালি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হাসান (৩৮), একই গ্রামের শহীদুল ইসলামের ছেলে সোহাগ হোসেন (৩৫), একই উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের জলিল দফাদারের ছেলে সোহাগ দফাদার (২২), যুগিখালি গ্রামের মশিয়ার রহমানের ছেলে আসাদুল ইসলাম(৩০) ও একই গ্রামের আলী দালালের ছেলে কদম আলী (৩০)।

মামলার বিবরণে জানা যায়, চলতি বছরের ১৮ জুন কলারোয়া উপজেলার যুগিখালি গ্রামের এক দিনমজুরের সঙ্গে বিয়ে হয় বাদিনীর মেয়ের। বিয়ের আগে থেকে ওই দিনমজুর কাজের জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিথারী গ্রামে থাকতেন। বিয়ের আগে বাদিনীর জামাতা ভারতে থাকতো এমনটি জানতে পেরে আসামিরা তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতো।

আসামি আসাদুল ইসলাম ও কদম আলী গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত ৮ টার দিকে বাদিনীর বাড়িতে গিয়ে তার মেয়ে ও জামাতাকে বলে যে তার জামাতা ভারতের লোক। তোদের ধরতে পুলিশ এসেছে। এরপর বাদিনী, তার স্বামী, এক ছেলে ও মেয়ে জামাইকে যুগিখালি বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসের দ্বিতীয় তলায় আনা হয়। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন আসামি চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতা রবিউল হাসান ও সোহাগ হোসেনসহ কয়েকজন।

এক পর্যায়ে আসামি রবিউলসহ অন্যান্য আসামিরা বাদিনী, তার ছেলে ও জামাতাকে গালিগালাজ করতে থাকে। আসামি রবিউল হাসান বাদিনীর মেয়েকে রেখে তার সঙ্গে থাকা সকল লোকজনদের বাড়িতে যেয়ে ১৫ হাজার টাকা আনার জন্য অফিস ঘর থেকে বের করে দেন। কিছুক্ষণ পর বাদিনী ও তার স্বজনরা ১৫ হাজার টাকা দিলে আসামি রবিউল হাসান তা পকেটে ভরে থানায় দিতে হবে বলে বাদিনীসহ অন্যদের বাড়ি যেতে বলে। এসময় বাদিনীর মেয়েকে (ধর্ষিতাকে) জোরপূর্বক আসামি সোহাগ হোসেনের মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে চলে যান। স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী যেতে চাইলে তাকে মারপিট করার হুমকি দেওয়া হয়।

রবিউল ইসলাম রাত সোয়া ১০টার দিকে বাদিনীর মেয়েকে উপজেলার ঝিকরা গ্রামের জনৈক সঞ্জয়ের বাড়িতে এনে একটি ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে রবিউল হাসানসহ পাঁচজন তাকে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে পালাক্রমে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরদিন ফজরের আজানের আগে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ইমাদুলকে প্রায় অচেতন ধর্ষিতাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সেখান থেকে চলে যায় আসামিরা। গ্রাম পুলিশ তাকে ফজরের নামাজের পরপরই বাড়ি পৌঁছে দেয়।

গত ৯ সেপ্টেম্বর ধর্ষিতাকে তার স্বজনরা প্রথমে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ১০ সেপ্টেম্বর তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রে ধর্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

এ ব্যাপারে যুগিখালি ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল হাসান বলেন, চার মাস আগে ভারতীয় এক মেয়েকে নিয়ে তিনি শালিস করেছিলেন। এ ছাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং আছে। শত্রুতা রয়েছে জামাত-শিবিরের লোকজনের সাথেও। শালিসে ক্ষুব্ধ হওয়া একটি গ্রুপ ছাড়াও তার বিরোধী পক্ষের লোকজন এ ধরনের মামলা করাতে পারে। তবে এ ধরনের মামলার খবর তার জানা নেই বলে জানান তিনি।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন