আমি তো পরী, আমি কি মানুষ হতে পারব?

  27-10-2016 09:55AM


পিএনএস ডেস্ক: তিন বছর ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন পরীমনি। এরই মধ্যে তাঁর নয়টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে সাতটির মতো সিনেমা। শুটিং শুরুর অপেক্ষায় আছে আরও ১০টি সিনেমা। সিনেমাপাড়ায় তাঁকে নিয়ে কিছু নির্মাতা ও প্রযোজকের রয়েছে শিডিউল ফাঁসানোর অভিযোগ। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বিকেলে কথা হয় এই নায়িকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুর কাদের


আমি তো পরী, আমি কি মানুষ হতে পারব?
হোসেনমাত্র তিন বছরের অভিনয়জীবন, এরই মধ্যে আপনার বিরুদ্ধে শিডিউল ফাঁসানোর অভিযোগ শোনা যাচ্ছে পরিচালক ও প্রযোজকের...

শিডিউল ফাঁসাই আমি, সাংবাদিককে ডেকে বলার কী আছে? আমাকে বললেই তো সমাধান হয়ে যায়। আর আমি যদি শিডিউল ফাঁসাই তাহলে আমাকে নিয়ে এত টানাটানি কেন? কোনোভাবেই মানতে পারলাম না। এসব উড়াধুড়া অভিযোগ একেবারে ভাল্লাগে না।

কেন তাহলে অভিযোগ করবে?

অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু মনে করছি না।

কারও কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে আপনাকে নিয়ে অপপ্রচার করবে?

আমি তো জানি না। আর কে কী বলল, তাতেও অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না। আমার পেছনে বাংলাদেশের অনেক গ্রুপ লেগে আছে, এসব গ্রুপের কোনো ধার ধারি না। সত্যি কথা বলতে, এসব দেখার টাইমই নেই। আমি নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। এখানে একটা কথা বলে রাখতে চাই, আমাদের এখানে তো শুটিংয়ের কোনো সিস্টেমই নেই।

তার মানে?

আমি সব সময় শুটিংয়ের কলটাইম নিয়ে চেঁচামেচি করি। আমাদের এখানে শুটিং শুরুর টাইম যেমন নেই, শেষ করারও নেই। রাত একটায় শুটিং প্যাকআপ করে আবার ভোর ছয়টায় ডাকার ব্যাপারটি তো হতে পারে না। অভিনয় জোর করে হয় না। অভিনয়, গান, নাচ এসব মনের ভেতর থেকে আসতে হয়। অনুভূতির ব্যাপার—বন্দুক ঠেকানোর কিছু নেই। ভালোবেসে কাজ করতে হয়। এ দেশের চলচ্চিত্রে আমি এখন যে অবস্থায় আছি, তা জোর করে আদায় করিনি, মানুষের ভালোবাসা আমাকে এই জায়গা করে দিয়েছে।

শুটিংয়ে নিয়ম নিয়ে বলছিলেন...

পরিচালককে শুটিংয়ের পুরো একটি পরিকল্পনা করতে হবে। কোনো প্রযোজক, পরিচালক, নায়ক-নায়িকা, সহশিল্পী—কেউ একা সিনেমা বানাতে পারেন না। এটা টোটাল টিমওয়ার্ক। এ ওর পেছনে না লেগে এবং ঝগড়াঝাঁটি না করে মন দিয়ে কাজ করা উচিত। মনও ভালো থাকবে, কাজটাও ভালো হবে। আমি মনে করি, সিনেমার পুরো ইউনিট একটা ফ্যামিলি। এখানে মন কালাকালি হবেই, তারপরও সবাই একসঙ্গে খাবে, আড্ডা দেবে—এটাই স্বাভাবিক। অমুক নায়ক এক ঘণ্টা পরে এল, আমি তিন ঘণ্টা দেরিতে যাব—এসব মানসিকতা বাদ দিতে হবে। আমাদের সবাইকে কাজের ওপর ফোকাস করা উচিত। আমি সিনেমায় অভিনয় করতে এসেছি। আমাকে সবাই কাজ করতে দিন। আমার ফেসবুক পেজের পোস্ট দেখলেও এ বিষয়ের সত্যতা মিলবে। কাজ ছাড়া কোনো কিছুই আমার মাথায় ঘোরে না। তবে পরিচালককে খুব স্ট্রং হতে হবে।

কেমন সেটা?

এই যেমন, আমি আহ্লাদ করে পরিচালককে বললাম, তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিয়েন প্লিজ, তিনিও রাজি হয়ে যান। এটা কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। সবাইকে পেশাদার হতে হবে। কে ভাইয়া বলে ডাকল, কাকে বোন বানানো হলো—এদিকে পরিচালক দৃষ্টি দেবেন না। তাঁকে তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা উচিত। আমি সব সময় পেশাদার। কাজের ব্যাপারে আমাকে যে যেভাবেই চাইবে, স্ট্যান্ডবাই আছি।

কিন্তু অপেশাদার আচরণের জন্যই নাকি আপনাকে ‘পাষাণ’ চলচ্চিত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে?

গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় যেদিন পাষাণ সিনেমার চুক্তি সই করি, তখনো এর সঙ্গে জাজ মাল্টিমিডিয়া যুক্ত ছিল না। ছবিটি তারা হাতে নেওয়ার পর নায়ক পরিবর্তন করে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও নতুন নায়ক ঠিক করতে করতে বেশ কয়েক দিন সময় পার হয়ে যায়। যখন পাষাণ-এর শুটিংয়ের দিন-তারিখ ঠিক করা হলো, তখন আমার অন্য ছবির শিডিউল ছিল। তাই আমিই ছবিটি ছেড়ে দিই। আমাকে ছবি থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ কারোরই নেই। আমিই ছবি ছাড়ার ক্ষমতা রাখি। পরিচালক সৈকত নাসিরকে ফোনে সমস্যার কথা জানিয়েছিও।

‘রক্ত’সিনেমার শুটিংয়ের সময় ওই ছবির বাংলাদেশ অংশের প্রযোজক ও আপনি ফেসবুকে নিজেদের আজীবনের বন্ধুত্বের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে একসঙ্গে আরও ছবিতে কাজ করার আভাস পাওয়া গিয়েছিল। এখন কী অবস্থা?

আমি এসব বলতে চাচ্ছি না। অতীত ভুলে থাকতে চাই। আমার সঙ্গে জাজের আজিজ ভাইয়ের বন্ধুত্ব এখনো আছে। শুক্রবারও তিনি ফোন করে আমার খবর নিয়েছেন। কাজ নিয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না।

জাজ মাল্টিমিডিয়া নাকি আপনাকে নিয়ে আরও ছবির কাজ করার কথা থাকলেও ভোগান্তির ভয়ে আর এগোয়নি?

আমি পরীমনি হওয়ার পর জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে কাজ করেছি। আমাকে তারা পরীমনি বানায়নি। চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি আমাকে তা বানিয়েছে। আর আমি তো জাজে চাকরি করি না। আমাকে পুরো ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গেই থাকতে হয়। একটা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে এই শিল্পের অন্যদের পেটে লাথি দিতে পারব না। আমি স্বাধীন শিল্পী, সবার সঙ্গেই কাজ করব। আরেকটা কথা, আমি তো পরী, আমি কি মানুষ হতে পারব? আমি তো উড়ে বেড়াই, ঘুরে বেড়াই।

‘স্বপ্নজাল’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় হঠাৎ করেই আংটি বদলের একটা ছবি ফেসবুকে দিয়েছিলেন। এটা কি আলোচনার জন্য?

আলোচনা কেন হবে। যাঁর সঙ্গে জীবন কাটাব, তাঁর সঙ্গে আংটি বদল করেছি। সেটা আপাতত রহস্যই থাক। আমি মনে করি ভালোবাসা ছাড়া তো জীবন চলে না। আমার সেই সময়টা আসুক, তারপর সবাইকে জানিয়ে দেব।

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন