পেঁয়াজ ছুঁয়েছে মুরগির দর

  04-11-2017 09:42AM


পিএনএস ডেস্ক: দামের ঝাঁজ সহ্য করতে না পেরে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধই করে দিয়েছেন অনেক মুদি দোকানি। নিয়মিত কাস্টমারদের অনুরোধে ঝুঁকি নিয়ে যারা বিক্রি করছেন খুচরাপর্যায়ে তারা দেশী পেঁয়াজের দাম নিচ্ছেন ৯০ থেকে ১০০ টাকা। অন্য দিকে সরবরাহ ভালো থাকায় অনেকে ফার্মের মুরগিও বিক্রি করছেন একই দামে। যদিও বাজারে কিছু কিছু সবজির দাম আরো বেশি। প্রতি কেজি টমেটো গতকাল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা এবং শিম ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। বাজারের এমন টালমাটাল পরিস্থিতিতে সবচেয়ে কষ্টে আছেন স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ।

মালিবাগ বাজার থেকে গতকাল সদাই করে ফিরছিলেন দিনমজুর রহমানের স্ত্রী সালেহা। কী বাজার করলেন জানতে চাইলে সালেহার জবাব, সবজির চাইতে কম দামে মুরগি কিনেছি। দেড় শ’ টাকায় দেড় কেজি ওজনের একটা ফার্মের মুরগি কিনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এক কেজি শিমের দাম এই মুরগির চেয়ে বেশি। তবে মুরগি রান্না করার জন্য দু’টি পেঁয়াজ কিনতেই তার ২০ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান। এর বাইরে সয়াবিন তেল ও গরম মশলা কিনেছেন আরো ৩০ টাকার। সব মিলিয়ে ২০০ টাকার মুরগি দিয়ে দুই দিন চলবে জানিয়ে তিনি বললেন, ২০০ টাকার সবজি দিয়ে কিন্তু দুই দিন চলে না।

খুচরা বাজারে গতকাল বড় আকারের বাছাই করা দেশী পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ছোট আকারের দেশী পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। পেঁয়াজের সাথে পাল্লা দিয়ে গতকাল দাম বেড়েছে আদারও। আদার দর আরেক দফা বেড়ে গতকাল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। এক সপ্তাহ আগে এ দাম ছিল কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কম। তবে আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। দেশী রসুনের দাম আরো কম।

পেঁয়াজের দাম সহসা কমছে না জানিয়ে বিক্রেতারা জানান, সাধারণত এ মওসুমে বাজারে নতুন পেঁয়াজপাতা উঠতে শুরু করে। এ বছর অধিক বৃষ্টির কারণে আগাম পেঁয়াজ চাষ সম্ভব হয়নি। অন্য দিকে কৃষকের কাছে থাকা পেঁয়াজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। কাজেই বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসার আগে দাম কমার সম্ভাবনা কম। তবে সরকার তৎপর হলে এখনো যারা কিছু পেঁয়াজ ধরে রেখেছেন তারা কিছুটা কম দামে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন বলে জানান বিক্রেতারা।

বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় এ সপ্তাহে সবজির দাম কিছুটা কমেছে বলে জানান বিক্রেতারা। বেশির ভাগ সবজিই গত সপ্তাহের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। কচুর লতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, কাঁকরোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা, কচুরমুখী ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চাল কুমড়া পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার ফালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, কাঁচকলার হালি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পুঁই শাকের আঁটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাল শাকের আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাকা, প্রতিটি ফুলকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লেবুর হালি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে গতকাল প্রতি কেজি রুই ও কাতলা ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৭০ থেকে ২০০ টাকা, আইড় ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা, পুঁটি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, মলা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বোয়াল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা মাগুর ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, শোল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।

চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, আমদানি বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ বাড়লেও বেড়ে যাওয়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সবধরনের চাল। তবে মোটা চালের দাম গত তিন সপ্তাহে কেজিপ্রতি এক থেকে ২ টাকা কমেছে বলে দাবি করেন খুচরা বিক্রেতারা। বাজারে গতকাল মোটা স্বর্ণা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, পারিজা চাল ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া ভালো মানের মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা, সাধারণ মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, বিআর২৮ ৪৮ টাকা, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৫৫ টাকা, উন্নত মানের নাজিরশাইল ৬২ থেকে ৬৪ টাকা, পাইজাম চাল ৪৮ থেকে ৫৪ টাকা, বাসমতি ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা, কাটারিভোগ ৮০ থেকে ৮২ টাকা এবং পোলাও চাল ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।

বাজারে গতকাল প্রতি কেজি গরুর গোশত ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, খাসির গোশত ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া মাঝারি আকারের একেকটি দেশী মুরগির দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ডিমের ডজন ৯০ টাকা। চিনি ৬০ থেকে ৬৬ টাকা, আটা ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। দেশী মশুরের ডাল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা এবং আমদানি করা মোটাদানা ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। মুগডালের কেজে ১২৫ থেকে ১৪০ টাকা।

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন