নানি-নাতি একসঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নিলেন

  20-11-2017 09:22PM


পিএনএস, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ত্রিশালের সুন্দরী বেগম ৬৫ বছর বয়সী নাতিকে নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রমাণ করলে আসলেই শিক্ষার কোনো বয়স নেই।

চলতি বছর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দরী বেগমও অংশগ্রহণ করেছেন।

হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা গ্রামের বর্ঘাচাষি আবুল হোসেনের স্ত্রী সুন্দরী বেগম। ওই দম্পতির চার ছেলে এক মেয়ের মধ্যে একজন সৌদি প্রবাসী, দুজন ভ্যানচালক ও শুধুমাত্র ৩য় ছেলে সাইদুল ইসলামকে কষ্ট করে এইচএসসি পাস করিয়েছেন।

৬ বছর আগে সুন্দরী বেগমের ছেলেদের উপার্জনের টাকা জমা রাখতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কাশিগঞ্জ শাখায় একাউন্ট খুলতে যান। নিরক্ষর সুন্দরী বেগম কোনো রকম স্বাক্ষর শিখেছিলেন।

তিনটি স্বাক্ষরের মধ্যে একটি স্বাক্ষর ভুল হওয়ায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ফাইলটি সুন্দরী বেগমের মুখে ছুঁড়ে মারেন। কেঁদে কেঁদে বাড়ি ফিরে তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যেকোনো মূল্যে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে তিনি বেড়িয়ে আসবেন।

পরের দিন মেয়ের ঘরের নাতি জিহাদকে নিয়ে সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে ভর্তি হন ১ম শ্রেণিতে। ধায়ের কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়মিত স্কুলে ক্লাস করতেন। ৬ বছর পরিশ্রমের পর এ বছর তিনি নাতি জায়েদ ও দেবরের ছেলে মুহিবের সাথে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেন।

সোমবার বাংলা পরীক্ষা চলাকালে দুপুর ১২ টার দিকে চাউলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের ৩৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী সুন্দরী বেগমকেও মনযোগ সহকারে লেখায় ব্যস্ত রয়েছেন।

পরীক্ষা শেষে সুন্দরী বেগম জানান, কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের দুর্ব্যবহারে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে প্রতিজ্ঞা করে আমি স্কুলে ভর্তি হয়েছি। জন্মেছিলাম দরিদ্র পরিবারে, লেখাপড়া তো দুরের কথা ভরন পোষণ ঠিকভাবে দিতে পারেনি পরিবার। খুব অল্প বয়েসে বিয়ে হয় আরেক দরিদ্র পরিবারে। অতিদরিদ্র হওয়ায় সন্তানদেরও পড়াশুনা করাতে পারিনি।

তিনি আরো বলেন, গত ৬ বছরে সকল ক্লাস পরীক্ষায় নাতির বয়সী সকল শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনেক উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়েছি। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে খুব ভালো লাগছে।

সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম জানান, এই বয়সে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে সুন্দরী বেগম নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বেড়িয়ে আসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই, এটাই প্রমান করলেন সুন্দরী বেগম। তাকে আমি স্যালুট জানাই। অজ্ঞতা থেকে ফিরে আসুক সবাই।

পিএনএস/কামাল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন