বিয়ের ৩ মাস পরই কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন ববি শিক্ষার্থী?

  19-03-2024 12:03PM




পিএনএস ডেস্ক: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী দেবশ্রী রায় গত রোববার মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৪টার দিকে বরগুনায় স্বামীর বাসায় মারা যান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন।

দেবশ্রীর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়। তার স্বামীর বাড়ি খুলনা, কিন্তু মারা গেছেন স্বামীর কর্মস্থল বরগুনা সদর থানায়। প্রেমের সম্পর্কের পর ৩ মাস আগে ডিসেম্বর মাসে তাদের বিয়ে হয়। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বরগুনা সদর থানার সাব-ইন্সপেক্টর আবুল কালাম আজাদ।

আত্মহত্যা করার আগে দেবশ্রী তার মাকে ফোন দিয়ে তার সাংসারিক জীবনের কষ্টের কথা জানান। তিনি বলেন, তার স্বামী ভালো মানুষ নয় এবং তাকে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। তিনি এই জীবন রাখবেন না বলেও মাকে জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দেবশ্রীর স্বামী পঙ্কজ সাড়ে ৪টার দিকে জানালা দিয়ে দেখতে পান গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে দেবশ্রী। এরপর দরজা ভেঙে বের করে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেবশ্রীর মা-বাবা জানান, তাকে তার স্বামী প্রায়ই নির্যাতন করতো।

এর আগেও তাকে বহুবার মেরেছে। ১৭ তারিখে দেবশ্রীর নিবন্ধন পরীক্ষা ছিল। কিন্তু ওর স্বামী পরীক্ষা দিতে দেয়নি। এটা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। তারপর আবার টাকা-পয়সা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। আমাদের মেয়ে তাকে ফোন করে এ বিষয়ে কান্নাকাটি করে জানিয়েছে এ জীবন আমি আর রাখবো না। আমরা ওকে বুঝিয়েছি কিন্তু ও এমন কাজ করবে ভাবতেও পারিনি।

এ বিষয়ে দেবশ্রীর স্বামী পঙ্কজ বলেন, দেবশ্রী এর আগেও একবার হারপিক খেয়েছিল। সে প্রায়ই ছোটখাটো বিষয় এমন পাগলামি করত। ও প্রায় অনেক দামি জিনিসপত্র ও টাকাপয়সা চাইতো। আমাদের মাঝে বালা কিনে দেয়া নিয়ে একটু মনোমালিন্য হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এটা মিটমাট হয়ে যায় এবং স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছিল। তারপর বিকাল ৩:৩০ এ আমি ব্যাচ পড়ানোর জন্য দোতলায় যাই। একই ভবনের নিচ তলায় আমরা থাকি। সেখান থেকে পড়িয়ে এসে সাড়ে ৪টার দিকে দেখি দরজা বন্ধ। আমি ভেবেছি হয়ত ঘুমিয়েছে। তারপর ফোন দেই কিন্তু ফোন ধরে না। পরে জানালা দিয়ে দেখি দেবশ্রীর ঝুলে আছে। তখন আমি আমার সহকর্মী কামাল হোসেনকেসহ মানুষ ডাকি এবং দরজা ভেঙে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু ততক্ষণে দেবশ্রী আর নেই।

এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার দায়িত্ব দিন সাব- ইন্সপেক্টর আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায় পারিবারিক কলহ ও সাংসারিক অশান্তির কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাবার পর বিস্তারিত জানা যাবে।

দেবশ্রীর সহপাঠীরা জানান, ও খুবই লাজুক প্রকৃতির শান্তশিষ্ট মেয়ে। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ সদা হাস্যজ্বল ও মিশুক দেবশ্রীকে আমরা চিনি। এমন ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না দেবশ্রী। এর পিছনে নিশ্চই বড় কোনো কারণ রয়েছে।


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন