ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসএ্যাপে ফাঁস হচ্ছে প্রশ্নপত্র

  29-03-2017 02:42AM

পিএনএস ডেস্ক: সারা দেশে স্কুল-কলেজ স্তরের পাবলিক পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং অর্থ লেনদেনের জন্য ঠিক কিভাবে সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হচ্ছে - তা বেরিয়ে এসেছে মঙ্গলবার একটি চক্রের ধরা পড়ার মধ্যে দিয়ে।

পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি চক্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকার নিকটবর্তী আশুলিয়ার একটি কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও ছাত্রসহ মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার যুগ্ম পুলিশ কমিশনার আবদুল বাতেন একথা জানান।

প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গত কয়েক মাসের মধ্যে এ নিয়ে সাত জন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হলো।

সবশেষ গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় করা এক মামলায় বলা হয়, এই ব্যক্তিরা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমোর মত সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অর্থের বিনিময়ে ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস করছিলেন।

কিভাবে এই চক্রটি প্রশ্নপত্র ফাঁস করতো এবং তা পরীক্ষার আগের কয়েক ঘন্টার মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দিয়ে অর্থ উপার্জন করতো - তা বর্ণনা করেছেন উপ পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান।

তিনি বলেন, পাবলিক পরীক্ষার কয়েক ঘন্টা আগে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের দিন প্রশ্নপত্রগুলো কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সিলগালা অবস্থায় জেলাপ্রশাসনের অফিস থেকে বিভিন্ন স্কুল বা কলেজের অধ্যক্ষের হাতে দেয়া হয়। এই সিলগালা খোলেন প্রিন্সিপালই।

মাসুদুর রহমান জানান, আশুলিয়ার ওই অধ্যক্ষ প্রশ্নপত্রগুলো হাতে পাওয়ার পর সিলগালা ভেঙে তার মোবাইল ফোনে প্রশ্নের ছবি তুলে নিতেন। এর পর তিনি ছবিগুলো তুলে দিতেন একটি কোচিং সেন্টারের তিন ব্যক্তিকে - যারা নিজেরাও শিক্ষক এবং এই চক্রের অংশ।

তিনি আরো জানান, ওই চক্র ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমোতে গ্রুপ তৈরি করে তার সদস্যদের মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁস করতেন। এগুলো পেতে হলে বিষয়ভেদে ৫০০ থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত টাকা নেয়া হতো ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে।

টাকার লেনদেন করতেন এসব গ্রুপের এ্যাডমিনরা।

ওই তিন ব্যক্তি - যারা নিজেরাও শিক্ষক - তারা দ্রুত ওই প্রশ্নগুলোর উত্তর তৈরি করে তা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমোতে ‘গ্রাহকদের’ সরবরাহ করার জন্য তৈরি করতেন।

গ্রেপ্তারকৃত চক্রের সদস্যদের ফেসবুক একাউন্ট থেকে ২০১৬ ও ২০১৭ সালের জেএসবি, এইচএসসি, এবং এসএসসি পরীক্ষার বিভিন্ন বিষয়ের ভূয়া প্রশ্নপত্র, পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্ন ফাঁসের গুজব সম্বলিত স্ক্রীনশট এবং ৯টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আসামীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন নামে ফেসবুক আইডি, ইমো, হোয়াটসএ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার পূর্বে ভূয়া প্রশ্নপ্রত্র অনলাইনে পোস্ট করে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের নিকট হতে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে আসছে।’

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, কিন্তু এখনো আইনজীবী নির্ধারিত না হওয়ায় তাদের বা তাদের কোনো প্রতিনিধির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পরীক্ষায় দুর্নীতি ঠেকানোর দায়িত্ব যাদের, এখন শিক্ষকদেরই এর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার যে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তা কিভাবে ঠেকাবে কর্তৃপক্ষ?

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর বলছেন, ‘সারাদেশে প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় লক্ষ লক্ষ শিক্ষক জড়িত থাকেন। এখন সব ক্ষেত্রের মতো এখানেও কিছু দুষ্ট লোক আছে। এই দুচারজন লোক আমাদের মুখে কালিমালেপন করছে।’

এ ধরণের শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি এবং ওই ধরণের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বোর্ড চেয়ারম্যান।

সূত্র: বিবিসি

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন